সাতরাস্তা থেকে মহাখালী

ভাঙা ফুটপাত, গর্ত আর ধুলায় নাজেহাল পথচারীরা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৬:৩৬ পিএম, ২৭ নভেম্বর ২০২৫
ফুটপাতের ওপর ইট-পাথর, বালু ও ময়লা-আবর্জনার স্তূপ

রাজধানীর তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা থেকে মহাখালীর দূরত্ব প্রায় ৪ কিলোমিটার। এটা ঢাকার অন্য যে কোনো সড়কের তুলনায় বেশ ব্যস্ত একটি রাস্তা। সকাল থেকে মধ্যে রাত পর্যন্ত সড়কে যানজট লেগে থাকে। এ অবস্থায় অনেক যাত্রী যানবাহন থেকে নেমে ওই সড়কের দুপাশের ফুটপাতে হেঁটে গন্তব্যে যান। তেজগাঁও শিল্প এলাকার হাজারো কর্মজীবী এই একই ফুটপাত ব্যবহার করেন।

কিন্তু ফুটপাতের অবস্থা খুবই বেহাল। চার কিলোমিটারের এই ফুটপাতে অন্তত ৫০টি স্থানে ভেঙে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে ফুটপাতের ওপর ইট-পাথর, বালু, ময়লা-আবর্জনা স্তূপ হয়ে আছে। বিশেষ করে তেজগাঁও শিল্প এলাকার ফুটপাতগুলোর অবস্থা খুবই বেহাল। এ এলাকায় ফুটপাত ও সড়কে চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। এ কারণে পুরো এলাকা ধুলাবালিতে ছেয়ে গেছে।

তেজগাঁও শিল্প এলাকার বাসিন্দা ও বিভিন্ন কল-কারখানায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিযোগ, এসব এলাকার অধিকাংশ ফুটপাতের এই বেহাল করেছে খোদ সিটি করপোরেশন। তারা সড়ক ও ফুটপাত খোঁড়াখুঁড়ির নামে যাত্রী ও পথচারীদের দুর্ভোগ সৃষ্টি করেছেন। ফুটপাতে চলতে না পেরে অনেকে ঝুঁকি নিয়ে সড়কের পাশ ঘেঁষে হাঁটছেন। এতে সড়কে দুর্ঘটনা ঝুঁকিও বাড়ছে। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে ফুটপাত এবং সড়ক সংস্কার করতে হবে।

ভাঙা ফুটপাত, গর্ত আর ধুলায় নাজেহাল পথচারীরা

তবে সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্টদের দাবি, মগবাজার থেকে মহাখালী পর্যন্ত রাস্তার দুপাশে ফুটপাত সংস্কারের কাজ চলছে। আবার মগবাজার থেকে মহাখালী পর্যন্ত সড়কের পূর্ব অংশে রাস্তা খুঁড়ে বৈদ্যুতিক তার টানছে ডিপিডিসি। তারা অনেক জায়গায় ফুটপাতের ওপর ইট, পাথর, বালু স্তূপ করে রাখে। এগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে অপসারণ করতে ডিপিডিসি এবং সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

মগবাজার তথা তেজগাঁও সাতরাস্তা থেকে মহাখালী পর্যন্ত সড়কটির নাম শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ সরণি। বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) সরেজমিনে দেখা যায়, মহাখালীর কলেরা হাসপাতালের সামনে থেকে এফডিসি মোড় পর্যন্ত সড়কের দুই পাশের ফুটপাতের অনেক স্থান ভেঙে আছে। এর মধ্যে সড়কের পূর্ব পাশের ফুটপাতের অবস্থা বেশি খারাপ। এ অংশে এক দিকে ফুটপাত সংস্কারের কাজ করছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। আবার ফুটপাত ঘেঁষে সড়কের একাংশ বড় করে খুঁড়ে বৈদ্যুতিক তার টানছে ডিপিডিসি। ফলে সড়কের ভাঙাচোরা ইট-পাথর ও বালু ফুটপাতের ওপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা হয়েছে। অনেক স্থানে তা এত পরিমাণ বেশি, ফুটপাত দিয়ে হাঁটাই যায় না। বিশেষ করে সাতরাস্তা থেকে বিজয় সরণি সেতুতে ওঠার আগে হাতের বা পাশের ফুটপাতে ভাঙা ইট-পাথর স্তূপ হয়ে আছে।

আরও পড়ুন
কাজে আসছে না ৩ কোটি টাকার সেতু
পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে খেলার মাঠ থেকে বস্ত্র মেলা উচ্ছেদ

আবার তেজগাঁওয়ের গণপূর্ত বিভাগের স্টাফ কোয়ার্টার, নাবিস্কো, মহাখালী বাস টার্মিনাল, ডিএনসিসি হাসপাতাল, কলেরা হাসপাতালের সামনের ফুটপাতের ওপর ইট-পাথর স্তূপ হয়ে আছে। এর মধ্যে মহাখালীতে ডিএনসিসির অঞ্চল-৩ এর আঞ্চলিক কার্যালয়ের পশ্চিম পাশের ফুটপাতে ইটপাথর স্তূপ হয়ে আছে। এখানে ফুটপাতেও অনেক দোকানপাট বসেছে। ফলে হাঁটাচলার পথে নাগরিক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

তেজগাঁও কুনিপাড়ার বাসা থেকে হেঁটে নাবিস্কোতে অফিস করেন আমানুল ইসলাম। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন অপরিকল্পিতভাবে ফুটপাত সংস্কার করছে। তারা পুরোনো টাইলস তুলে ফুটপাতে স্তূপ করে রাখছে। এর সঙ্গে ময়লা আবর্জনার স্তূপও আছে। এজন্য পথচারীরা ফুটপাত ব্যবহার করতে পারছে না।

ভাঙা ফুটপাত, গর্ত আর ধুলায় নাজেহাল পথচারীরা

অনেকে রাস্তা দিয়ে হাঁটাচলা করেন। রাস্তাটি অনেক ব্যস্ত হওয়ায় যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

মহাখালীর আইপিএইচ এলাকা থেকে একটি ট্রেড লাইসেন্সের জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ সরণিতে ডিএনসিসির অঞ্চল-৩ এর আঞ্চলিক কার্যালয়ে যান রাইসুল ইসলাম। কিন্তু খোদ এ কার্যালয়ের পশ্চিম পাশের ফুটপাতের ওপর তিন-চার ফুট উঁচু করে ইটপাথর স্তূপ করে রাখা দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। আলাপকালে রাইসুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, সিটি কর্পোরেশন কতটা অপরিকল্পিতভাবে নগরের উন্নয়ন করছে তা এ আঞ্চলিক কার্যালয় সামনের চিত্র দেখলেই বুঝা যায়। অথচ নগরের ফুটপাত রক্ষণাবেক্ষণ ও সৌন্দর্য বর্ধনের কাজটি সিটি করপোরেশনের। আবার তারা একই সঙ্গে রাস্তা কেটে বৈদ্যুতিক লাইন নেওয়ার অনুমতি দিয়েছে ডিপিডিকে। ফলে তারা কোনো নিয়ম-নীতি না মেনেই কাজ করছে। এ কারণে পথচারীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

জানতে চাইলে ডিএনসিসির অঞ্চল-৩ এর নির্বাহী প্রকৌশলী নূর আলম জাগো নিউজকে বলেন, মহাখালী থেকে মগবাজার পর্যন্ত ফুটপাতের সংস্কারকাজ চলছে। এ কারণে অনেক জায়গায় ফুটপাতে ইট-পাথর স্তূপ করে রাখা হয়েছে। আবার ডিএনসিসির অনুমতি নিয়ে অনেক জায়গায় সড়ক খুঁড়ে লাইন টানছে ডিপিডিসি। তারাও বিভিন্ন জায়গায় ইটপাথর স্তূপ করে রেখেছে বলে শুনেছি। আগামী চার-পাঁচদিনের মধ্যে ফুটপাত থেকে সব ধরনের ইটপাথর সরানো হবে। যাতে পথচারীদের হাঁটাচলায় কোনো সমস্যা না হয়।

এমএমএ/এমআইএইচএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।