মামলার জট নিয়ে যা বললেন নতুন প্রধান বিচারপতি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:১৭ পিএম, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩

দেশে মামলার জট হওয়ার কারণ এবং সেখান থেকে জট দূর করার জন্য যা যা করণীয় সেটা নিয়ে বেশ কিছু বিষয় তুলে ধরেছেন দেশের নতুন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।

বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের শেখ ফজিলাতুনেচ্ছা মুজিব মিলনায়তনে বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমিতি, ঢাকার আয়োজিত প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের এক নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

মামলা জট কমানোর বিষয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, আমাদের সুপ্রিম কোর্টের ভেতরে একটি জাদুঘর আছে। সেই জাদুঘরটি অত্যন্ত ছোট। জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক গিয়েছিলেন। আমি দায়িত্বে ছিলাম এখনো আছি। এখন হয়তো পরিবর্তন করতে হবে। জাদুঘর ছোট কিন্তু জাদুঘরে বেশকিছু পুরনো জিনিস আছে। জাদুঘরে ময়মনসিংহ থেকে আমাদের দুটি জাজমেন্ট (বিচারের রায়) পাঠানো হয়েছে। ১৮৬১ সালের জাজমেন্ট বাংলায় লেখা। স্বাক্ষরটা ফাঁসিতে। মামলাটি রুজু হয়েছিল ১৮৫৫ সালে। তাহলে ১৮৫৫ সালে যেই মামলা শুরু হয় সেই মামলা ১৮৬১ সাল অর্থাৎ পাঁচ থেকে ছয় বছর তখনও লেগেছে। কেন?

তখন সারা বাংলায় মানুষ কতজন ছিল। পূর্ব বাংলা, পশ্চিম বাংলা মিলেই তখন কত হবে? রবীন্দ্রনাথ যেহেতু বলেছেন সাড়ে সাত কোটি বাঙালিকে রেখেছ বাঙালি করে হে মুগ্ধ জননী মানুষ করনি। এর মানেই হচ্ছে দুই বাংলা মিলেই তখন সাত কোটিরও কম মানুষ ছিল। আজ এক বাংলাতেই শুধু আমরা ১৮ কোটি মানুষের দেশ।

ওবায়দুল হাসান বলেন, ১৮ কোটি মানুষের দেশে মাত্র ১৮শত আমরা জজ। আমাদের সহকারী জজ যে আছে তার সঙ্গে আমাকেও যদি হিসাব করেন আমরা আঠারশো সাড়ে আঠারশো জজ আছি। একেক জনের ভাগে কী পরিমাণ মামলা। প্রায় ৩৫-৪০ লাখ মামলা। আগেও সেই মামলার জন্য জজ সাহেবরা সময় নিয়েছেন কেন? এটার আপনাদের কাছে প্রশ্ন রেখে গেলাম। আর উত্তর আমি একটু সামান্যভাবে দিতে চাই এভাবে, তখন এ মামলার সময় লেগেছে এ কারণে যে আইনের যে, বহু ধারা উপধারা আছে সেটার কারণে একটা মামলা থেকে অনেক ডালপালা গজায়। এ ডালপালা গজাতে গজাতে সেই ১৮৫৫ সালের মামলাটি ১৮৬১ সালে তখন নাকি ডিসপোজাল হয় তার আগে এটি কলকাতা হাইকোর্টে গেছে, পিবি কাউন্সিলে গেছে বিলেতে।

তিনি বলেন, আজকালতো পিবি কাউন্সিল নেই, কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট তো আছে। একটি মামলা শুরু হয় সেই জামালপুরের একটি কোর্টে বা অন্য কোন কোর্টে। তারপর দেখবেন শুরু হয়ে গেলো আইনের যে ফাঁক ফোকরগুলো আছে সেই ফাঁকফোকর দিয়ে দরখাস্তের পর দরখাস্ত এবং বিভিন্ন রকমের কারণে এক পক্ষ আরেক পক্ষকে হয়রানি করার চেষ্টা করা এবং সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত এসে আবার ফিরে গিয়ে আবার শুরু হয়।

এ করতে করতে একটি মামলার অনেক দিন সময় লাগে। এ যে মামলার জট সে কারণে মামলার জট বাড়ে। এখন আপনি বলবেন যে এত বুঝলাম কিন্তু আপনার করণীয় কী । আমার বা আমাদের করণীয় হলো আমাদের সচেতনতা আরও বাড়াতে হবে। আমাদের বোঝতে হবে, আইনজীবীদের কেউ বোঝতে হবে। আইন এটি একটি পেশা, এটা ব্যবসা নয় এবং এ পেশাটা পেশাদারিত্ব দিয়েই কাজ করতে হবে।

প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা যারা বিচারক আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এগুলো নিষ্পত্তি করা। আমরা সেই ব্যাপারে সচেষ্ট থাকবো। আপনারা শুনলে খুশি হবেন আমাদের সুপ্রিম কোর্টে আরটি বিভাগের জন্য ৮ জন মনিটরয় জজ আছে। প্রত্যেকটা বিভাগে জজদের তারা তাগাদা দিচ্ছেন যে আপনারা মামলা শেষ করেন। আপনারা মামলা গুলো এভাবে তাড়াতাড়ি শেষ করতে পারবেন। এতে আমরা কিন্তু ফল পাচ্ছি। আমাদের মামলার ডিসপোজাল হার বেড়েছে। আগে যেখানে ছিল ৭০ থেকে ৮০ ভাগ এখন কোনো কোনো জেলায় ১২৫ ভাগ পর্যন্ত ডিসপোজাল রেট হয়েছে। অর্থাৎ এক বছরে একশটি মামলা ফাইল হয়েছে সেখানে ১২৫টি মামলা আগের বছরের ২৫টিসহ নিষ্পত্তি হয়েছে।

প্রধান বিচারপতি বলেন, যদি আমরা এ গতিটি অব্যাহত রাখতে পারি তাহলে আমার মনে হয় বাংলাদেশে ৪-৫ বছরের মধ্যে মামলা জট সম্পূর্ণভাবে দূর করতে না পারলেও একটা সহনশীল মাত্রায় নিয়ে আসতে পারবো।

নাগরিক সংবর্ধনায় বক্তাদের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে ওবায়দুল হাসান বলেন, যারা কথা বলেছেন তাদের এ কথা বলার মধ্য দিয়ে আমার দায়িত্বের বোঝাটা মনে হয় বেড়ে গেলো। কারণ তারা যেই কথাগুলো বলেছেন তার সবগুলো কথার যোগ্য আমি নই। তারা যেই কথাগুলো বলেছেন সেটা প্রমাণ করার জন্য আমার যোগ্যতার প্রমাণ করতে হবে এবং সেই প্রমাণ যেদিন আমি চলে যাবো, বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির পদ থেকে আমি অবসর গ্রহণ করবো সেদিন যদি আপনারা আমাকে এভাবে কথা বলেন তাহলে বুঝবো আমার বোদয় সফলতা এসেছে।

বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমিতি ঢাকার সভাপতি প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মূখ্য সচিব মো. আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, সমাজ কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরু, সাবেক তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমিতি ঢাকার সাধারণ সম্পাদক ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ।

আরএসএম/এমআইএইচএস/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।