প্রথম মামলায় পি কে হালদারের ২২ বছরের কারাদণ্ড

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:১৮ পিএম, ০৮ অক্টোবর ২০২৩
ফাইল ছবি

অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের (সাবেক এনআরবি গ্লোবাল) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদারের (পি কে) ২২ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়া অপর ১৩ আসামির সাত বছর করে কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

রোববার (৮ অক্টোবর) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০ এর বিচারক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম এ রায় দেন।

রায়ে রায়ে পি কে হালদারকে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অপরাধে দুদক আইনের ২৭(১) ধারায় ১০ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থপাচারের অপরাধে ১২ মানি লন্ডারিং আইনে ১২ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

প্রথম মামলায় পি কে হালদারের ২২ বছরের কারাদণ্ড

পি কে হালদারের বিরুদ্ধে ৫২ মামলার মধ্যে এটি প্রথম মামলার রায়। বাকি ৫১ মামলা এখনো তদন্তাধীন।

বিচারক রায়ে উল্লেখ করেন, পি কে হালদারকে দেওয়া দুই ধারার সাজা আলাদাভাবে চলবে অর্থাৎ তাকে ২২ বছরের কারাভোগ করতে হবে।

আরও পড়ুন>> পি কে হালদারের বান্ধবী নাহিদা রুনাইয়ের জামিন হাইকোর্টে স্থগিত

অপরদিকে আসামি অবন্তিকা বড়াল, শংখ বেপারী, সুকুমার মৃধা, অনিন্দিতা মৃধাক, লিলাবতী হালদার (পি কে হালদারের মা), পূর্ণিমা রানী হালদার, উত্তম কুমার মিস্ত্রি, অমিতাভ অধিকারী, প্রিতিশ কুমার হালদার, রাজিব সোম, সুব্রত দাস, অনঙ্গ মোহন রায় ও স্বপন কুমার মিস্ত্রির পৃথক দুই ধারায় সাত বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। তাদের দুদক আইনের ২৭(১) ধারায় তিন বছর ও মানি লন্ডারিং আইনে চার বছরের কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। তাদের দুই ধারার সাজা একসঙ্গে চলবে বলে বিচারক রায়ে উল্লেখ করেন। অর্থাৎ তাদের চার বছর কারাভোগ করতে হবে।

প্রথম মামলায় পি কে হালদারের ২২ বছরের কারাদণ্ড

এর আগে গত ৪ অক্টোবর রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০ এর বিচারক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম রায় ঘোষণার জন্য ৮ অক্টোবর দিন ধার্য করেন। ওইদিন যুক্তিউপস্থাপনের সময় কারাগারে থাকা চার আসামি অবন্তিকা বড়াল, শংখ বেপারী, সুকুমার মৃধা ও অনিন্দিতা মৃধাকে আদালতে হাজির করা হয়। পি কে হালদারসহ ১০ আসামি পলাতক রয়েছেন। তারা হলেন- লিলাবতী হালদার (পি কে হালদারের মা), পূর্ণিমা রানী হালদার, উত্তম কুমার মিস্ত্রি, অমিতাভ অধিকারী, প্রিতিশ কুমার হালদার, রাজিব সোম, সুব্রত দাস, অনঙ্গ মোহন রায় ও স্বপন কুমার মিস্ত্রি। এ মামলায় ১০৬ সাক্ষীর মধ্যে ৯৯ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।

আরও পড়ুন>> ৩৮ কোটিতে বিক্রি হয়ে গেলো পি কে হালদারের কুমিরের খামার

২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি পি কে হালদারের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগে মামলা করেন দুদকের উপ-পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী। মামলার এজাহারে বলা হয়, পি কে হালদার বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা ও অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ২৭৪ কোটি ৯১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৫৫ টাকার অবৈধ সম্পদ নিজ দখলে রেখেছেন। এছাড়া ওই অর্থ আড়াল করতে বিদেশে পাচার করে মানি লন্ডারিং আইনেও অপরাধ করেন তিনি।

প্রথম মামলায় পি কে হালদারের ২২ বছরের কারাদণ্ড

মামলাটি তদন্ত শেষে ১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন দুদকের উপ-পরিচালক সালাহউদ্দিন। ২০২২ সালের ৮ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।

চার্জশিটে বলা হয়েছে, গত ১০ বছরে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নামে-বেনামে ৯৩৩ কোটি টাকার জমি, ফ্ল্যাট ও হোটেল ক্রয় করেন পি কে হালদার। এর মধ্যে জমি কিনেছেন ৬ হাজার ৭৯০ শতাংশ। এই সম্পদের বাজারমূল্য প্রায় ৩৯১ কোটি ৭৫ লাখ ৮১ হাজার ১২ টাকা। নিজের নামে তিনি জমি কিনেছেন ৪ হাজার ১৭৪ শতাংশ। দলিলে এসব জমির দাম ৬৭ কোটি ৯৪ লাখ ২০ হাজার ৯৩০ টাকা দেখানো হলেও প্রকৃত বাজারমূল্য প্রায় ২২৮ কোটি টাকা। এছাড়া ধানমন্ডিতে তার নামে দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে।

আরও পড়ুন>> কারাগারে হামলার শিকার পি কে হালদার

চার্জশিটে আরও বলা হয়, পি কে হালদার তার নিকটাত্মীয় পূর্ণিমা রানী হালদারের নামে উত্তরায় একটি ভবন নির্মাণ করেন, যার দাম প্রায় ১২ কোটি টাকা। পূর্ণিমার ভাই উত্তম কুমার মিস্ত্রির নামে তেজগাঁও, তেজতুরী বাজার ও গ্রিন রোডে ১০৯ শতাংশ জমি কেনেন, যার বাজারমূল্য ২০০ কোটি টাকা। পি কে হালদার কাগুজে কোম্পানি ক্লিউইস্টোন ফুডসের নামে কক্সবাজারে দুই একর জমির ওপর র্যাডিসন নামে আটতলা হোটেল নির্মাণ করেন, যার বাজারমূল্য প্রায় ২৪০ কোটি টাকা তার খালাতো ভাই অমিতাভ অধিকারী ও অনঙ্গ মোহন রায়ের নামে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে ৪০৪ শতাংশ জমি কেনেন, যার দাম প্রায় ১৬৭ কোটি টাকা।

প্রথম মামলায় পি কে হালদারের ২২ বছরের কারাদণ্ড

কলকাতার অনতিদূরে অশোকনগরসহ পশ্চিমবঙ্গের বেশ কিছু জায়গায় অভিযান চালিয়ে ২০২২ সালের ১৪ মে পি কে হালদারকে গ্রেফতার করে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি। একই সঙ্গে তার ভাই প্রাণেশ হালদার, স্বপন মিস্ত্রি ওরফে স্বপন মৈত্র, উত্তম মিস্ত্রি ওরফে উত্তম মৈত্র, ইমাম হোসেন ওরফে ইমন হালদার এবং আমানা সুলতানা ওরফে শর্মী হালদারসহ বাকি অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়।

গত ১১ জুলাই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কলকাতার আদালতে চার্জশিট জমা দেয় ইডি। অর্থপাচার আইন-২০০২ এবং দুর্নীতি দমন আইন- ১৯৮৮’র বিভিন্ন ধারায় অভিযুক্তদেরর নামে চার্জ গঠন করা হয়।

বর্তমানে পি কে হালদারসহ পাঁচ পুরুষ আসামি রয়েছেন প্রেসিডেন্সি কারাগারে। আর একমাত্র নারী আসামি আমানা সুলতানা ওরফে শর্মী হালদার রয়েছেন আলিপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে।

জেএ/ইএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।