৫০-এও ফিটনেসে ফাটাফাটি, কীভাবে এত টনটনে থাকেন শিল্পা শেঠি?

বয়স ৫০ ছুঁয়েছে, কিন্তু চেহারায় কিংবা মুভমেন্টে তার লেশমাত্র নেই। যেন সময়কে থামিয়ে দিয়েছেন নিজের শরীর আর মানসিক অনুশীলনে। তিনি শিল্পা শেঠি বলিউডের ‘যোগা কুইন’, যিনি শুধু সিনেমায় নয়, ফিটনেস দুনিয়াতেও অনুপ্রেরণার প্রতীক। ১৯৭৫ সালের ৮ জুন জন্ম নেওয়া এই বলিউড অভিনেত্রী আজও ফিটনেস, সৌন্দর্য আর আত্মবিশ্বাসের জীবন্ত প্রতীক। অর্ধশত বছর পেরিয়েও তিনি একদম টনটনে, প্রাণবন্ত, উদ্যমী; যার কাছে বয়স হার মানে।
ইনস্টাগ্রামে এক ঝলক দেখলেই বোঝা যায়, আজও কীভাবে দুর্দান্ত শারীরিক ফর্ম ধরে রেখেছেন তিনি। সকালবেলার রুটিন থেকে শুরু করে খাবারে পরিমিতিবোধ, সবকিছুতেই আছে এক ধরণের ডিসিপ্লিন। বয়স তার কাছে যেন কেবলই একটি সংখ্যা, নিজেকে তরুণ রাখতে কী করেন তিনি? এই নিয়েই আজকের আলাপ।
১৯৯৩ সালে ‘বাজিগর’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে অভিষেক ঘটে শিল্পা শেঠির। শাহরুখ খানের বিপরীতে অভিনয়ের পরপরই নজর কাড়েন সুন্দর মুখাবয়ব, লম্বা গড়ন আর দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে। তারপর একে একে ‘ম্যায় খিলাড়ি তু আনাড়ি, ‘ধাড়কান’, ‘ফের মিলেঙ্গে’, ‘লাইফ ইন এ মেট্রো’সহ একাধিক সিনেমায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন বলিউডের প্রথম সারির নায়িকাদের একজন হিসেবে।
২০০৭ সালে ব্রিটেনের ‘বিগ ব্রাদার’ রিয়্যালিটি শোতে অংশ নিয়ে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসেন শিল্পা। সেখানে বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে তার দৃঢ় অবস্থান বিশ্বজুড়ে প্রশংসা কুড়ায়।
বর্তমানে চলচ্চিত্রে নিয়মিত না থাকলেও নিজেকে তিনি নিয়মিত রেখেছেন ফিটনেস ট্র্যাকেই। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও সিরিয়াস হয়েছেন শরীর আর মনের যত্নে। ২০০৮ সালের দিকে যোগা ও ওয়েলনেস নিয়ে সিরিয়াসলি কাজ শুরু করেন। ভারতীয় গণমাধ্যম টাইমস অফ ইন্ডিয়ার এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘ফিটনেস আমার কাছে শুধু শরীর গঠনের ব্যাপার নয়, এটা আত্মার সঙ্গেও সম্পর্কিত।’
- আরও পড়ুন:
মা হয়েছেন কিয়ারা, জানেন কি নবজাতকের যত্নে কী করণীয়?
সোশ্যাল মিডিয়ার নতুন ফ্যাশন সেনসেশন রাশা থাডানি
হালকা সাজে ভারী ছাপ, মেহজাবীনের ভেনিস ভ্রমণ লুক
শিল্পার জীবনের সবচেয়ে বড় মোড় এসেছে যোগা চর্চার মাধ্যমে। প্রায় দুই দশক ধরে তিনি নিয়মিত যোগা করছেন। তার মতে, যোগা তাকে শারীরিকভাবে ফিট রাখে, মানসিকভাবে স্থির রাখে, আর আত্মবিশ্বাস জোগায়। তিনি ‘শিল্পাস ইয়োগা’ নামে একটি ডিভিডিও প্রকাশ করেন ২০০৮ সালে, যা তুমুল জনপ্রিয়তা পায় ভারত ও দেশের বাইরে।
বর্তমানে তিনি প্রতি সপ্তাহে ইনস্টাগ্রামে নতুন নতুন যোগাসন দেখান তার লাখ লাখ ফলোয়ারকে। যেমন- চক্রাসন, ভুজঙ্গাসন, নৌকাসন, উত্তনপাদাসন। এই যোগাসনগুলো শুধুই ফিটনেসের জন্য নয় বরং হজমশক্তি বাড়ানো, স্ট্রেস কমানো এবং ঘুম ভালো করাতেও কার্যকর।
শিল্পা বিশ্বাস করেন ‘৮০ ভাগ নিউট্রিশন, ২০ ভাগ এক্সারসাইজ’ সুস্থ থাকার মূল চাবিকাঠি। তার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় থাকে- সকালের শুরুতে গরম পানি ও লেবু, প্রোটিনসমৃদ্ধ নাশতা (ওটস, দই, বাদাম), দুপুরে হালকা লাঞ্চ, সবজি ও ডাল, বিকেলে হালকা স্ন্যাকস (গ্রিন টি, ফ্রুটস), রাতে অল্প পরিমাণে কার্ব, স্যুপ বা স্যালাড।
ফ্যামিনা ম্যাগাজিনের এক সাক্ষাৎকারে শিল্পা বলেছিলেন, ‘আমি খাদ্য বেছে খাই, খাবারকে ভয় করি না। ফ্রাইড বা ফাস্ট ফুড সপ্তাহে একবার হলেও খাই, কিন্তু ব্যালান্স রেখে।’
শিল্পার মতে, সুস্থ থাকতে শুধু শরীর নয়, মনও চাই শান্ত ও ভারসাম্যপূর্ণ। স্বামী রাজ কুন্দ্রা ও দুই সন্তানকে নিয়ে শিল্পা শেট্টির পারিবারিক জীবনও বেশ পরিপাটি। তারা একসঙ্গে মেডিটেশন করেন, নিয়মিত সময় কাটান প্রাকৃতিক পরিবেশে। তিনি বলেন, মন ভালো থাকলে শরীর আপনাআপনি ভালো থাকে। তাই হাসি, ঘুম আর প্রিয়জনদের সঙ্গে সময় কাটানো এগুলোই সবচেয়ে বড় ওষুধ।
বর্তমানে শিল্পার ইনস্টাগ্রামে প্রায় ৩৩ কোটি অনুসারী। সেখানে তিনি নিয়মিত ফিটনেস টিপস, হেলদি রেসিপি, যোগাসন এবং জীবনদর্শন শেয়ার করেন তিনি।
- আরও পড়ুন:
কারিনার রূপ রহস্য থেকে প্রিয়াঙ্কার দীপ্তি, সব একচিমটি হলুদের জাদু
বর্ষার দিনে মেকআপে চাই স্নিগ্ধতা আর স্থায়িত্ব
শিল্পা শেট্টির জীবনযাপন থেকে আমাদের নারীরা যা শিখতে পারেন-
>> বয়সকে ভয় নয়, বরং সম্মান করা
>> স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া
>> প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট শরীরচর্চা
>> খাদ্যাভ্যাসে সচেতনতা
>> মানসিক প্রশান্তির দিকে গুরুত্ব
>> ঘুম ও স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টের গুরুত্ব
>> পরিবার ও ক্যারিয়ারের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা
শিল্পা শেঠি প্রমাণ করেছেন যে ফিটনেস, সৌন্দর্য ও শক্তি কেবল বয়সের বিষয় নয়-এটা জীবনযাপন আর মানসিকতার ফল। যারা ভাবেন, এই বয়সে আর কী? তাদের জন্য শিল্পা এক জীবন্ত জবাব। এই বয়সেই সবকিছু সম্ভব, যদি আপনি চান।
জেএস/জেআইএম