আমিনুল ইসলামের কবিতা
রমনা পার্কের মুখোমুখি
মাস্কহীন প্রভাতের শপথ, শপথ ঘ্রাণমাখা হাওয়ার,
কেউ জানে নাকো,
আজ শুধু তোমাকে জানিয়ে রাখি,
বাগ-ই বাদশাহী,
কোলাহলে চাপা পড়া তোমার সেই কিশোরী নামটা
আমাকে মনে করিয়ে দেয় শেফালীর কথা
যে গ্রামীণ রাজকিশোরীর দিকে চেয়ে থাকতো
আমার ঘুড়ি ওড়ানো কৈশোর কাল এবং
বেয়াড়া স্বপ্নে নড়ে উঠতো রাতের ঘুম: শেফালী! শেফালী!
আমি প্রেমিক বলে হৃদয়ের গন্ধ চিনতে পারি
যেমনটি পারতেন ইবনে সিনা খোশবুর উৎসকে
তার রাডারের মতো নাক লাগিয়ে
চাহারবাগের হাওয়ায়;
আচ্ছা, এই যে তোমার উঠোনে বসে হরপ্রভাতে
বাঁশি বাজায়
এলিফ্যান্ট রোডের কালো রঙের লাল মিয়া,
‘তোমার লাগিয়ারে সদাই প্রাণ আমার কান্দে বন্ধুরে...’
ষাটোত্তর প্রাণে সে কি তোমার আঁচলে পায়
মুক্তিযুদ্ধের বছরে হারিয়ে যাওয়া ঘামভেজা শরীরের ঘ্রাণ?
ঘুম থেকে জেগে ওঠা তোমার শরীরে এত এত গন্ধ—
যেন তুমি রাউন্ড দি ক্লক ওপেন কোনো
পুরোনো পারফিউমের দোকান!
লেকের আঁশটে ঘ্রাণ, বনপারুলের খোঁপার সুবাস,
কাঠবিড়ালির লেজের গন্ধ, এসব উজিয়ে
তোমার গা থেকে বের হয়ে আসে এক অদ্ভুত ঘ্রাণ—
যার সাথে পরিচয় নেই গন্ধেশ্বরীর নাম ভুলে যাওয়া
যমুনা ফিউচার পার্কের বডি শপ কিংবা
কসমেটিকা বাংলাদেশের সুরভিত সেলস গার্লদের;
আচ্ছা, এই যে তোমার আগর-জুলফি আর চন্দন
নিঃশ্বাস থেকে বিচ্ছুরিত গন্ধ,
ঘন ও কামনা জাগানিয়া,
এটা কি সেই মেহেরুন্নেসার সুরভিত কেশ থেকে
সংগ্রহ করেছিলে তুমি?
তিনি কি এসেছিলেন এখানে ঘোড়া হাঁকিয়ে
পাশাপাশি খোশবুপ্রেমিক বীর্যবান শের আফগানের?
ঠিক বলেছো রমনা,
তোমার লেকের জলে যে মিষ্টি কোরাস
সেটা সাম্প্রতিককালের;
কিন্তু তোমার প্রভাতি রোদে ছড়িয়ে আছে
সেদিনের সেই জগৎ-আলোর মুখ;
না রমনা, ‘ইরান দেশের শকুন্তলা’র খোঁজে নয়,
আমি তো কোনো সম্রাট নই,
বেহুলার গল্প শুনে বেড়ে ওঠা
শিমুলরাঙা উঠোনের এক প্রেমিক কবি
প্যারিস রোডে ভালোবাসা ফেলে আসা
লায়লাকে দেখবো বলে চুরি করে এসেছিলাম
তোমার অক্সিজেনের বাগানে;
সে কি আসেনি কো আজ?
নাকি এ আমাকে দেখে চলে গেছে
চুম্বনের ঘ্রাণমাখা মুখখানি ঘুরিয়ে
হাত ধরে তার সংসারপ্রেমী সঙ্গীর
যে জানে না কতখানি প্রেম দিয়ে গড়া
আজকের ভুল নামের এই বটমূল;
সে যদি গিয়েই থাকে, যাক্! আজ তোমাকেই
আমার সেদিনের সেই প্রেয়সী বলে মনে হয়,
আমি গন্ধবণিক নই,—প্রেমিক;
আমার ঘামভেজা বুকে সবুজ নাক নিয়ে দেখো,
ছাঁচে ঢালা দিনারের গন্ধ নয়,
তুমি পাবে—বহু শতাব্দীর প্রেমময় খোশবুর সংশ্লেষ।
এসইউ/এএসএম