বিশ্ব শিক্ষক দিবস
পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও বোঝাপড়ায় গড়ে উঠুক শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক
বাবা-মায়ের সঙ্গে সন্তানের যেমন নাড়ির সম্পর্ক, তেমনি শিক্ষকের সঙ্গে ছাত্রেরও আত্মার সম্পর্ক। এই সম্পর্কে থাকে ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, স্নেহ ও শাসন। একজন ছাত্রের ভালো লেখাপড়ার পেছনে শিক্ষকের গুরুত্ব অনেক। তিনি মূলত পথনির্দেশক হিসেবে কাজ করেন।
আজ থেকে ৩০ বছর আগে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক ছিল গুরু শিষ্যের। শিষ্য যে ভক্তি নিয়ে গুরুকে সমীহ করতেন, শিক্ষকরাও সেই মর্যাদাকে ধরে রাখতে নিজেদের সেই উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার মতো করেই পড়াশোনা করতেন, আদর্শবান হতেন। কিন্তু বর্তমানে শিক্ষক- শিক্ষার্থীর সম্পর্ক আগের মতো নেই, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও সহযোগিতার চেয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থ, কৃত্রিমতা ও সম্মানহানি বেশি দেখা যায়, যা শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করছে। কিন্তু শিক্ষক-শিক্ষার্থীর পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও বোঝাপড়ায় গড়ে উঠতে পারে সুন্দর একটি সম্পর্ক।
আজ (৫ অক্টোবর) বিশ্ব শিক্ষক দিবস। আসুন জেনে নেওয়া যাক কীভাবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক সুন্দর হবে-
- ১. আস্থা ও বিশ্বাসের সম্পর্ক
আদর্শ শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্কে পারস্পরিক আস্থা, বিশ্বাস থাকতে হবে। শিক্ষার্থী নিজের সমস্যা বা জিজ্ঞাসা খোলামেলাভাবে বলতে পারে এমন পরিবেশ তৈরি করলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে ভরসার জায়গা তৈরি হবে। তারা একে অপরেরকে বিশ্বাস করবে।

- ২. বন্ধুর মতো
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে সম্পর্ক হবে বন্ধুর মতো। প্রত্যেক শিক্ষককে শিক্ষার্থীদের ক্লাসের বাইরে কিংবা একাডেমিক কাজ ছাড়াও কথা বলার সময় দিতে হবে। শিক্ষক যদি শিক্ষার্থীদের সময় দেন, তাহলে শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ায় ভালো হয়ে উঠবে। শিক্ষার্থীদের কাছে শিক্ষকরা শুধু শিক্ষক নয় অনেকটা গাইড, ফিলোসফারের মতো। কারণ, বাংলাদেশের বাস্তবতায় সব শিক্ষার্থী শিক্ষিত পরিবার থেকে আসে না। তাদের কাছে শিক্ষকরাই হন সবচেয়ে কাছের মানুষ।
- ৩. পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ
ছাত্র-শিক্ষকের পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সম্পর্ক হাজার বছর ধরে চলে আসছে। শুধু শিক্ষা কিংবা জ্ঞানার্জন নয়, একজন শিক্ষার্থীর দুর্দিনে ছায়ার মতো পাশে দাঁড়ান একজন শিক্ষক। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে সুন্দর বন্ধন থাকলে পারস্পরিক স্নেহ, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা গড়ে ওঠবে, যা শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ককে এক শক্ত গাঁথুনিতে রূপান্তরিত করবে।
- ৪. ধৈর্য ও সহনশীলতা
ছাত্র ভুল করলে রাগ নয়, ধৈর্যের সঙ্গে বুঝিয়ে শেখানো একজন ভালো শিক্ষকের গুণ। শেখার সময়ে শিক্ষককে সহযোগিতা করা এবং শেখার ক্ষেত্রে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করাও শিক্ষার্থীর কাজ।
- ৫. উদ্দীপনা ও প্রেরণা দেওয়া
শিক্ষককে এমন হতে হবে যিনি ছাত্রদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ও শেখার আগ্রহ জাগিয়ে তুলতে পারেন। অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা ও তাদের শিক্ষককে ভালোবেসে সবকিছু গ্রহণ করবে।

- ৬. ন্যায়নিষ্ঠ ও নিরপেক্ষ আচরণ
সব শিক্ষার্থীর সঙ্গে শিক্ষকের সমান আচরণ করা উচিত, কোনো পক্ষপাত রাখা যাবে না। এতে করে শিক্ষার্থীরা তার শিক্ষককে ভালোবেসে শ্রদ্ধা করবে। এছাড়া আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় প্রযুক্তির ব্যবহার এবং ছাত্র-কেন্দ্রিক পদ্ধতির মাধ্যমে পারস্পরিক সম্পর্ককে উন্নতি করা যাবে।
- ৭. শিক্ষক- শিক্ষার্থীকে বোঝার চেষ্টা করা
বর্তমানে প্রযুক্তির কারণে ছেলে-মেয়েদের বেড়ে ওঠার সময়টা নতুন নতুন জিনিসের সঙ্গে পরিচিত হতে থাকে। মুখোমুখি হয় নতুন নতুন পরিস্থিতির। টিনএজ বয়সে খুব আবেগপ্রবণ থাকে। তাই তাদের মন বুঝে কথা বলতে হয়। কোনো কিছু শেখাতে হলেও হুকুম বা বাধ্য না করে সুন্দর করে বুঝাতে হবে।
সূত্র :টিচারর্স ইনস্টিটিউট, মেরিট হাব, রিসার্চ গেট
আরও পড়ুন
পাল্টে যাচ্ছে শোনার অভ্যাস
আপনার সঙ্গী কি একজন নার্সিসিস্ট, মিলিয়ে নিন
এসএকেওয়াই/কেএসকে/জিকেএস