সাবেক মুখ্য সচিব কামাল সিদ্দিকীর মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার শোক
সাবেক মুখ্য সচিব, অর্থনীতিবিদ ও সমাজবিজ্ঞানী ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
সোমবার (৩ নভেম্বর) এক শোকবার্তায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ড. কামাল সিদ্দিকী ছিলেন প্রশাসন, উন্নয়নচিন্তা ও একাডেমিক গবেষণার এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। সৎ, দূরদর্শী ও নিষ্ঠাবান এ সরকারি কর্মকর্তা দেশের প্রশাসনিক কাঠামো আধুনিকায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। মুক্তিযোদ্ধা, গবেষক ও নীতিনির্ধারক হিসেবে তার অবদান জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘ড. কামাল সিদ্দিকীর সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব ছিল। আমরা প্রায়ই দেশের ভবিষ্যৎ, প্রশাসনিক সংস্কার ও আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচনা করতাম। তিনি ছিলেন নীতিবান, বিনয়ী ও দেশপ্রেমিক এক মানুষ। ব্যক্তিগতভাবে আমি একজন প্রিয় বন্ধু ও প্রজ্ঞাবান সহযাত্রীকে হারালাম।’
শোকবার্তায় প্রধান উপদেষ্টা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘দেশের বৈরী ও প্রতিহিংসাপরায়ণ রাজনীতির কারণে তাকে বহুবার দেশ ছাড়তে বাধ্য হতে হয়েছে। অন্যায়ভাবে একাধিক মামলার হয়রানি তাকে সহ্য করতে হয়েছে, যা ছিল অত্যন্ত দুঃখজনক। তবুও তিনি কখনো তার মূল্যবোধ ও দেশপ্রেম থেকে সরে আসেননি।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ড. কামাল সিদ্দিকী বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের একজন কিংবদন্তি কর্মকর্তা ছিলেন। নিষ্ঠা, সততা ও দক্ষতার সঙ্গে আজীবন দায়িত্ব পালন করে তিনি দেশের সব সরকারি কর্মকর্তার জন্য অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অবাক লাগে যে ড. কামাল সিদ্দিকী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে বিএসসি ও এমএসসি পাস করলেও ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তার জ্ঞানস্পৃহা ছিল সত্যিই অদম্য।
ড. সিদ্দিকী অসংখ্য গবেষণাভিত্তিক বই লিখে তার পাণ্ডিত্যের প্রোজ্জ্বল পরিচয় রেখে গেছেন। তার তিন খণ্ডের আত্মজীবনী বাংলাদেশের সমাজ, মানুষ এবং রাষ্ট্র ও সরকারের একটি আন্তরিক ও অকপট দলিল। বিভিন্ন গবেষণা গ্রন্থে তিনি তার কৌতূহলী মনের সক্রিয়তার সই রেখেছেন।’
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ২০০৬ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুখ্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জাতিসংঘের শিশু অধিকার কমিটির সদস্য হিসেবে ২০০৫ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। তিনি ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজে মাস্টার্স এবং একই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজ (SOAS) থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করেন। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্যাকাল্টি সদস্য হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
প্রধান উপদেষ্টা মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
এমইউ/এমএএইচ/এএসএম