মানবতাবিরোধী অপরাধ

খুলনার ৯ আসামির যুক্তিতর্ক উপস্থাপন ৬ নভেম্বর

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১১:২০ এএম, ১৩ অক্টোবর ২০২৩
ফাইল ছবি

একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় খুলনার ডুমুরিয়ার শেখ আব্দুর রহিমসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউশনের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য আগামী ৬ নভেম্বর পরবর্তী দিন ঠিক করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার শেখ মুশফেক কবীর বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন।

ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলম।

আদালতে এদিন রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী, প্রসিকিউটর ঋষিকেশ সাহা। তাদের সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার শেখ মুশফেক কবীর। অন্যদিকে আসামিপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট গাজি এম এইচ তামিম ও আবদুস সাত্তার পালোয়ান।

এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আনা তদন্ত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে মোট ৬টি অভিযোগে (ফরমাল চার্জ) গঠন করার পর বিচার শুরু হয়েছে। এরপর মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেছে প্রসিকিউশন। এরই ধারাবাহিকতায় মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন চলছে।

মামলায় খুলনার ডুমুরিয়ার আব্দুর রহমানসহ মোট আসামি ১১ জন। অন্য ১০ আসামি হলেন- সামছুর রহমান গাজী ওরফে মেজো ভাই (৮২), মো. ওমর আলী ফকির (৭০), জাহান আলী বিশ্বাস (৬৭), মো. আক্কাস সরদার (৬৮), নাজের আলী ফকির (৬৫), মো. শাহাজাহান সরদার (৭৫), আব্দুল করিম শেখ (৬৫), আবু বক্কার সরদার (৬৭), মো. রওশন গাজী ওরফে রওশন মল্লিক (৭২) ও মো. সোহরাব হোসেন সরদার ওরফে মুহাম্মদ আব্দুল হামিদ ওরফে খুলনার হুজুর (৬২)।

মামলার ১১ আসামির মধ্যে দুজন মারা গেছেন। বর্তমানে আসামি সংখ্যা ৯ জন। তাদের মধ্যে একজন পলাতক। অন্য এক আসামি আব্দুর রহিম জামিনে। এখন কারাগারে আছেন সাতজন।

২০২২ সালের ১২ এপ্রিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আসামি শেখ আব্দুর রহিমের জামিন মঞ্জুর করেন। আইনজীবী জানান, ২০১৭ সালের এপ্রিলে আব্দুর রহিম গ্রেফতার হয়েছেন। ২০১৮ সালে তিনি কারাগারে স্ট্রোক করেছিলেন। কারও সাহায্য ছাড়া চলতে পারেন না। আদালত তাকে জামিন দিয়েছেন। তবে তিনি নিজ বাড়িতে থাকবেন। কোনো সাক্ষীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন না। আর প্রতি ধার্য তারিখে তিনি আদালতে হাজির হবেন।

এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ (আইও) রাষ্ট্রপক্ষে প্রসিকিউশনের আনা ২৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। আসামির পক্ষে একজন সাফাই সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। এরপর মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করার জন্য দিন ঠিক করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয়।

আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ১৯৭১ সালের ১৮ মে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার খর্নিয়া গ্রাম থেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থাকা আনু মোল্লা ওরফে আজিজ শেখ, মজিদ বিশ্বাস, সাহেব আলী, শামসুল মোল্লা, ইমাম শেখ, আমজাদ সরদার, আব্দুল লতিফ মোড়ল ও কাওসার শেখসহ নয়জনকে ধরে নির্যাতন করতে করতে রানাই এলাকার বকুলতলা এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে তাদের গুলি করে হত্যার পর মরদেহ নদীতে ভাসিয়ে দেয়।

২০১৭ সালের ২৬ ডিসেম্বর খুলনার ডুমুরিয়ার আব্দুর রহমানসহ ১১ আসামির বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রস্তুত করেন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার প্রধান সমম্বয়ক প্রয়াত আব্দুল হান্নান খান।

তখন তিনি বলেছিলেন, এ মামলা খুলনার ডুমুরিয়া থানার খর্নিয়া ইউনিয়নের। আসামিরা খর্নিয়া ইউনিয়ন পরিষদ অফিস দখল করে রাজাকার ক্যাম্প করেছিল। এ মামলার আসামিদের সবাই খুলনার রাজাকারদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে (আনসার ক্যাম্প) প্রশিক্ষণ নেয়। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী রাজাকারদের যে তালিকা করেছিল, সেখানেও তাদের নাম আছে। একাত্তরে ডুমুরিয়া থানার ওই এলাকায় বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধে আসামিদের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ার কথা বলা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে।

আব্দুল হান্নান খান আরও বলেন, ১৯৭১ সালে আটক, অপহরণ, নির্যাতন, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও হত্যার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের ছয়টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনা হচ্ছে এ মামলার সব আসামির বিরুদ্ধে। আসামিরা মুক্তিযুদ্ধের সময় ২২ জনকে হত্যা করে। ৫৬-৫৭টি বাড়ির মালামাল লুট করে তারা আগুন ধরিয়ে দেয়। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের সময় খুলনার আনসার ক্যাম্প দখলে নিয়ে তারা রাজাকারদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প করেছিল। তদন্ত সংস্থার জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ক সানাউল হক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিনও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

হেলাল উদ্দিন বলেন, এ মামলার তদন্ত শুরু হয় ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি। তদন্তকালে বিভিন্ন ঘটনায় ৪৮ জনের জবানবন্দি নেওয়া হয়। এছাড়া তিনজনকে জব্দ তালিকার সাক্ষী করা হয়। তদন্ত কর্মকর্তাসহ মোট ৫২ জন সাক্ষীর তালিকা দেওয়া হয়েছে ৭৩০ পৃষ্ঠার এ প্রতিবেদনে।

গ্রেফতার আসামিরা কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন জানিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, আসামিদের প্রায় সবাই মুক্তিযুদ্ধের আগে থেকেই জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। শেখ আব্দুর রহিম, সামছুর রহমান গাজী ও সোহরাব হোসেন সরদার গ্রেফতার হওয়ার আগ পর্যন্ত জামায়াতের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন।

এফএইচ/এমকেআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।