৪০ বছরের পর নারীরা কিডনি রোগে কেন বেশি ভোগেন
বেশিরভাগ নারী কমবেশি নিজেদের স্বাস্থ্যের বিষয়ে উদাসীন। কিডনির রোগ ধীরে ধীরে শরীরে প্রভাব ফেলে। পা ফুলে যাওয়া, অস্বাভাবিক ক্লান্তি বা ক্ষুধামান্দ্যের মতো উপসর্গ অনেক সময়ই অবহেলিত থেকে যায়। ফলে রোগ ধরা পড়তে দেরি হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, ৪০ বছরের পর নারীদের মধ্যে কিডনি রোগের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়।
সম্প্রতি আমেরিকান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ডায়াবিটিস অ্যান্ড কিডনি ডিজিজ এ প্রকাশিত এক সমীক্ষায় জানানো হয়েছে, বয়স ৪০-এর পর নারীদের কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বাড়ে। এর অন্যতম কারণ-নিজেদের স্বাস্থ্যকে উপসর্গ উপেক্ষা করা। তবে সচেতন হলে অনেক ক্ষেত্রেই কিডনির দীর্ঘমেয়াদি রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের একটি গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি আর্থ-সামাজিক কারণেও নারীরা কিডনি রোগে বেশি আক্রান্ত হন। অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটসের বড় কারণ। অনেক সময় এসব রোগ আছে কি না, তা রোগী নিজেই জানেন না। ধরা পড়ার সময় কিডনিসহ শরীরের অন্যান্য অঙ্গের ক্ষতি শুরু হয়ে যায়। তাছাড়া অসুস্থ না হলে অনেক নারী চিকিৎসকের কাছে যেতে চান না-এ কারণেও ঝুঁকি বাড়ে।
এছাড়া লুপাস নেফ্রাইটিস নামে এক ধরনের অটোইমিউন রোগ এবং মূত্রনালির সংক্রমণ (ইউটিআই) নারীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। এগুলো থেকেই ক্রনিক কিডনি রোগের আশঙ্কা বাড়ে।

যে পাঁচটি অভ্যাস কিডনি বিকল করে দিতে পারে-
১. পানি কম পান করা
বাড়ির কাজ বা বাইরে যাতায়াতের সময় শৌচাগার ব্যবহারের অসুবিধার কথা ভেবে অনেক নারী পানি কম পান করেন। দীর্ঘদিন শরীরে পানির ঘাটতি থাকলে কিডনি ঠিকভাবে টক্সিন বের করতে পারে না। ফলে সংক্রমণ ও কিডনিতে পাথর জমার ঝুঁকি বাড়ে।
২. ঘন ঘন ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়া
চল্লিশের পর হরমোনজনিত কারণে হাঁটু ও কোমরের ব্যথা বাড়ে। ব্যথা হলেই নিয়মিত ব্যথানাশক খাওয়ার অভ্যাস কিডনির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এসব ওষুধ কিডনিতে রক্ত চলাচল কমিয়ে দেয়।
৩. প্রস্রাব চেপে রাখা
দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব চেপে রাখলে মূত্রথলি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। অনেক নারী পাবলিক টয়লেট ব্যবহার এড়িয়ে চলেন। এতে মূত্রনালির সংক্রমণ দ্রুত কিডনিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
৪. কাঁচা লবণ খাওয়ার অভ্যাস
অতিরিক্ত লবণ রক্তচাপ বাড়ায়। উচ্চ রক্তচাপ কিডনির সূক্ষ্ম রক্তনালিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত করে।
আরও পড়ুন:
২১ দিনের ড্রিংক চ্যালেঞ্জে নেহা ধুপিয়ার চমকপ্রদ পরিবর্তন
দুপুরে খাবারের পর চা পান করা কতটা স্বাস্থ্যকর
৫. চিনি ও মিষ্টির প্রতি আসক্তি
চিনি ও মিষ্টিজাতীয় খাবার বেশি খেলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে গেলে কিডনির কোষ ধীরে ধীরে নষ্ট হতে থাকে।
কিডনির সমস্যা শুরু হলে কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে-
রাতে বারবার প্রস্রাবের বেগ, অতিরিক্ত ক্লান্তি, ক্ষুধা কম লাগা, বমি ভাব ও রক্তচাপের ওঠানামা। এসব লক্ষণ দেখা দিলে সতর্ক হতে হবে।

কিডনি সুস্থ রাখতে যা করবেন-
১. প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের কাছ থেকে নিজের জন্য উপযুক্ত পরিমাণ জেনে নিন।
২. মিষ্টিজাতীয় খাবার, কার্বোনেটেড পানীয়, প্রক্রিয়াজাত ও প্যাকেটজাত খাবার এড়িয়ে চলুন।
৩. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রতিদিন অন্তত ২০ মিনিট শরীরচর্চা করুন।
৪. রাতে পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন। কিন্তু অনেক নারীই অফিসের কাজ বা সংসারের অতিরিক্ত দায়দায়িত্ব সামলাতে গিয়ে রাতে প্রয়োজনের তুলনায় কম ঘুমান। দীর্ঘদিন ঘুমের অভাব হলে শরীর ঠিকভাবে বিশ্রাম পায় না, ফলে কিডনির উপর বাড়তি চাপ পড়ে। ফলে ধীরে ধীরে কিডনির কার্যক্ষমতা কমে যাওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
৫. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন। যাদের ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ আছে, তাদের বছরে অন্তত একবার ইউরিন টেস্ট, ইউরিয়া, ক্রিয়েটিনিন ও অ্যালবুমিন পরীক্ষা করানো জরুরি।
সচেতনতা ও সময়মতো চিকিৎসাই কিডনি সুস্থ রাখার সবচেয়ে বড় চাবিকাঠি।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, আমেরিকান ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিন
এসএকেওয়াই/