বাড়িতে মাইক্রোগ্রিনস চাষ করবেন যেভাবে
ভেজানো ছোলা বা মুগের তুলনায় অঙ্কুরিত ছোলা-মুগ যে বেশি পুষ্টিগুণে ভরপুর, তা এখন আর অজানা নয়। তাই দীর্ঘদিন ধরেই স্বাস্থ্যসচেতন মানুষ অঙ্কুরিত খাবারকে ডায়েটে রাখছেন। তবে স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিয়ে চর্চা যত বেড়েছে, ততই খাদ্যাভ্যাসে এসেছে নতুন ধারণা। সেই নতুন ধারার নাম মাইক্রোগ্রিন-স্মার্ট কৃষির এক আধুনিক রূপ।
ভেজানো চিয়াবীজ যে উপকারী, তা অনেকেই জানেন। তবে পুষ্টিবিদদের মতে, চিয়াবীজ অঙ্কুরিত হয়ে ছোট গাছের আকার নিলে তার পুষ্টিগুণ আরও অনেক বেড়ে যায়। অঙ্কুরোদগমের ফলে চিয়া মাইক্রোগ্রিনে ভিটামিন সি-এর মাত্রা প্রায় ১৭ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি আয়রন, জিঙ্ক ও ক্যালসিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজ শরীরে শোষণ করতেও এটি বেশি সহায়ক।

মাইক্রোগ্রিন কী
‘মাইক্রো’ বলতে বোঝানো হচ্ছে ছোট, আর ‘গ্রিন’ বলতে গাছ। অর্থাৎ ট্রেতে ছোট চারাগাছই হলো মাইক্রোগ্রিন। সাধারণত এক থেকে দুই সপ্তাহ বয়সেই এই চারাগুলো কাঁচা খাওয়ার উপযোগী হয়ে ওঠে। মাইক্রোগ্রিন চাষের মূল উদ্দেশ্য ভরপেট খাওয়া নয়, বরং অল্প পরিমাণে শরীরের প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজের ঘাটতি পূরণ করা।
সব ধরনের সবজি দিয়ে মাইক্রোগ্রিন তৈরি করা যায় না। যেসব শাক বা সবজি একেবারে চারা অবস্থায় কাঁচা খাওয়া যায়, সেসবের বীজই মূলত মাইক্রোগ্রিন চাষে ব্যবহার করা হয়। মুগ, সরিষা, চিয়া, মেথি-এই সব বীজ অঙ্কুরিত হয়ে যে কচি চারা বের হয়, সেই চারাগুলোই এখন স্বাস্থ্যসচেতন মানুষের ডায়েটে জায়গা করে নিয়েছে।
আসুন জেনে নেওয়া যাক বাড়িতে মাইক্রোগ্রিন কীভাবে করবেন-
১. প্রথমে পছন্দের বীজ ৫-৮ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। এতে বীজ নরম হয় এবং অঙ্কুরোদগম দ্রুত ঘটে।
২. একটি ছিদ্রযুক্ত ট্রে বা ছাঁকনি নিন। ছিদ্র যদি বড় হয়, তবে তার ওপর পাতলা সুতির কাপড় বা টিস্যু পেপার বিছিয়ে নিন। এরপর ভেজানো বীজগুলো সমানভাবে ছড়িয়ে দিন। খেয়াল রাখবেন বীজ যেন একটির উপর আরেকটি না পড়ে এবং খুব ঘেঁষাঘেঁষি করে না থাকে।
৩. ছিদ্রযুক্ত ট্রের নিচে একটি নিরেট পাত্র রাখুন। নিচের পাত্রে এমনভাবে পানি দিন, যাতে উপরের ট্রের তলায় সামান্য আর্দ্রতা থাকে। বীজ যেন পানিতে ডুবে না যায়, শুধু ভেজা পরিবেশে থাকে।
৪. প্রথম ২-৩ দিন ট্রেটি এমন জায়গায় রাখুন, যেখানে সরাসরি রোদ পড়ে না। দিনে দু’বার স্প্রে বোতল দিয়ে উপর থেকে হালকা পানি ছিটিয়ে দিন, যাতে বীজ শুকিয়ে না যায়।
৫. ছোট চারা গজিয়ে যখন ১-২ ইঞ্চি লম্বা হয়ে পাতা রেব হবে, তখন ঢাকনা বা আড়াল সরিয়ে দিন। এবার ট্রেটি জানালার পাশে বা এমন জায়গায় রাখুন, যেখানে আলো থাকবে কিন্তু সরাসরি রোদ পড়বে না। এতে চারাগুলো সবুজ ও সতেজ থাকবে।

৬. নিচের পাত্রের পানি প্রতিদিন বা একদিন পরপর পরিবর্তন করে ফেলুন। যদি পানি ঘোলা হয়ে যায় বা পচা গন্ধ বের হয়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে পানি পরিবর্তন করুন। না হলে শিকড়ে পচন ধরতে পারে।
৭. সাধারণত ৫-৭ দিনের মধ্যেই মাইক্রোগ্রিন খাওয়ার উপযোগী হয়ে যায়। যখন চারাগুলো ২-৩ ইঞ্চি লম্বা হবে এবং দুটি সুন্দর পাতা বের হবে তখন কাঁচি দিয়ে শিকড়ের ঠিক ওপর থেকে কেটে নিন।
মাইক্রোগ্রিন সাধারণত সালাদে, স্যান্ডউইচে কিংবা স্যুপের ওপর ছড়িয়ে খাওয়া যায়। অল্প পরিমাণেই এতে প্রচুর ভিটামিন ও খনিজ পাওয়া যায়। অনেক ক্ষেত্রে অঙ্কুরিত বীজের তুলনায়ও মাইক্রোগ্রিনে পুষ্টিগুণ বেশি থাকে, যা স্বাস্থ্যকর খাদ্যতালিকার গুরুত্বপূর্ণ অংশ করে তোলে।
জরুরি বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন-
চারাগুলোর সুস্থ বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল অত্যন্ত জরুরি। বাতাস ঠিকমতো না পেলে চারার গায়ে সহজেই ছত্রাক জন্মাতে পারে, যা মাইক্রোগ্রিন নষ্ট করে দিতে পারে।
মাইক্রোগ্রিন কখনোই কড়া বা সরাসরি রোদে রাখা উচিত নয়। অতিরিক্ত রোদে চারাগুলো দ্রুত শুকিয়ে যেতে পারে এবং সতেজতা নষ্ট হয়। তাই আলো থাকবে, কিন্তু রোদ সরাসরি পড়বে না, এমন জায়গা রাখা উচিত।
সূত্র: বিবিসি, ফুড গার্ডেন লাইফ, সিম্পলি লিভিং ওয়েল
আরও পড়ুন:
দীর্ঘদিন ভেজাল খাবার খেলে শরীরে কী ঘটে
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় পেঁয়াজ পাতা
এসএকেওয়াই/