নাস্তায় শর্করা খেতে হবে ডিম ও সবজির পরে

লাইফস্টাইল ডেস্ক
লাইফস্টাইল ডেস্ক লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:১৫ পিএম, ১৬ নভেম্বর ২০২৫
`বিস্কুট, পাউরুটি বা মুড়ি দিয়ে দিয়ে সকাল শুরু করবেন না।’ ছবি/জাগো নিউজ

সানজানা রহমান যুথী

রাতে খাওয়ার পর আমাদের দীর্ঘ সময় পেট খালি থাকে। তাই সকালের নাস্তা হওয়া চাই স্বাস্থ্যসম্মত ও পুষ্টিকর। কিন্তু আমরা অনেকেই সকালের নাস্তা সম্পর্কে সচেতন নই।

অনেকে আবার বুঝতে পারেন না সকালের জন্য উপযুক্ত খাবার কোনগুলো। তাই সকালের নাস্তায় কি খাওয়া উচিত এ সম্পর্কে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন ফরাজী হাসপাতালের নিউট্রিশনিস্ট অ্যান্ড লাইফস্টাইল স্পেশালিস্ট বর্ণালী মোস্তফা মুনা।

জাগো নিউজ: সকালের নাস্তায় কোন কোন খাবার শরীরের জন্য সবচেয়ে পুষ্টিকর?

বর্ণালী মোস্তফা মুনা: সকালের নাস্তা এমন হওয়া উচিত যা রক্তের শর্করার মাত্রা স্থির রাখে, সুগার আর ইনসুলিন হুট করে বাড়ায় না, আর সারাদিন এনার্জির লেভেল ঠিক রাখে। তাই রিফাইন্ড শর্করা বা প্রসেসড খাবার বাদ দিয়ে ডিম, দেশি ঘি, মাছ/মাংস, সবজি, বাদাম, ছোলা, চিয়াসিড এগুলো খেতে পারেন।

আর ডিম নিয়ে প্রচুর ভুল ধারণা আছে। বেশিরভাগ মানুষ এখনও ভাবেন ডিম কলেস্টরেল বাড়ায়। অথচ বর্তমান গবেষণা বলছে, এটা পুরোপুরিই একটা মিথ।

জাগো নিউজ: সকালে বা খালি পেটে কী খাওয়া উচিত এবং কী খাওয়া উচিত নয়?

বর্ণালী মোস্তফা মুনা: খালি পেটে যেহেতু আমাদের হজমটা দীর্ঘ সময় ইনেক্টিভ থাকে তাই শুরুতে লিকুইড বা সেমি লিকুইড কিছু দিয়ে শুরু করা ভালো। হজম প্রক্রিয়া কে সক্রিয় করার জন্য কুসুম গরম পানি, লেবু–জিরা পানি ভালো কাজ করে। তবে লেবু পানিতে যাদের এসিডিটি হয় তারা খাবেন না।

এছাড়া ভেজিটেবল স্যুপ, চিকেন স্যুপ বা স্টক এগুলো খাওয়া যেতে পারে। খালি পেটে চা বা কফি খেলে অনেকের অ্যাসিডিটি বাড়ে। সেক্ষেত্রে না খাওয়াই ভালো।

আর বিস্কুট - পাউরুটি - মুড়ি এগুলো তো সরাসরি রিফাইন্ড শর্করা। সকালের শুরুতেই তাই এগুলো বাদ দেয়া ভালো।

জাগো নিউজ: ওজন কমাতে চাইলে সকালের নাস্তায় কী পরিবর্তন আনা উচিত?

বর্ণালী মোস্তফা মুনা: ওজন কমাতে চাইলে প্রথমে ব্রেড, পরোটা, সুজি, আলু ভাজি বাদ দিতে হবে। এগুলো খেয়েই দিনের প্রথম ব্লাড সুগার স্পাইক হয়। তাই ওজন কমাতে চাইলে খাটিঁ ঘিয়ে ভাজা ডিম, মাছ বা মাংস, সবজি ভালো। শর্করা হিসেবে ছোলা, কাবলি বুট বা মিষ্টি আলু রাখা যেতে পারে তবে এগুলো খেতে হবে সবজি ও ডিম, অর্থাৎ বাকি খাবারগুলো খাওয়ার পরে।

জাগো নিউজ: ডায়াবেটিস বা থাইরয়েড রোগীদের জন্য সকালের ডায়েট কেমন হওয়া উচিত?

বর্ণালী মোস্তফা মুনা: যাদের ডায়াবেটিস বা থাইরয়েড আছে তাদের নাস্তায় শর্করা যত কম, তত ভালো। এক্ষেত্রে সেরা অপশন হলো – ডিম অথবা মাছ-মাংস এবং বাদাম বা সবজি।

পরোটা-রুটি এগুলো প্রথমেই বাদ দিতে হবে। এগুলো গ্লুকোজ খুব দ্রুত বাড়ায় যার ফলে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স আরও খারাপ হয়। তবে যারা ইনসুলিন বা মেডিসিন নেন তারা তাদের পুষ্টিবিদ এর পরামর্শ নিয়ে খাবার সাজালে ভালো।

জাগো নিউজ: সকালে চা বা কফির সঠিক সময় কখন?

বর্ণালী মোস্তফা মুনা: চা–কফি পান করতে হলে নাস্তা খাওয়ার ৩০–৪৫ মিনিট পরে খাওয়া ভালো। খালি পেটে নিলে অনেকের কর্টিসল বেড়ে গিয়ে সারা দিনের মুড, এনার্জি আর হরমোনাল ব্যালান্সে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, তবে সবার নয়।

আর চা বা কফি অবশ্যই দুধ - চিনি ছাড়া খাওয়া ভালো। চাইলে সামান্য পিঙ্ক সল্ট দিয়ে খাওয়া যেতে পারে।

বর্ণালী মোস্তফা মুনা: সকালে ফল খাওয়া কি ভালো? খেলে কোনগুলো ভালো?

সকালে কম সুগার আছে এমন ফল খাওয়া ভালো - যেমন পেয়ারা, আপেল, বেরি জাতীয় ফল। তবে খালি পেটে নয়। বাংলাদেশে অনেকেই সকালে কলা খান। তবে কলা ইনসুলিন স্পাইক করে, অনেকের গ্যাস ও হয়। যারা সুগার বা ওজন নিয়ে চিন্তিত তাদের জন্য কলা খুব ভালো নয়।

জাগো নিউজ: যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন তাদের নাস্তা কেমন হওয়া উচিত?

বর্ণালী মোস্তফা মুনা: ব্যায়ামের পর শরীর প্রথমেই চায় প্রোটিন আর গুড ফ্যাট। তাই ডিম, মাছ - মাংস, দই, সবজি, বাদাম খাওয়া ভালো। প্রসেসড প্রোটিন বার, কর্ণফ্লেক্স বা চিনিযুক্ত খাবার অবশ্যই পরিহার করা উচিত।

জাগো নিউজ: সকালে নাস্তা না খেলে কী নেতিবাচক প্রভাব পড়ে?

বর্ণালী মোস্তফা মুনা: এটা পুরোপুরি নির্ভর করে শরীরের কন্ডিশন এর ওপর। অনেকের জন্য ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং অত্যন্ত উপকারী। তাদের জন্য নাস্তা অনেক সময় এড়িয়ে চলা প্রয়োজন হয়।

তবে যাদের দুর্বল লাগে, হাইপোগ্লাইসেমিক হয়ে যান, তবে কিডনি রোগের পেশেন্ট বা গর্ভবতী নারীদের নাস্তা বাদ না দেওয়াই ভালো।

এএমপি/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।