উন্নয়নের ধুলায় ঢাকা নগরজীবন, ছবিতে বিস্তারিত
রাজধানীজুড়ে চলছে একের পর এক উন্নয়ন প্রকল্প-রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, ড্রেন সংস্কার, মেট্রোরেল বা ফ্লাইওভারের কাজ। কিন্তু এই উন্নয়নের জোয়ারের মাঝেই নীরবে কষ্ট বাড়ছে সাধারণ মানুষের। বাতাসে ঘন ধুলোর আস্তরণ, রোদের তাপে দম বন্ধ করা গরম আর যানজটের যন্ত্রণায় নাকাল রাজধানীবাসী। উন্নয়ন কাজের শৃঙ্খলাহীনতা এখন যেন নতুন এক দূষণের নাম ‘উন্নয়নের ধুলা’। এতে যেমন শহরের সৌন্দর্য হারাচ্ছে, তেমনি মানুষের স্বাভাবিক জীবনও ঢেকে যাচ্ছে ধুলোর স্তরে।

রাজধানীতে নেমে এসেছে এক অদ্ভুত ক্লান্তি। তীব্র রোদ, লাগাতার খোঁড়াখুঁড়ি, আর বাতাসে উড়তে থাকা ধুলোর দম বন্ধ করা মিশ্রণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে শহরজীবন। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ব্যস্ত সড়কগুলো এখন যেন রণক্ষেত্র-যানজট, ধুলোবালি আর গরমে নাকাল পথচারী ও চালকরা।

দয়াগঞ্জ নতুন রাস্তা এলাকায় গেলে এই দুরবস্থার চিত্র আরও স্পষ্ট। সড়কের এক পাশে খোঁড়াখুঁড়ি, অন্য পাশে জমে আছে বালি ও ইটের স্তূপ। এই অবস্থায় যান চলাচল স্বাভাবিক রাখা তো দূরের কথা, পথচারীদের হাঁটাও যেন এক রকম চ্যালেঞ্জ।

সকালবেলা কর্মস্থলে যাওয়ার সময় কিংবা বিকেলে বাড়ি ফেরার পথে ধুলোয় মুখচেনা মানুষও চিনে নেওয়া দায়।

একজন অফিসগামী পথচারী ক্ষোভের সঙ্গে বললেন, ‘প্রতিদিন এই রাস্তা পার হতে ১০ মিনিটের জায়গায় আধা ঘণ্টা লাগে। রোদে পুড়ে, ধুলোয় চোখ মুখ ভরে যায়। মনে হয় শহরটা যেন ধুলোর নগরীতে পরিণত হয়েছে।’

শুধু দয়াগঞ্জ নয়, পুরান ঢাকা থেকে শুরু করে মতিঝিল, ফার্মগেট, মিরপুর, উত্তরা-সর্বত্রই চলছে নানা প্রকল্পের কাজ। কিন্তু কাজের সমন্বয় ও গতি এতটাই মন্থর যে, প্রতিটি এলাকার মানুষকেই এখন ধুলো-যন্ত্রণা ও যানজটের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হচ্ছে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধুলোবালির মূল ক্ষতি হচ্ছে শ্বাসযন্ত্রে। দীর্ঘ সময় ধুলায় থাকলে অ্যাজমা, অ্যালার্জি, কাশি, গলার ব্যথা ও ত্বকের সমস্যা বেড়ে যাচ্ছে। অনেকেই মাস্ক পরে বাইরে বের হলেও তাতে পুরোপুরি সুরক্ষা মিলছে না।

অন্যদিকে, রোদের তীব্রতাও বাড়ছে প্রতিদিন। সকাল ১০টার পর থেকেই সূর্যের তেজ যেন মাথায় আগুন জ্বালিয়ে দেয়। গরমের সঙ্গে ধুলোবালির মিশ্রণ শরীরের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। অনেকে হিট এক্সহস্টন, ডিহাইড্রেশন ও ঘামাচির সমস্যায় ভুগছেন।

দয়াগঞ্জের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আগে বিকেলে একটু বাইরে বসে গল্প করতাম। এখন রোদ আর ধুলোয় সেই সুযোগ নেই। জানালাও খুলতে পারি না, ঘরে ধুলো ঢুকে যায়।’

সবশেষে নাগরিকদের দাবিটা একটাই, একটু স্বস্তি। ধুলোমুক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে চায় রাজধানীবাসী। তারা চায়, চলমান উন্নয়নকাজ হোক আরও পরিকল্পিতভাবে, যেন ‘উন্নয়ন’ শব্দটি কষ্টের প্রতীক না হয়।
জেএস