সকালের শুরুটা কি ইনফ্লুয়েন্সারদের মতো হওয়া উচিত

লাইফস্টাইল ডেস্ক
লাইফস্টাইল ডেস্ক লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮:৩১ এএম, ১৫ জুলাই ২০২৫

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মাঝে মধ্যে একেকটা ট্রেন্ড বেশ সাড়া ফেলে, সম্প্রতি ইনফ্লুয়েন্সারদের সকালের রুটিনের ভিডিওগুলো বেশ ভাইরাল। কোটি কোটি ভিউ কামাচ্ছে সেসব ভিডিও।

এমনই একটি ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায় আস্টন হল নামের এক ইনফ্লুয়েন্সার ভোর চারটার আগে উঠে দাঁত ব্রাশ করছেন, এরপর সাঁতার কাটছেন, ধ্যান করছেন, জার্নাল পড়ছেন, কলার খোসা মুখে মাখছেন, ব্যায়াম করছেন, বরফ পানিতে মুখ ডোবেচ্ছন, এমন আরও অনেক কিছুর পরে শেষমেষ সকাল সাড়ে নয়টায় তিনি নাস্তা করে দিন শুরু করছেন।

এমন ভিডিওগুলো দেখে আটপৌরে আসাদের মনে প্রশ্ন জাগে যে, সকালের শুরুটা কি আদৌ ইনফ্লুয়েন্সারদের মতো হওয়া উচিত? নাকি আস্টনের ছয় ঘণ্টা ধরে দিন শুরু করা এক প্রকার বিলাসিতা? কেমন হওয়া উচিত দিনের শুরু?

সকালের শুরুটা কি ইনফ্লুয়েন্সারদের মতো হওয়া উচিত

ছয় ঘণ্টা ধরে দিনের শুরু না করলেও সুন্দরভাবে দিন শুরু করাটা জরুরি বলিই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তবে অনেকেই জানেন না, কিভাবে দিনের শুরু করা উচিত। চলুন জেনে নেওয়া যাক বিশেষজ্ঞরা কি বলেন-

কিভাবে একটি সুন্দর দিনের শুরু করা যায়?

>> ইংল্যান্ডের সাইকোথেরাপিস্ট, অর্থাৎ মানসিক রোগের চিকিৎসক, কামাল্যান কর বলেন, ‘দিনের শুরু ভালোভাবে করতে ডজনখানেক কাজ করার দরকার নেই। তবে সুস্থ, স্বাভাবিক ও গঠনমূলক একটি দিন পার করার জন্য সকালের কাজগুলো নিয়ে একটু ভেবে দেখা যেতেই পারে। যে কাজগুলো ব্যক্তির মন ভালো রাখতে সাহায্য করে, পাশাপাশি সারাদিনের জন্য শক্তি যোগায় – সেগুলো জানা দরকার।’

সকালের শুরুটা কি ইনফ্লুয়েন্সারদের মতো হওয়া উচিত

কামাল্যান বলেন, ‘আপনি যদি সকালটা ভালোভাবে শুরু করেন, আপনার সারাদিন ভালো কাটবে, আপনি গোছালোভাবে আপনার দিনটি কাটাতে পারবেন।’

>> মানুষের সারাদিনের বিভিন্ন কাজ ঠিক কিভাবে তাদের জীবনকে প্রভাবিত করে, এটি নিয়ে কয়েক বছর ধরে গবেষণা করছেন ওকলাহোমা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক শন ম্যাকক্লেইন।

তিনি প্রতিদিন সকালে রুটিনমাফিক একই ধরনের কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন। শন বলেন, মানুষ যদি প্রতিদিন সকালে একই ধরনের কাজ করেন, তাহলে ওই জরুরি কাজগুলো নিয়ে তাকে আর আলাদা করে চিন্তা করতে হয় না। এতে অন্য বিষয়ে চিন্তা করার জন্য মস্তিস্ক ফ্রেশ থাকে। সকালে রুটিন মাফিক কাজ করা এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক শর্টকার্ট।

সকালের শুরুটা কি ইনফ্লুয়েন্সারদের মতো হওয়া উচিত

তিনি বলেন, চিন্তা-ভাবনার ক্ষেত্রে মানুষ কিছুটা কৃপণ। মানুষের মস্তিস্ক সাধারণত অগুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে তেমন চিন্তাভাবনা করতে পছন্দ করে না।

শনের গবেষণার তথ্যমতে, যেসব মানুষ কোনোরকম বিঘ্ন ছাড়া দিনের শুরুটা করতে পারেন, তারা কর্মক্ষেত্রে শান্ত মেজাজে নিজেদের কাজগুলো করতে পারেন। অন্যদিকে যারা বিশৃঙ্খলভাবে দিনের শুরু করেন, তারা সারাদিন মানসিক ক্লান্তিতে ভোগেন।

সকালের রুটিনে কোন বিষয়গুলো থাকা ভালো?

>> শন বলেন, ‘প্রতিটি মানুষেরই কিছু না কিছু রুটিন থাকে। তবে খুব কম মানুষই সেটি ভেবেচিন্তে ঠিক করেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কাজ করতে করতে সেটিই রুটিন হয়ে যায়।’

সকালের শুরুটা কি ইনফ্লুয়েন্সারদের মতো হওয়া উচিত

ঠিক কোন কাজগুলো সকালে করা ভালো এটি নির্দিষ্টভাবে বলা কঠিন। কারণ একজনের জন্য যেটি কার্যকর সেটি আরেকজনের জন্য না-ও হতে পারে। তবে কিছু কাজ সবার ক্ষেত্রেই ক্ষতিকর।

>> কামাল্যান কর বলেন, সকালে তাড়াহুড়ো করে গোসল করা, খাওয়া কিংবা বাসা থেকে বের হওয়া ভালো না। এর ফলে মানুষের শরীর থেকে অতিরিক্ত কর্টিসোল হরমোন নিঃসরণ হয়। এই হরমোনটি মানুষের সার্কাডিয়ান রিদমের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সার্কাডিয়ান রিদম হলো দিনভর একটি মানুষের শরীর কিভাবে কাজ করবে, তা পরিচালনার জন্য একটি ঘড়ির মতো ব্যবস্থা। যেখানে মানুষের ঘুমিয়ে পড়া, জেগে ওঠা, শরীরের তাপমাত্রা থেকে শুরু করে মানসিক অবস্থা ও সব ধরনের ক্ষুধা নিয়ন্ত্রিত হয়।

কামাল্যান বলেন, এই সার্কাডিয়ান রিদমের কারণেই মানুষ সকালে জেগে ওঠে। তবে অতিমাত্রায় কর্টিসোল নিঃসৃত হলে সেটি মানুষের মধ্যে উদ্বিগ্নতা ও অস্বস্তি সৃষ্টি করে। খালি পেটে কফি খেলে শরীরের যে ক্ষতি হয়, এটাও ঠিক সেরকম।

সকালের শুরুটা কি ইনফ্লুয়েন্সারদের মতো হওয়া উচিত

সকালে যাদের এমন তাড়াহুড়ো হয়ে যায়, তাদের ৩০ মিনিটি আগে এলার্ম দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কামাল্যান। তবে এলার্ম দিয়ে আরেকটু ঘুমানোর জন্য ‘স্নুজ বাটন’ চাপা যাবেনা।

>> কামাল্যানের মতে সকালে উঠে এমন অন্তত দুই বা তিনটি কাজ করা উচিত, যা আপনার মন ভালো করতে সাহায্য করে। কারণ সকালে প্রথম যে কাজটা করা হয়, সেটি ভালো লাগলে ডোপামিন হরমোন নিঃসৃত করে।

>> এরপর এক গ্লাস পানি পান করুন। রাতভর ঘুমশেষে শরীর কিছুটা ডিহাইড্রেটেট হয়ে যায়, তাই পানি প্রয়োজন। পাশাপাশি নাস্তা না করা পর্যন্ত কফি জাতীয় কিছু না খাওয়া ভালো।

>> ঘুম থেকে ওঠার পর প্রাকৃতিক আলোতে কিছুটা হাঁটা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এমনকি মেঘলা আবহাওয়া হলেও এই হাঁটা সার্কাডিয়ান রিদমের জন্য ফলপ্রসূ।

সারাদিন ভালোভাবে চলার জন্য এই অভ্যাসগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর জন্য ফেসবুক-ইন্সটাগ্রামের কারও জীবন অনুসরণ না করলেও চলে।

সূত্র: ইউএনবি

এএমপি/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।