বিপ্লবের সবকিছু লিপিবদ্ধ করার আহ্বান প্রেস সচিবের

মিশর, লেবানন ও তিউনিসিয়ার মতো দেশে সেখানে সংঘটিত বিপ্লব নিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হচ্ছে। আরব দেশগুলো সেখানকার বিপ্লবের মূলকথা তুলে ধরছে তাদের শিক্ষার্থীদের সামনে । আমাদেরকেও জুলাই-আগস্টে হওয়া গণঅভ্যুত্থানে যতগুলো ঘটনা ঘটেছে তার প্রত্যেকটা লিপিবদ্ধ করতে হবে। এমন মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আয়োজিত ‘দ্রোহের গ্রাফিতি’ বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। দ্রোহের গ্রাফিতি বইটি লিখেছেন জি এম রাজিব হোসেন।
শফিকুল আলম বলেন, বাংলাদেশে এবারে যে আন্দোলনটা হলো এটা ইউনিক একটা এক্সপ্রেশন ছিল। আমাদের ছেলেরা পৃথিবীকে জানাতে চায় যে, বাংলাদেশে নতুন একটা প্রজন্ম এসেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে তারা নতুন একটা বাঁকবদল করতে চাচ্ছে এবং পৃথিবীকে তারা বলছে যে আমাদেরকে তোমরা স্বীকৃতি দাও। আমরা এসেছি, উই আর হিয়ার। তাদের এই বার্তাটা খুবই শক্তিশালী। বাংলাদেশকে তারা কীভাবে দেখতে চায় সে বিষয়ে তাদের লিখাও অসাধারণ।
প্রেস সচিব আরও বলেন, আমরা যুবক বয়সে খুব টকেটিভ নেশন ছিলাম, আমরা টকেটিভ জেনারেশন ছিলাম। আমরা মিছিল করতাম, স্লোগান দিতাম, আড্ডা দিতাম। এরা হয়তো অনেকে মোবাইল নিয়ে বসে আছে। কিন্তু তাদের সৃজনশীলতাটা তারা গ্রাফিতির মাধ্যমে দেখাচ্ছে। এটা শুধু ঢাকায় না, বাংলাদেশের প্রত্যেকটা জায়গায়।
সারা বাংলাদেশ এখন গ্রাফিতি আর্টের বাংলাদেশ মন্তব্য করে প্রেস সচিব বলেন, আমি পুরো বাংলাদেশ ঘুরি। অধ্যাপক ইউনূস যতটা দেশে গিয়েছেন, যত দেশের প্রতিনিধি এখানে এসেছেন, প্রত্যেককে উনি একটা করে গ্রাফিতির বই দিয়েছেন। আজকে রাজীব যে বইটি লিখেছেন, দ্রোহের গ্রাফিতি, আমি বলব এটা একটা ইউনিক কাজ হয়েছে। আমরা এই কাজগুলোকে কেন সংরক্ষণ করব? এটা খুবই দরকার। আমাদের দেশের একটা একটা বড় সমস্যা ছিল, আমরা ডকুমেন্টেশনে দুর্বল।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ১৯৭১ এর ১৮ই ডিসেম্বর বা ২২শে ডিসেম্বর থেকে ১৯৭২ এর জুন পর্যন্ত পেপারগুলো আপনারা পড়বেন। দেখবেন যে আমাদের ১৯৭১ সালে যে মহৎ, মহান একটা বিপ্লব হলো, লিবারেশন স্ট্রাগল আমরা করলাম, যুদ্ধ করলাম ভয়ংকর শক্তিশালী একটা বাহিনীর বিরুদ্ধে, এটার কোনো ডকুমেন্টেশন নেই। যা আছে তাও খুবই দুর্বল নথিপত্র। আমি তো সেগুলো পড়েছি, তাই বলছি। এর কারণ হলো শেখ মুজিবের প্রথম কয়েকটি মাস এত ভঙ্গুর একটা অর্থনীতি ছিল যা বাংলাদেশকে আরও গরীবির দিকে নিয়ে গেছে।
কেউ মুক্তিযুদ্ধের ১০-২০ বছর পরে, কেউ আবার ১৯৭১ সালে জন্মগ্রহণের পরও মুক্তিযোদ্ধা হয়ে গেছে। অনেক ডাকাত যেমন মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন, তেমনি মন্ত্রীও হয়েছেন তাদের অনেকে। প্রেস সচিবের মতে এর কারণ হলো, আমরা সে সময় তথ্যগুলো লিপিবদ্ধ করে রাখিনি। পরবর্তীতে যে যার মতো করে তথ্য বিকৃত করেছে।
তিনি বলেন, এবারের গ্রাফিতির যে বই তা আমাদের বিপ্লবকে ধরে রাখবে। নতুন বাংলাদেশে যে গণঅভ্যুত্থান হলো সেই গণঅভ্যুত্থানকে ধরে রাখবে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সবাইকে প্রধান উপদেষ্টা শান্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন উল্লেখ করে শফিকুল আলম বলেন, আমরা গবেষণার মাধ্যমে বিগত ১৫ বছরের ভয়াবহতা সম্পর্কে সবাইকে জানাব। প্রত্যেকটা ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে সেমিনার করব, প্রত্যেকটা দেয়ালে দেয়ালে সে (শেখ হাসিনা) যে অন্যায়-অবিচার করেছে সেটা লিখে রাখব। যাতে বাংলাদেশে পতিত স্বৈরাচার এবং তার দোসররা জীবনেও ফিরে না আসতে পারে। সেই ৯ জানুয়ারি ২০০৯ থেকে ২০২৪ এর ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রত্যেকটা দিন আপনাদের সঙ্গে কী হয়েছে তা লিপিবদ্ধ করতে হবে। কোনো কিছু যাতে আনডকুমেন্টেড না থাকে। এটা আমাদের করতে হবে। আপনারা যারা ভাবছেন যে আমাদের বিপ্লব জুলাই-আগষ্টের ২১ দিন তারা ভুল ভাবছেন। তার আগেও ১৫ বছর ধরে আন্দোলন হয়েছে, আগামীতে আরও ১৫ বছর এটা আমাদের করতে হবে। আমরা একটু থেমে যাব, ওরা আবার মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা করবে। এটা যাতে না হয়।
শেখ হাসিনার প্রতি ইঙ্গিত করে প্রেস সচিব বলেন, ১৫ বছর সে ১৯৭৪ এর দুর্ভিক্ষের কথা ভুলিয়ে রেখেছিল। আমার বড় ভাই, যিনি আমেরিকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, উনি দিনের পর দিন রাত দুইটা বাজে রেশন শপের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেন। অথচ গত সাড়ে পনেরটা বছর মানুষকে বুঝিয়ে রেখেছে যে শেখ মুজিবের আমল মহৎ একটা আমল!
দ্রোহের গ্রাফিতি বইয়ের লেখক রাজিব হোসেনকে সাধুবাদ জানিয়ে প্রেস সচিব বলেন, যারা এগুলো নিয়ে আরও কাজ করবেন, ভাল কাজ করেন যাতে আন্তর্জাতিক মানের হয়। আমরা এমন কাজ যেন না করি যাতে মানুষ নাক না সিঁটকায়। খুবই ভালোভাবে সবকিছু লিপিবদ্ধ করবেন যাতে পরবর্তী প্রজন্ম এটা ধরে রাখতে পারে। আমাদের তরুণ প্রজন্ম যেভাবে তাদের হৃদয়কে দেয়ালে দেয়ালে মেলে দিয়েছে তা লিপিবদ্ধ করে রাখেন। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি কবি হাসান হাফিজের সভাপতিত্বে প্রকাশনা অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাড. রুহুল কবির রিজভী, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী, দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ প্রমুখ।
এসআরএস/এএমএ