অ্যালঝাইমার্স রোগ কাদের হয়

লাইফস্টাইল ডেস্ক
লাইফস্টাইল ডেস্ক লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:৫০ পিএম, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
এআই

অ্যালঝাইমার্স রোগ হলো একটি দীর্ঘমেয়াদি স্নায়ুবিক অবক্ষয়জনিত রোগ, যা ধীরে ধীরে স্মৃতিশক্তি, চিন্তাশক্তি ও দৈনন্দিন কাজকর্মকে প্রভাবিত করে। এটি বিশ্বব্যাপী দ্রুত বর্ধনশীল স্নায়ুবিক রোগগুলোর মধ্যে একটি।

পরিসংখ্যান বলছে, শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর এই রোগে ৫০ লাখ (৫ মিলিয়ন) মানুষ আক্রান্ত হন। আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের মতে, ২০৬০ সালের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেড়ে যেতে পারে। এছাড়া সারাবিশ্বে প্রতি ৬৮ সেকেন্ডে একজন মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়।

এ বিষয়গুলো মাথায় রেখে, অ্যালঝাইমার্স রোগ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে প্রতি বছর ২১ সেপ্টেম্বর ‘বিশ্ব অ্যালঝাইমার্স দিবস’ পালিত হয়। এ বছরের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে-‘ডিমেনশিয়া সম্পর্কে প্রশ্ন করুন, অ্যালঝাইমার্স সম্পর্কে প্রশ্ন করুন।’

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, এই রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়লে মানুষ নিরাপদে থাকতে পারে। আসুন এই রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই-

অ্যালঝাইমার্স কী?
অ্যালঝাইমার্স বা ডিমেনশিয়া হলো এমন একটি রোগ, যেখানে মস্তিষ্কের কোষ বা নিউরন ধীরে ধীরে নষ্ট হতে থাকে। এর জেরে চিন্তাভাবনা করার ক্ষমতা এবং মনে রাখার ক্ষমতা লোপ পেতে থাকে। এটি মানুষের মস্তিষ্কের ক্ষয়জনিত রোগ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্রেনের আরও অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে।

অ্যালঝাইমার্স কেন হয়
অ্যালঝাইমার্স বংশগত বা জেনেটিক্স কারণে হতে পারে। কিছু মানুষের নির্দিষ্ট ধরনের বংশগত গাঠনিক প্রক্রিয়ার কারণে ডিমেনশিয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। এছাড়া মস্তিষ্কের নানা রোগ, শরীরে ভিটামিন বা খনিজ উপাদানের ঘাটতি, মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল কমে যাওয়া, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, থাইরয়েড, অতীতের কোনো ট্রমা, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের কারণে হতে পারে।

এই রোগের লক্ষণ
১. অ্যালঝাইমার্সের অন্যতম লক্ষণ হলো কোনো কিছু মনে রাখতে না পারা বা চিনতে না পারা।
২. মনের ভাব প্রকাশ করতে গিয়ে সঠিক শব্দ খুঁজে না পাওয়া।
৩. একই প্রশ্ন বারবার জিজ্ঞাসা করা কিংবা একই কথা বহুবার বলা।
৪. নিজের প্রয়োজনীয় জিনিস কোথায় রাখা হয়েছে, তা ভুলে যাওয়া বা এক স্থানে রেখে অন্যত্র খোঁজা।
৫. এছাড়া বারবার বাতি জ্বালানো, টিভি চালানো এবং সাধারণ হাটবাজারের হিসাবনিকাশ করতে না পারা।
৬. পরিচিতদের নাম ভুলে যাওয়া এবং পরিচিত স্থান চিনতে না পারা। রাস্তা হারিয়ে অন্যখানে চলে যাওয়া, বাড়ির রাস্তা খুঁজে না পাওয়া। বারবার রাস্তা ভুলে যাওয়া।
৭.সামাজিকভাবে নিজেকে গুটিয়ে ফেলা, ঘুমের সমস্যা, কিছু চুরি হয়ে গেছে বলে ধারণা করা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়।
৮. অতিরিক্ত উদ্বেগ, কখনো অতিরিক্ত রাগ বা ক্রুদ্ধ ভাব, মুড ও ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন পরিলক্ষিত হওয়া।

অ্যালঝাইমার্স কাদের হতে পারে
অ্যালঝাইমার্স সাধারণত ৬০ থেকে ৮৫ বছর বয়সে মানুষের মাঝে হয়ে থাকে। পুরুষ বা নারী যে কেউ অ্যালঝাইমার্সে আক্রন্ত হতে পারে। তবে কম বয়সে যে অ্যালঝাইমার্স হয় না, এমন সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ৩০ বছরের আগেও কেউ কেউ অ্যালঝাইমার্সে আক্রান্ত হতে পারেন।

অ্যালঝাইমার্সের চিকিৎসা কী?
অ্যালঝাইমার্স রোগ নিরাময়ের এখনো কোনো উপায় নেই। তবে চিকিৎসকেরা নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ ও পরামর্শ দিয়ে থাকেন, যাতে আচরণগত সমস্যাগুলো কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। নিয়মিত খেলেই রোগী দীর্ঘদিন ভালো থাকেন। এর মাধ্যমে আক্রান্ত ব্যক্তির জীবনমান উন্নত করা সম্ভব। তাই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির প্রতি সহানুভূতিশীল আচরণ করতে হবে এবং যত্ন নিতে হবে। কারণ তারা নিজেদের যত্ন নিতেও ভুলে যান। কোনোভাবেই তাদের প্রতি অবহেলা করা যাবে না।

এই রোগ ঠেকাতে
স্বাস্থ্যকর খাবার ও জীবনযাপন পদ্ধতি অ্যালঝাইমার্স থেকে রক্ষা করে। বিশেষ করে নিয়মিত ব্যায়াম, সচল জীবনযাপন, ধূমপান বর্জন এবং চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করা উচিত।

সূত্র: দ্য ইকোনমিক টাইমস, মায়ো ক্লিনিক, অ্যালঝাইমার্স রিসার্চ ইউকে

আরও পড়ুন:
ঘুমানোর আগে ধূমপানে বাড়ছে অনিদ্রা ও হৃদরোগের ঝুঁকি
ডেঙ্গু নাকি চিকুনগুনিয়া, কীভাবে বুঝবেন

এসএকেওয়াই/কেএসকে/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।