ব্যবসায়ীর ২০ লাখ টাকা ছিনতাই পুলিশের, ভাগ পান কে কত
ঘটনার সূত্রপাত গত বৃহস্পতিবার দুপুরে। ব্যবসায়ী আবদুল্লাহ আল মামুনের প্রতিষ্ঠানের এক বিপণন কর্মকর্তা ব্যাগে ২০ লাখ টাকা নিয়ে আইএফআইসি ব্যাংকের পল্টন শাখায় জমা দিতে যান। ওই কর্মকর্তার নাম মো. আজিম (২১)। তিনি সেখানে পৌঁছানোর পরই ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পোশাকধারী দুই সদস্য কনস্টেবল মাহাবুব আলী ও আছিফ ইকবাল ব্যাংকে প্রবেশ করেন। তাদের তিন সহযোগী শাজাহান, হৃদয় ও রাসেল এসময় ব্যাংকটির ভেতরে ও আশপাশে অবস্থান করছিলেন।
ব্যাংকে ঢুকেই কনস্টেবল মাহাবুব ও আছিফ অন্য আসামিদের দেওয়া তথ্য মোতাবেক আজিমকে জোর করে ব্যাংকের বাইরে নিয়ে আসেন। তাকে জানানো হয়, তার নামে ওয়ারেন্ট আছে। তার সঙ্গে থাকা টাকা অবৈধ। এরপর ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকাভর্তি ব্যাগটি তার কাছ থেকে নিয়ে নেন মাহাবুব ও আছিফ। তাকে একটি মোটরসাইকেলে বসিয়ে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে নিয়ে নামিয়ে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: ব্যাংকে ঢুকে ২০ লাখ টাকা ছিনতাই, দুই পুলিশসহ গ্রেফতার ৫
এ ঘটনায় ব্যবসায়ী আবদুল্লাহ আল মামুন বাদী হয়ে পল্টন মডেল থানায় মামলা করেন। মামলায় ডেমরা পুলিশ লাইনসের দুই কনস্টেবল মাহাবুব আলী ও আছিফ ইকবাল এবং তাদের তিন সহযোগী শাজাহান, হৃদয় ও রাসেলকে আসামি করা হয়।
এ মামলায় দুদিনের রিমান্ড শেষে রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) পাঁচ আসামিকে আদালতে হাজির করে প্রতিবেদন দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পল্টন থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুমিত কুমার সাহা। প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, দুদিনের রিমান্ডে আসামিদের মামলার ঘটনার বিষয়ে দফায় দফায় পৃথক ও যৌথভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। ঘটনার দিন (২১ সেপ্টেম্বর) বাদী তার প্রতিষ্ঠানের বিপণন কর্মকর্তা মো. আজিমকে মোট ২১ লাখ পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে ব্যাংকে জমা দিতে পাঠান। বাদীর দেওয়া তথ্যমতে, আজিম ঘটনাস্থল পল্টন মডেল থানাধীন ৫৭. পুরানা পল্টন লাইনের টিডেন্ট টাওয়ার ভবনে আইএফআইসি ব্যাংক লিমিটেডের উপশাখায় এক লাখ টাকা বাদীর এক ক্লায়েন্টের হিসাব নম্বরে জমা দেন। অবশিষ্ট ২০ লাখ পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে বাদীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের এক্সিম ব্যাংক লিমিটেড, পল্টন শাখার হিসাবে জমা দিতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন আজিম।
আরও পড়ুন: ২০ লাখ টাকা ছিনতাই: পুলিশ কনস্টেবলসহ ৫ জন রিমান্ডে
ঠিক ওই সময় কনস্টেবল মাহাবুব ও আছিফ ডিএমপি পুলিশের পোশাক পরা অবস্থায় আইএফআইসি ব্যাংকে প্রবেশ করেন। অন্য আসামিদের কেউ ব্যাংকটির ভেতরে ও কেউ আশপাশে অবস্থান করছিল। মাহাবুব ও আছিফ ব্যাংকে ঢুকেই আজিমের নামে ‘ওয়ারেন্ট আছে’ বলে তাকে জোর করে বাইরে নিয়ে আসেন। এরপর তার সঙ্গে থাকা টাকা অবৈধ বলে জানান। পরে টাকার ব্যাগটি জোর করে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে নিজেদের দখলে নেয় আসামিরা।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, টাকার ব্যাগ হস্তগত করার পরই আসামিরা আজিমকে একটি মোটরসাইকেলের মাঝখানে বসিয়ে বিভিন্ন এলাকা ঘুরিয়ে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে নামিয়ে দেন। পরে ঘটনাস্থল ব্যাংকের সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে আসামিদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকালে আসামি মাহাবুব আলী (২৬) ও আছিফ ইকবালের (২৪) কাছ থেকে লুণ্ঠিত টাকার ১০ লাখ, আসামি হৃদয়ের (২৬) কাছ থেকে ৬ লাখ এবং আসামি রাসেলের (২৭) কাছ থেকে বাকি চার লাখ টাকা উদ্ধারপূর্বক জব্দ করা হয়।
পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন মোতাবেক, গ্রেফতার পাঁচ আসামি পরস্পর যোগসাজশে ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে। আসামিদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই শেষে তাদের আবারও রিমান্ডে নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। ডাকাতির ঘটনার বিষয়ে আদালতে পৃথক প্রতিবেদন দেওয়া হবে। মামলাটির তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আসামিদের জেলহাজতে আটক রাখা প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: ২০ লাখ টাকা ছিনতাই: পুলিশ কনস্টেবলসহ ৫ জন কারাগারে
এদিকে ব্যবসায়ীর ২০ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগে করা মামলায় দুই পুলিশ কনস্টেবলসহ পাঁচ আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুদিনের রিমান্ড শেষে আসামিদের আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পল্টন থানার এসআই সুমিত কুমার সাহা। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এর আগে গত শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) আসামিদের আদালতে হাজির করে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য পাঁচদিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেরা মাহাবুব প্রত্যেকের দুদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গত বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২টার দিকে আইএফআইসি ব্যাংকের পল্টন শাখা এলাকা থেকে ওই ২০ লাখ টাকা লুটের ঘটনাটি মামলার বাদী ব্যবসায়ী মামুন পুলিশকে জানালে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে প্রথমে আসামি হৃদয়কে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কনস্টেবল মাহাবুব ও আছিফকে লুটের ১০ লাখ টাকাসহ গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর বাসাবো এলাকা থেকে শাজাহান ও রাসেলকে গ্রেফতার করা হয়। জব্দ করা হয় ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি।
আরও পড়ুন: রংপুর ডিআইজি কার্যালয়ে যোগ দিলেন এডিসি হারুন
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পল্টন থানার এসআই সুমিত কুমার সাহা জাগো নিউজকে বলেন, ব্যবসায়ীর ২০ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগে করা মামলায় দুই পুলিশ কনস্টেবলসহ পাঁচজন রিমান্ডে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই শেষে পুনরায় রিমান্ডে নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
মামলার বাদী আবদুল্লাহ আল মামুন জাগো নিউজকে বলেন, আমি প্রথমে শুনে আশ্চর্য হয়ে যাই। পুলিশ সদস্যরা এ ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত ভাবতেই পারছিলাম না। প্রথমে মনে করেছিলাম, আমার কর্মচারীর (আজিমের) বিরুদ্ধে মামলা থাকতেও পারে। তাৎক্ষণিকভাবে আমি পুরো বিষয়টি পুলিশকে জানাই। পুলিশ দ্রুত সময়ের মধ্যে টাকা উদ্ধারসহ আসামিদের গ্রেফতার করে। এজন্য পুলিশ ভাইদের ধন্যবাদ জানাই। আর যারা ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। যেন ভবিষ্যতে পুলিশ বাহিনীর কোনো সদস্য এমন নিকৃষ্ট কাজে না জড়ায়।
জেএ/এমকেআর/জিকেএস