ইট-পাথরের নিউমার্কেটে ঝুলছে ডজন ডজন জাম্বুরা!
‘আপা দেখ দেখ, ওই যে গাছটিতে কেমন ঝাঁকে ঝাঁকে জাম্বুরা ঝুলে আছে।’ রাজধানীর নিউমার্কেটের ভেতরে কেনাকাটা করতে এসে এক তরুণী আরেক তরুণীকে লক্ষ্য করে এ কথাগুলো বলছিলেন।
প্রথমে অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তাকালেও সত্যি সত্যি গাছভর্তি জাম্বুরা দেখে সঙ্গে থাকা তরুণী হতবাক দৃষ্টিতে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থাকলেন। এরপর তাকে বলতে শোনা যায়, ‘ভাবতেই অবাক লাগছে ইট-পাথরের যান্ত্রিক নগরীর মার্কেটের ভেতর জাম্বুরাভর্তি গাছ।’
বুধবার (২৩ জুলাই) দুপুরে এ প্রতিবেদক দুই তরুণীর কথোপকথন শুনতে পান। সাত দশকের পুরোনো ঢাকার গভর্মেন্ট নিউমার্কেট, যেটি ‘নিউমার্কেট’ নামে সবার কাছে পরিচিত। সেই মার্কেটের এক নম্বর গেট থেকে পশ্চিম দিকে এগিয়ে গেলে একটি সেলুনের সামনের জাম্বুরা গাছটি এখন যেন দর্শনীয় এক বিস্ময়।
মার্কেটে কেনাকাটা করতে এসে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই থমকে দাঁড়াচ্ছেন গাছটির সামনে। কেউ ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন, কেউবা হাত বাড়িয়ে জাম্বুরা ছুঁয়ে দেখছেন। কেউ বলছেন, ‘এটা কি সত্যি?’ আবার কেউ অবাক হয়ে বলছেন, ‘আমার গ্রামের গাছেও এত জাম্বুরা হয় না!’
গাছটির জন্ম ইতিহাস যেন এক রহস্য! পাশের দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, অনেক বছর আগে কেউ একবার সখ করে একটি জাম্বুরা চারা এনেছিলেন। তখন হয়তো সেটা ছিল এক টবের গাছ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মাটির খোঁজে শেকড় বাড়িয়েছে, বড় হয়েছে গাছটি। এখন তাতে প্রতি মৌসুমেই ধরে ডজন ডজন জাম্বুরা।

নিউমার্কেটের মতো শতভাগ পাকা জায়গায় একটি ফলজ গাছের এমন বিস্ময়কর উপস্থিতি এক কথায় অকল্পনীয়। দোকানিরাও গর্বের সঙ্গে দেখান গাছটি, বললেন, ‘এটা আমাদের নিউমার্কেটের সৌন্দর্যের অংশ।’
এ গাছটি যেন শহুরে ক্লান্ত জীবনের মাঝে এক চিলতে শীতল বাতাস। এই গাছ যেন চোখের আরাম, মনে প্রশান্তি আনে। অনেকে দাঁড়িয়ে থেকে বলেন, ‘এমন সবুজ দৃশ্য ঢাকা শহরে কই!’
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীম হায়দার বলেন, ‘নিউমার্কেট তো আমাদের স্মৃতির জায়গা। স্কুল-কলেজজীবন, বন্ধুরা, প্রথম কেনাকাটা—সব এখানে। সেই নিউমার্কেটে এখন এমন একটা গাছ, যেটা যেন আমাদের মনে করিয়ে দেয়, প্রকৃতি এখনো বেঁচে আছে।’
এ জাম্বুরা গাছ শুধু এক গাছ নয়, এটি যেন এক বার্তা। বার্তাটি হলো—শহরের বুকেও সবুজের জন্য জায়গা রাখা যায়, যদি আমরা চাই। নিউমার্কেটের মতো জায়গায় যদি এত বড় একটি ফলের গাছ বেড়ে উঠতে পারে, তাহলে আমাদের বাসা, মার্কেট, অফিস বা ফাঁকা জমিতেও তো অন্তত একটি গাছ লাগানো সম্ভব।
এই গাছটি কারও ব্যক্তিগত সখের ফল, না নিউমার্কেট কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা—তা জানা না গেলেও, এটি এখন সবাইকে একভাবে ভাবতে শেখাচ্ছে। গাছটির প্রতিটি পাতায়, প্রতিটি ঝুলে থাকা জাম্বুরায় যেন শহরের সবুজের ক্ষুধা লুকিয়ে আছে।
নিউমার্কেটে জাম্বুরা গাছের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একজন তরুণের কথাই হয়তো সবচেয়ে ভালো সারাংশ দেয়— ‘এই শহরে সবুজ বড় দামি, আর এই গাছটা তার নিঃশব্দ সাক্ষী।’
এমইউ/বিএ/এমএস