জামিন পেলেও মুক্তি মিলছে না ডেসটিনির এমডি রফিকুলের

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৬:৫৪ পিএম, ০৬ মার্চ ২০২৪
ডেসটিনির এমডি রফিকুল আমিন

ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির প্রায় এক হাজার ৮৬১ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের মামলায় ১২ বছরের সাজাপ্রাপ্ত কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমিনকে পাসপোর্ট জমা রাখার শর্তে এক বছরের জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। আইনজীবীরা জানিয়েছেন, রফিকুলের বিরুদ্ধে আরও মামলা বিচারাধীন থাকায় তিনি এখনই কারামুক্ত হতে পারছেন না।

জামিন সংক্রান্ত আবদনের শুনানি নিয়ে বুধবার (৬ মার্চ) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদাত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদেশের বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন রফিকুলের আইনজীবী মো. মহাদ্দেস-উল-ইসলাম টুটুল।

তিনি বলেন, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমিনকে দেওয়া ১২ বছরের কারাদণ্ড এবং দুই হাজার ৩০০ কোটি টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও তিন বছরের সাজা খাটা শেষ হওয়ায় তার জামিন মঞ্জুর করেছেন উচ্চ আদালত।

আদালতে আজ জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট সৈয়দ মামুন মহবুব ও মো. মহাদ্দেস-উল-ইসলাম টুটুল। অন্যদিকে দুর্ণীতি দমণ কমিশন দুদকের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট মো. খুরশীদ আলম খান।

তবে, এই জামিনের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন করবেন বলেও জাগোনিউজকে জানিয়েছেন দুদকের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট মো. খুরশীদ আলম খান। আইনজীবী মো. মহাদ্দেস-উল-ইসলাম টুটুল জানান, একই মামলায় জামিনে আছেন দণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক সেনাপ্রধান এম হারুন-অর-রশীদ, জেসমিন আক্তার (মিলন), জিয়াউল হক মোল্লা ও সাইফুল ইসলাম রুবেল।

২০২২ সালের ১২ মে বিচারিক আদালতে এ মামলার রায় হয়। তাতে গ্রাহকের অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের দায়ে ডেসটিনি গ্রুপের প্রেসিডেন্ট সাবেক সেনাপ্রধান হারুন-অর-রশিদ এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীনসহ ৪৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড এবং তাদের ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা জরিমানা করেছে আদালত।

এর মধ্যে রফিকুল আমিনকে ১২ বছর কারাদণ্ড এবং ২০০ কোটি টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৩ বছরের সাজা দেওয়া হয়েছে। আর হারুন-অর-রশীদকে ৪ বছর কারাদণ্ড এবং সাড়ে ৩ কোটি টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন বিচারক।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা এ মামলায় ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো অপারেটিভ সোসাইটির প্রায় ১ হাজার ৮৬১ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছিল এ মামলায়। তাতে অভিযুক্ত ৪৬ আসামির সবাইকে দোষী সাব্যস্ত করে ঢাকার চতুর্থ বিশেষ জজ আদালতের বিচারক শেখ নাজমুল আলম ২০২২ সালের ১২মে এই রায় ঘোষণা করেন।

রায়ে বলা হয়, ডেসটিনির যেসব সম্পত্তি ও ব্যাংকে গচ্ছিত টাকা ইতোমধ্যে অবরুদ্ধ করা হয়েছে, সেগুলো রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হল।

আর আসামিদের কাছ থেকে আদায় করা জরিমানার টাকা ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪৫ (বি) ধারা অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ বাবদ ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের সকল শেয়ারহোল্ডার এবং বিনিয়োগকারীদের সমান হারে ভাগ করে দিতে হবে।

সেজন্য সরকারকে একটি কমিটি গঠন করে দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে রায়ে। কমিটির চেয়ারম্যান হবেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারক, অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা, সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা, একজন উপ- মহা পুলিশ পরিদর্শক, একজন চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট এবং সমবায় বিভাগের রেজিস্ট্রিার।

মামলার তথ্য অনুযায়ী, মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভের নামে ডেসটিনি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল ১ হাজার ৯০১ কোটি টাকা। সেখান থেকে ১ হাজার ৮৬১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। তাতে সাড়ে ৮ লাখ বিনিয়োগকারী ক্ষতির মুখে পড়েন।

২০১২ সালের ৩১ জুলাই দুদকের উপ-পরিচালক মো. মোজাহার আলী সরদার ও সহকারী পরিচালক মো. তৌফিকুল ইসলাম রাজধানীর কলাবাগান থানায় ডেসিটিনির কর্তব্যরত অন্যদের বিরুদ্ধে ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি এবং ডেসটিনি ট্রি প্লান্টেশন প্রজেক্টের অর্থ আত্মসাতের দুটি মামলা করেন।

তদন্ত শেষে ২০১৪ সালের ৫ মে দুদক আদালতে উভয় মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। এর মধ্যে ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির মামলায় ৪৬ জন এবং ডেসটিনি ট্রি প্ল্যানটেশন লিমিটেডে দুর্নীতির মামলার ১৯ জনকে আসামি করা হয়। হারুন-অর-রশিদ ও রফিকুল আমিন দুই মামলাতেই আসামি।

বিচারিক আদালতের দেওয়া রায়ে রফিকুল আমিনকে ১২ বছর কারাদণ্ড এবং ২০০ কোটি টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৩ বছরের সাজা দেওয়া হয়েছে। বাকিদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। ৪৬ আসামির মধ্যে ৩৯ জন আসামি পলাতক। পলাতকদের বিষয়ে ২০২২ সালের ৯ জুন গ্রেফতারি পরোয়ানা ও রেড অ্যালার্ট জারির নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

এফএইচ/এমকেআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।