আমি শিক্ষক—অন্ধকারে ক্ষীণ প্রদীপ
মুহাম্মদ আমিনুল ইসলাম
আমি শিক্ষক—অন্ধকারে ক্ষীণ প্রদীপ,
যার আলোতেই শিশু খুঁজে পায় ভোরের রং।
রাষ্ট্র চেনে না আমার ঘামের অক্ষর,
সমাজ দেখে না আমার জ্বলতে থাকা দেহ,
সংসার জানে শুধু শূন্য পকেটের হাহাকার।
তবু আমার চোখেই উঠে আসে আগামী সূর্যের প্রতিশ্রুতি।
আমার সন্তান ক্ষুধায় কাঁদে,
আমি অন্যের সন্তানকে শেখাই
কীভাবে ভাঙতে হয় আকাশ,
ডিঙাতে হয় পাহাড়, ছুঁতে হয় স্বপ্নের চূড়া।
আমার বেতন সামান্য, শ্রম অসীম।
আমার দেহ ভাঙে, আলো থেকে যায়।
অপমান নামে প্রতিদিন,
নিজগৃহে, শপিংমল, রেস্তোরাঁয়।
উপেক্ষা খোদাই করে বুকের দেওয়ালে দাগ,
তবু জানি—আমার উচ্চারিত প্রথম অক্ষরেই
মানুষ শেখে মানবতার শপথ।
আমি দগ্ধ হই, দহনই তো আলো জন্ম দেয়।
আমি নিঃশেষ হই,
আমার ভস্ম থেকেই উঠে আসে
অক্ষরের মহাকাব্য।
আমি শিক্ষক—
আমার নাম হয়তো হারিয়ে যাবে সময়ের ধুলোয়,
কিন্তু আমার ছাই থেকেই
জ্বলে উঠবে নতুন প্রজন্মের হাতে
অগ্নিশিখার মশাল।
শিক্ষক মানে অদৃশ্য মহাকাব্য,
যার নীরবতায় জন্ম নেয় বিদ্রোহ,
যার রক্তে লেখা থাকে ইতিহাস।
আজ শিক্ষক দিবসে ফুল নয়—
আমার চোখে দাও সত্যের আলো,
আমার হাতে দাও সম্মানের উষ্ণতা।
কারণ আমি শিক্ষক—
আমার ছাই-ভরা বুকেই গোপন আছে
অমর অগ্নিশিখা,
যা সভ্যতাকে রাখবে জেগে
যতদিন মানুষ বেঁচে থাকবে,
যতদিন শিক্ষা থাকবে।
(উৎসর্গ: বিশ্ব শিক্ষক দিবস)
এসইউ/জেআইএম