ধর্ষণের পর হত্যা

আসামির বাবার নামের মিলে কারাগারে কলেজছাত্র, তদন্তের নির্দেশ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:০৬ পিএম, ০৮ জুন ২০২৩
ফাইল ছবি

ভুক্তভোগীর বাবার নামের সঙ্গে আসামির বাবার নামের আংশিক মিল থাকায় সাজাপ্রাপ্ত প্রকৃত আসামির পরিবর্তে দণ্ড ভোগ করছেন আল-আমিন নামের নিরপরাধ এক কলেজছাত্র। ভুক্তভোগীর পরিবার বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আনার পর আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে রুলও জারি করেছেন।

রুলে দণ্ডপ্রাপ্ত প্রকৃত আসামি আলমগীর হোসেনের পরিবর্তে আল-আমিনকে গ্রেফতার করা কেন বেআইনি ও আইনগত কর্তৃত্ব-বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।

আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), রংপুরের ডেপুটি কমিশনার, পুলিশ সুপার (এসপি), গঙ্গাচড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও রংপুরের জ্যেষ্ঠ জেল সুপারকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

বিচারপতি মো. বদরুজ্জামান ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল বুধবার (৭ জুন) রুলসহ এ আদেশ দেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মুহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অপূর্ব কুমার ভট্টাচার্য।

আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অপূর্ব কুমার ভট্টাচার্য বলেন, ২০১৫ সালে রংপুরে গঙ্গাচড়া উপজেলায় এক সংঘবদ্ধ ধর্ষণের এক কিশোরীর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ২০২২ সালের ২৪ নভেম্বর রংপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতের বিচারক মো. রোকনুজ্জামান পাঁচ আসামিকে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ দেন।

দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- গঙ্গাচড়া উপজেলার নরসিংহ মর্ণেয়া গ্রামের আবুজার রহমান (২৮), আলমগীর হোসেন (২৭), নাজির হোসেন (৩২), আবদুল করিম (২৯) ও আমিনুর রহমান (২৯)। তাদের মধ্যে আলমগীর পলাতক।

সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি আলমগীর গঙ্গাচড়া উপজেলার নরসিংহ মর্নেয়া গ্রামের মো. হান্নানের পুত্র। আর গত ১৮ মার্চ গ্রেফতার হয়ে কারাগারে থাকা নিরপরাধ আল-আমিন একই উপজেলার হাজির পাড়া গ্রামের মো. আব্দুল হান্নানের ছেলে। গত ১৮ মার্চ রাতে রংপুরের সিও বাজার মসজিদ ছাত্রাবাস থেকে আল আমিনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

২০১৫ সালে ওই ঘটনার সময় স্কুল পড়তেন আল-আমিন। জন্ম সনদ অনুযায়ী তার জন্ম ২০০০ সালের ২০ জানুয়ারি। তিনি ২০১১ সালে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা (পিএসসি), ২০১৫ সালে জেএসসি, ২০১৮ সালে এসএসসি, ২০০০ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আদিতমারী সরকারি কলেজে ভর্তি হন। বর্তমানে তিনিা অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।

গত ৩০ মার্চ সাজাপ্রাপ্ত আসামি আলমগীরের পরিবর্তে গ্রেফতার নিরপরাধ আল-আমিনকে সাজাপ্রাপ্ত আসামি দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর পর ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে মানবিক সহযোগিতার জন্য রংপুর পুলিশ সুপার বরাবর একটি আবেদন করেন আল আমিনের ভাই আলী হোসাইন।

কিন্তু আবেদন করেও কোনো সাড়া না পেয়ে গত ২৮ মে আল আমিনের পক্ষে হাইকোর্টে আবেদন করেন আলী হোসাইন। ওই আবেদনের শুনানি শেষে আদালত পিবিআইকে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে ৩০ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৫ সালের ১৪ মে ভুক্তভোগী কিশোরীর বাবা ও মা লালমনিরহাটে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যান। এসময় ওই কিশোরী ও তার ভাগনে বাড়িতে একা ছিল। এ সুযোগে আবুজার সহযোগীদের নিয়ে সন্ধ্যায় ওই কিশোরীর বাড়িতে যান এবং তাকে কৌশলে ডেকে নিয়ে পাশের একটি খেতে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করেন। পরে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে তাকে হত্যা করে পালিয়ে যান আসামিরা।

ওই রাতেই কিশোরীর বাবা-মা বাড়িতে ফিরে মেয়েকে না পেয়ে সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেন। পরের দিন সকালে বাড়ির অদূরে একটি ধানক্ষেত থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে ওই কিশোরীর বাবা বাদী হয়ে গঙ্গাচড়া থানায় হত্যা মামলা করেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গঙ্গাচড়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) তৌহিদুল ইসলাম তদন্ত শেষে আবুজারসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। প্রায় সাত বছর আদালতে বিচারকাজ চলার পর ১০ জনের সাক্ষ্যপ্রমাণ শেষে ২০২২ সালের ২৪ নভেম্বর পাঁচ আসামিকে আমৃত্যু কারাদণ্ড ও ১ লাখ টাকা করে জরিমানা করে রায় দেন রংপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মো. রোকনুজ্জামান।

এফএইচ/এমকেআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।