মিয়ানমার সীমান্তে সমস্যা সফলতার সঙ্গে সমাধান করছে কোস্টগার্ড

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, মিয়ানমার সীমান্তে মাঝে মাঝে সমস্যা হয়। কোস্টগার্ড এসব সমস্যা সফলতার সঙ্গে সমাধান করছে। বিভিন্ন সময়ে পার্শ্ববর্তী দেশের জেলেরা আমাদের সীমায় প্রবেশ করে মাছ শিকার করে নিয়ে যায়। এসব ক্ষেত্রেও কোস্টগার্ড ভালো ভূমিকা রাখছে।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের ৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের নদীপথ ও সমুদ্র উপকূলের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব কোস্টগার্ডের। তারা এটি খুব ভালোভাবে করে যাচ্ছে।
উপকূল এলাকায় মিয়ানমারের রাখাইনে আরাকান আর্মি প্রবেশ করছে। এসব এলাকায় সরকারের নজরদারি কতটা আছে? জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, আপনারা জানেন আমাদের সঙ্গে মিয়ানমারের যে অঞ্চল আছে ওই এলাকায় বর্তমানে মিয়ানমার সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এজন্য কোস্টগার্ড ও বিজিবির কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু তারা সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে। আমাদের উপকূল এলাকা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আছে। সেখানে কোনো ধরনের সমস্যা নেই।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) মো. খোদা বখস চৌধুরী এবং জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গণি। পাশাপাশি নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসানও উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, কূটনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সামরিক ও অসামরিক অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের কর্মকর্তা, নাবিক এবং অসামরিক ব্যক্তিদের বীরত্ব ও সাহসিকতাপূর্ণ কাজের জন্য ১০ জনকে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড পদক, ১০ জনকে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড (সেবা) পদক, ১০ জনকে প্রেসিডেন্ট কোস্টগার্ড পদক এবং ১০ জনকে প্রেসিডেন্ট কোস্টগার্ড (সেবা) পদকসহ মোট ৪০ জনকে পদক প্রদান করেন।
কোস্টগার্ড সদরদপ্তর জানায়, নতুন বাংলাদেশে নতুন উদ্দীপনায় দুর্দমনীয় গতিতে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড। এক উদার, গণতান্ত্রিক, বৈষম্যহীন, নিরাপদ উপকূল বিনির্মাণে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে এ বাহিনী। বাংলাদেশের ১৯টি উপকূলীয় অঞ্চল ও তৎসংলগ্ন নদীতীরবর্তী এলাকা এবং বঙ্গোপসাগরের ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটার সুবিশাল সমুদ্র অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সার্বিক নিরাপত্তা দিতে ১৯৯৪ সালে ‘গার্ডিয়ান অ্যাট সি’ মূলমন্ত্র নিয়ে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৯৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি কোস্টগার্ডের পথচলা শুরু হয়।
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে কোস্টগার্ডের প্রতিটি সদস্য দেশের উপকূলীয় দুর্গম এলাকায়, নদীপথ ও সমুদ্রসীমায় সার্বক্ষণিক উপস্থিতির মাধ্যমে জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। উপকূলীয় ও নদীতীরবর্তী অঞ্চলে বাজপাখির ন্যায় তীক্ষ্ণ দৃষ্টির মাধ্যমে সর্বদা নজরদারি অব্যাহত রেখেছে কোস্টগার্ড। দেশের অভ্যন্তরীণ নদী ও সমুদ্রপথে এবং উপকূলীয় এলাকায় জনসাধারণের জান ও মাল রক্ষা, চোরাচালান প্রতিরোধ, মৎস্য সম্পদ রক্ষা, মাদক পাচার রোধ, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ত্রাণ এবং উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা ও জাতীয় স্বার্থরক্ষায় এ বাহিনী অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করছে।
দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু চট্টগ্রাম বন্দর ও বহির্নোঙর এলাকায় চুরি-ডাকাতি ও অপরাধ দমনে কোস্টগার্ড অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। এছাড়া দেশের জাতীয় সম্পদ রূপালী ইলিশ সংরক্ষণ, জাটকা নিধন রোধ এবং সমুদ্রে সরকার ঘোষিত মৎস্য অভয়ারণ্য বাস্তবায়নে এ বাহিনীর অবদান অনস্বীকার্য। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা ও দুর্গতদের জানমাল রক্ষায় কোস্টগার্ডের ভূমিকা সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে।
সময়ের পরিক্রমায় ও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার নিপুণ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডকে কার্যকর, শক্তিশালী ও সুদক্ষ বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলে দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা এগিয়ে নিতে এ বাহিনীর প্রতিটি সদস্য উজ্জীবিত ও বদ্ধপরিকর।
টিটি/এমকেআর/এমএস