বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের ৮ পরামর্শ
বাংলাদেশের আর্থিক খাতের স্বচ্ছতার জন্য এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে উন্নীত করতে বাজেট প্রস্তুতি, আয়-ব্যয়ের পূর্ণাঙ্গতা এবং সর্বোচ্চ নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা আটটি পরামর্শ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রকাশিত ‘২০২৫ ফিসক্যাল ট্রান্সপারেন্সি রিপোর্ট’ বা আর্থিক স্বচ্ছতা প্রতিবেদনে এই পরামর্শ দেওয়া হয়।
মার্কিন প্রতিবেদনে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকার পূর্ববর্তী সরকারের প্রস্তাবিত বাজেট ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া অনুসরণ করেছে। পূর্ববর্তী সরকার নির্বাহী বাজেট প্রস্তাব ও পাসকৃত বাজেট সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করেছিল, অনলাইনে অন্তর্ভুক্তসহ। তবে অর্থবছর শেষে প্রতিবেদন যথাযথ সময়ের মধ্যে প্রকাশ করা হয়নি। বাজেট নথির তথ্য সাধারণভাবে নির্ভরযোগ্য হলেও তা আন্তর্জাতিকভাবে গৃহীত নীতিমালা অনুযায়ী প্রস্তুত হয়নি।
মার্কিন ফিসক্যাল ট্রান্সপারেন্সি রিপোর্ট জানিয়েছে, বাজেট নথিতে সরকারের পরিকল্পিত ব্যয় ও আয়ের একটি যথেষ্ট পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাওয়া যেত, যার মধ্যে প্রাকৃতিক সম্পদ থেকে আয়ও অন্তর্ভুক্ত। তবে নির্বাহী অফিসসমূহের ব্যয়ের আলাদা বিবরণ এবং আয় ও ব্যয়ের সম্পূর্ণ চিত্র দেওয়া হয়নি। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের আর্থিক বরাদ্দ ও আয় অন্তর্ভুক্ত থাকলেও তা সম্পূর্ণ নয়।
এত বলা হয়, সরকার পরিবর্তনের কারণে সর্বোচ্চ নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারের হিসাব পর্যালোচনা করতে পারেনি। কিছু সংক্ষিপ্ত ফলাফল প্রকাশিত হলেও প্রতিষ্ঠানটি আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী স্বাধীন নয়। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, প্রতিষ্ঠানটির পর্যাপ্ত সম্পদ থাকা জরুরি, যাতে তারা বার্ষিক বাজেটের ওপর সময়মতো এবং সরাসরি প্রবেশাধিকার পায় এবং বিস্তারিত নিরীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশ করতে পারে।
- আরও পড়ুন:
হাজার কোটি টাকার মালিকেরা এখন দৌড়ে বেড়াচ্ছেন: অর্থ উপদেষ্টা
শেষ হলো বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র বিমানবাহিনীর যৌথ মহড়া
ফিসক্যাল ট্রান্সপারেন্সি রিপোর্টে জানানো হয়, সরকার আইন বা বিধিমালা অনুযায়ী প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তোলন চুক্তি ও লাইসেন্স প্রদান করেছে এবং সীমিত তথ্য প্রকাশ করেছে। অন্তর্বর্তী সরকার সমস্ত প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তোলন সংক্রান্ত ক্রয়কে সম্পূর্ণ উন্মুক্ত ও স্বচ্ছ করার উদ্যোগ নিয়েছে এবং পূর্ববর্তী সরকারের প্রত্যক্ষ আলোচনার মাধ্যমে পরিচালিত কার্যক্রম স্থগিত করেছে।
তবে সরকার অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা বাড়াতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের আটটি পরামর্শ হলো-
১. বছরের শেষ আর্থিক প্রতিবেদন যৌক্তিক সময়ের মধ্যে প্রকাশ করা।
২. বাজেট নথি আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী প্রস্তুত করা।
৩. নির্বাহী দপ্তরের ব্যয় আলাদাভাবে দেখানো।
৪. বাজেটে সরকারের রাজস্ব আয় ও ব্যয়ের পূর্ণাঙ্গ চিত্র প্রকাশ করা।
৫. আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী সর্বোচ্চ নিরীক্ষা কর্তৃপক্ষের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। বাজেটের পূর্ণাঙ্গ তথ্য যেন তারা পায়, সেই ব্যবস্থা করা।
৬. নিরীক্ষা প্রতিবেদন সময়মতো প্রকাশ করা, যেখানে প্রস্তাবনা ও বিস্তারিত তথ্য থাকবে।
৭. প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ-সংক্রান্ত চুক্তির মূল তথ্য প্রকাশ করা।
৮. সরকারি ক্রয়ের তথ্য প্রকাশ করা।
জেপিআই/এনএইচআর/জেআইএম