ব্যস্ত সকালের নাস্তা সেরে ফেলুন ৫ মিনিটে

লাইফস্টাইল ডেস্ক
লাইফস্টাইল ডেস্ক লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১:৩১ এএম, ২৩ জুন ২০২৫

নতুন দিনের শুরুটা যেমনই হোক না কেন, আমাদের বেশিরভাগ মানুষের সকালটাই কাটে তাড়াহুড়ার মধ্যে। চোখ কচলাতে কচলাতেই সময় হয়ে যায় অফিসে, স্কুলে বা কলেজে যাওয়ার। বাসা থেকে বের হওয়ার তাড়ায় অনেকেই তখন সকালবেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ – নাস্তাটাই উপেক্ষা করেন। কেউ কেউ ভাবেন, 'যাক গে, দুপুরে কিছু খেয়ে নেব।' কিন্তু সকালে কিছু না খেয়ে দিন শুরু করলে তার প্রভাব শরীর ও মন দুটোর উপরেই পড়ে।

বিভিন্ন গবেষণার তথ্য মতে, দিনের সবচেয়ে জরুরি খাবার হলো সকালের নাস্তা। কারণ সারাদিনের কাজের শক্তির ভিত্তি গড়ে এই প্রথম খাবার থেকেই। খালি পেটে বাইরে বের হলে শরীরে শক্তির ঘাটতি দেখা দেয়, মনোযোগ কমে যায় এবং ক্লান্তি দ্রুত ভর করে। শুধু তাই নয়, দুপুরের আগে অতিরিক্ত ক্ষুধা অনুভব হয় বলে তখন যা-তা খাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়, যা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এ থেকেই মোটা হওয়ার ঝুঁকি, অ্যাসিডিটির সমস্যা, রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসের মতো দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতাও তৈরি হতে পারে।

শুধু অফিসগামী মানুষ নয়, স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরাও এই সমস্যার মধ্যে পড়ে। অনেক সময়ই তারা না খেয়ে বেরিয়ে যায়, কেউবা টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে ফাস্টফুড খায় বা শুধু চা-বিস্কুটে কাজ সেরে ফেলে। অথচ পড়াশোনার মনোযোগ, শারীরিক বৃদ্ধি এবং মানসিক স্থিতির জন্য সকালে একটি স্বাস্থ্যকর নাস্তার গুরুত্ব অপরিসীম।

সমস্যার মূল জায়গাটা অনেক সময়ই সময়ের অভাব। তবে সময় না থাকলেই যে স্বাস্থ্যকর নাস্তা বাদ দিতে হবে এ ধারণা পুরোপুরি ভুল। মাত্র ৫ মিনিটেই ঘরে থাকা কিছু সাধারণ উপকরণ দিয়ে তৈরি করা যায় সহজ, সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর নাস্তা। যেমন-

১. এক গ্লাস গরম দুধে আধা কাপ ওটস, কিছু কিসমিস, কলা কুচি আর সামান্য মধু মিশিয়ে নিলে দারুণ একটি হেলদি খাবার তৈরি হয়। এটি যেমন হজমে সহায়ক, তেমনই অনেকক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখে।

২. পিনাট বাটার ও কলা টোস্টও আরেকটি জনপ্রিয় অপশন। দুই পিস পাউরুটিতে পিনাট বাটার মাখিয়ে তার উপর কলা কেটে সাজিয়ে নিলেই কাজ শেষ। চাইলেই এর উপর একটু চিয়া সিড ছিটিয়ে নেওয়া যায়, যা স্বাদ ও পুষ্টিগুণ দুটিই বাড়ায়।

৩. আবার যারা ডিম পছন্দ করেন, তারা চাইলে ৫ মিনিটেই সিদ্ধ ডিম তৈরি করে নিতে পারেন। এর সঙ্গে একটি পাউরুটি খেলেই হয়ে যায় একটি শক্তিশালী সকালের খাবার।

৪. মিষ্টি ফল খেতে ভালোবাসেন যারা, তাদের জন্য মিক্সড ফ্রুট সালাদ হতে পারে চমৎকার উপায়। ফ্রিজে থাকা কলা, আপেল, পেঁপে, কমলা কুচি করে কেটে তার উপর একটু দই বা লেবুর রস ছিটিয়ে নিলেই তৈরি স্বাস্থ্যকর এক পুষ্টিকর বাটি।

৫. অন্যদিকে স্মুদি বা মিল্কশেকও হতে পারে একটি দ্রুত তৈরি হাইড্রেটিং নাস্তা। দুধ, কলা, বাদাম, দারচিনি গুঁড়া ও বরফ একসাথে ব্লেন্ড করলেই তৈরি সুস্বাদু এই নাস্তা।

যারা বাইরে খেতে বাধ্য হন, তারা অনেক সময় ফাস্টফুড, তেল-মসলাযুক্ত বা প্রসেসড খাবার খেয়ে ফেলেন। এর ফলে ডায়রিয়া, গ্যাস্ট্রিক, বদহজম, ওজন বৃদ্ধি, এমনকি দীর্ঘমেয়াদি রোগের আশঙ্কাও বাড়ে। বাইরে খাওয়ার এই অভ্যাস ধীরে ধীরে একদিকে খরচ বাড়ায়, অন্যদিকে শরীরের ওপর পড়ে ক্ষতিকর প্রভাব।

তাই কিছু সহজ হ্যাকস মেনে চললে সকালের এই ব্যস্ততার মাঝেও স্বাস্থ্যকর নাস্তার ব্যবস্থা করা সম্ভব। যেমন রাতে ওটস বা ফল কেটে রাখা, ডিম আগে থেকেই সিদ্ধ করে রাখা, স্মুদি তৈরির উপকরণ ছোট প্যাকেটে ভাগ করে রাখা। এসব ছোট উদ্যোগই পরদিন সকালে বড় সুবিধা দিতে পারে।

স্বাস্থ্য ধরে রাখার জন্য বড় কোনো আয়োজনের দরকার হয় না। বরং দৈনন্দিন জীবনের ছোট ছোট অভ্যাসই হতে পারে বড় পরিবর্তনের মূল চাবিকাঠি। প্রতিদিন মাত্র ৫ মিনিট সময় নিয়ে নাস্তা করে ঘর থেকে বের হওয়া মানে নিজেকে ভালো রাখার এক ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। শরীর ভালো থাকলে মন থাকবে ফুরফুরে, আর কাজে মনোযোগ বাড়বে অনেকগুণ। তাই কাল সকাল থেকেই শুরু হোক ছোট্ট কিন্তু পাঁচ মিনিটের স্বাস্থ্যকর নাস্তা।

হৃদয়/এএমপি/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।