নারী-পুরুষের ত্বকের ক্যানসারে ধরন কি আলাদা

লাইফস্টাইল ডেস্ক
লাইফস্টাইল ডেস্ক লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:৫৮ এএম, ১৭ জুন ২০২৫

ক্যানসার বিশ্বব্যাপী এক মরণব্যাধি। সম্প্রতি ত্বকের ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। তবে শরীরের কোন অংশে এই ব্যাধি দেখা দেবে, তা আবার নারী ও পুরুষের ক্ষেত্রে ভিন্ন বলে দাবি করেছেন গবেষকরা।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ক্যানসার রিসার্চ ইউকে (সিআরইউকে) সম্প্রতি এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে চলতি বছর ত্বকের ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তে পারে বলেও প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতি ১০ জন পুরুষের মধ্যে ৪ জনের পিঠ, বুক ও পেটে মেলানোমা ধরনের ত্বক ক্যানসার দেখা দেয়। বছরে প্রায় ৩ হাজার ৭০০ পুরুষ এই ক্যানসারে আক্রান্ত হন। ত্বকের সবচেয়ে বিপজ্জনক ক্যানসার হলো মেলানোমা।

অন্যদিকে, ৩৫ শতাংশ নারীর কোমর থেকে পা পর্যন্ত অংশে এ ক্যানসার দেখা দেয়। প্রতি বছর প্রায় ৩ হাজার ২০০ নারী এতে আক্রান্ত হন।

গবেষকরা মনে করেন, নারী-পুরুষের আচরণগত পার্থক্যের কারণেই এ ভিন্নতা দেখা দেয়। উদাহরণস্বরূপ, পুরুষরা প্রায়ই রোদে শার্ট ছাড়াই বের হন, আর নারীরা ওই দেশে গরমকালে শর্টস বা স্কার্ট পরতে পছন্দ করেন।

সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির সংস্পর্শে আসার কারণেই ৮৭ শতাংশ মেলানোমা ক্যানসার হয়। যুক্তরাজ্যে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১৭ হাজার মানুষ এতে আক্রান্ত হন। ‘মেলানোমা’ শব্দের অর্থ ‘কালো টিউমার’। এটি দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং শরীরের যেকোনো অঙ্গে ছড়িয়ে পড়াতে পারে। জীবনযাপন, পোশাক, পেশা ও রোদে সময় কাটানোর সঙ্গে এর সম্পর্ক আছে।

সিআরইউকের তথ্যানুসারে, গত বছর যুক্তরাজ্যে মেলানোমা আক্রান্তের সংখ্যা রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছায়। ২০০৭–০৯ সাল থেকে ২০১৭–১৯ সালের মধ্যে নতুন রোগীর হার প্রায় এক-চতুর্থাংশ বেড়ে প্রতি লাখে ২১ জন থেকে ২৮ জনে পৌঁছেছে।

নারী-পুরুষের ত্বকের ক্যানসারে ধরন কি আলাদা

৮০ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে মেলানোমার হার ৫৭ শতাংশ এবং ২৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সীদের মধ্যে ৭ শতাংশ বেড়েছে। সিআরইউকের প্রধান নির্বাহী মিশেল মিচেল বলেন, ‘গবেষণার অগ্রগতির ফলে ত্বকের ক্যানসারে আক্রান্তদের বেঁচে থাকার হার বাড়ছে। তবে মেলানোমায় আক্রান্তের সংখ্যা, বিশেষ করে পুরুষদের মধ্যে, বাড়ছে—এটা উদ্বেগজনক।’ বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিরোধই এ ব্যাধি থেকে বাঁচার সর্বোত্তম উপায়।

যেভাবে প্রতিরোধ করবেন-

১. ত্বকে নতুন কোনো তিল, তিলের আকার বা রঙের পরিবর্তন, অথবা অস্বাভাবিক কোনো দাগ দেখা দিলে অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মিশেল মিচেল। তিনি বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় হলে প্রাণ বাঁচানো সম্ভব।

২. সিআরইউকের স্বাস্থ্যবিষয়ক তথ্য বিভাগের প্রধান ফিয়োনা ওসগুন বলেন, ‘আবহাওয়া গরম হলে রোদে সাবধানে থাকতে হবে। প্রতি কয়েক বছর পরপর রোদে পুড়ে গেলেই মেলানোমার ঝুঁকি তিনগুণ বেড়ে যায়। শুধু গরম নয়, রোদেলা যেকোনো দিনেই, এমনকি মেঘলা বা শীতল দিনেও, সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি ত্বকের ক্ষতি করতে পারে।’

৩. ফিয়োনার পরামর্শ অনুযায়ী, বেলা ১১টা থেকে ৩টার মধ্যে ছায়ায় থাকা, সান হ্যাট ও সানগ্লাসসহ এমন পোশাক পরা যাতে ত্বক ঢাকা থাকে, এবং অন্তত এসপিএফ ৩০ ও ৪ বা ৫ তারকা মানের সানস্ক্রিন ব্যবহার করলে ত্বক ইউভি রশ্মি থেকে রক্ষা পেতে পারে।

ইংল্যান্ডের জাতীয় স্বাস্থ্য সংস্থার ক্যানসার বিষয়ক পরিচালক অধ্যাপক পিটার জনসন বলেন, ‘ত্বকের ক্যানসারের ক্ষেত্রে প্রতিরোধই সবচেয়ে ভালো উপায়। সূর্যের রশ্মি তীব্র হলে বাইরে যাওয়া এড়িয়ে চলুন এবং সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। কোনো উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।’

সূত্র: ইউএনবি

এএমপি/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।