এমআইসিএস এর প্রতিবেদন

প্রতি দুই কিশোরীর মধ্যে একজন বাল্যবিবাহের শিকার হচ্ছে

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:১৫ পিএম, ১৬ নভেম্বর ২০২৫
ছবি: এআই দিয়ে তৈরি

দেশে বাল্যবিবাহের হার আগের তুলনায় কিছুটা কমলেও সার্বিক চিত্র এখনও গভীর উদ্বেগজনক। বাংলাদেশে বর্তমানে ১৮ বছরের নিচে থাকা প্রতি দুজন মেয়ের মধ্যে একজনের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই। ২০১৯ সালে বাল্যবিবাহের হার ছিল ৬০ শতাংশ; নতুন জরিপে তা কমে ৫৬ শতাংশে নেমেছে।

রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও ইউনিসেফ প্রকাশ করে মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে (এমআইসিএস)-২০২৪। জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত দুই ধাপে ৬৩ হাজার পরিবার নিয়ে এই জরিপ পরিচালিত হয়। জাতীয় অগ্রাধিকার, বৈশ্বিক মানদণ্ড এবং এসডিজির ২৭টি সূচক অন্তর্ভুক্ত করে ১৭২টি নির্দেশকে ভিত্তি করে প্রতিবেদনের তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

জরিপে দেখা গেছে, ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে বিয়ে হয়েছে ৪৭ শতাংশের, যেখানে ২০১৯ সালে এ হার ছিল ৫১ শতাংশ। দেশের সামগ্রিক চিত্রে ১৮ বছরের নিচে থাকা মেয়েদের বাল্যবিবাহের হার বর্তমানে ৫৬ শতাংশ, যা চার বছর আগেও ছিল ৬০ শতাংশ।

প্রতিবেদন বলছে, প্রায় ৩৬ লাখ কিশোরী এখনো প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই বিয়ের শিকার হচ্ছেন। এর ফলে উৎপাদনশীলতা ও মানবসম্পদের ক্ষতি হিসেবে বাংলাদেশকে প্রতি বছর ৭-৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ক্ষতি বহন করতে হচ্ছে। বর্তমান গতিতে চললে বাল্যবিবাহ পুরোপুরি নির্মূলে ৬৪ বছরেরও বেশি সময় লাগতে পারে।

ইউনিসেফ বাংলাদেশের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, বাল্যবিবাহের হার কমা ইতিবাচক হলেও সিসাদূষণ ও শিশুশ্রমের মতো সংকট এখনও লাখ লাখ শিশুর ভবিষ্যত বিপন্ন করছে। শিশুদের সুরক্ষায় বিনিয়োগ বাড়ানো জরুরি।

জরিপে আরও উঠে এসেছে, কিশোরী মায়েদের সন্তান জন্মদানের হার প্রতি হাজারে ৮৩ থেকে বেড়ে ৯২ হয়েছে। হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে প্রসব বাড়লেও বেড়েছে অস্ত্রোপচারের (সি-সেকশন) হার। ২০১৯ সালের তুলনায় ১৬ শতাংশ বেড়ে তা পৌঁছেছে ৫২ শতাংশে। জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর ব্যবহার কমে দাঁড়িয়েছে ৫৮ শতাংশে এবং মোট প্রজনন হার বেড়ে হয়েছে ২ দশমিক ৪।

অন্যদিকে, শিশুশ্রম বেড়ে হয়েছে ৯ শতাংশ, এবং মাধ্যমিক স্কুলে পড়ার বয়সী শিশুদের স্কুলে না যাওয়ার হার বেড়ে প্রায় ৩৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। পাঁচ বছরের নিচে শিশুমৃত্যুও কমেছে, ২০১৯ সালের প্রতি হাজারে ৪০ মৃত্যু এখন নেমে এসেছে প্রতি হাজারে ৩৩-এ।

প্রথমবারের মতো রক্তে সিসার পরিমাণ মাপার ফলাফল তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, ১২ থেকে ৫৯ মাস বয়সী শিশুদের ৩৮ শতাংশের রক্তে সিসার মাত্রা নিরাপদ সীমা ছাড়িয়েছে। অন্তঃসত্ত্বা নারীদের ক্ষেত্রে এ হার প্রায় ৮ শতাংশ।

ঢাকায় পরিস্থিতি সবচেয়ে ভয়াবহ, এখানে শিশুদের ৬৫ শতাংশ সিসাদূষণে আক্রান্ত। পানীয় জলের প্রায় অর্ধেক উৎস এবং গৃহস্থালিতে ব্যবহৃত পানির ৮০ শতাংশের মতো নমুনায় ই. কোলাই ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে।

প্যানেল আলোচনায় বিশেষজ্ঞরা সি-সেকশনের অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে কঠোর নজরদারির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। পাশাপাশি নিরাপদ পানি সরবরাহে শহর ও গ্রামের বৈষম্য কমানো এবং উপাত্ত বিশ্লেষণের মান উন্নত করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, উপাত্তের পেছনের কারণগুলো স্পষ্ট না হলে নীতিনির্ধারণে বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে।

জেপিআই/এএমএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।