২০৩০ সালের মধ্যে ক্ষুধামুক্ত হবে বাংলাদেশ
চরম দশা থেকে ২০০০ সালের পর ক্ষুধার্ত মানুষের হার অর্ধেকে নামিয়ে এনেছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি জাতিসংঘের বৈশ্বিক ক্ষুধার ওপর করা প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরে দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশকে বিশ্বমানচিত্রে একটি উজ্জ্বল বিন্দু হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে একথাও বলা হয়েছে, এই ধারা অব্যাহত রাখতে পারলে ২০৩০ সাল নাগাদ ক্ষুধামুক্ত হবে বাংলাদেশ।
গত এক দশকে সামগ্রিকভাবে পুরো বিশ্বেই ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা কমেছে। ১৯৯০-এ বিশ্বে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা যেখানে ১০০ কোটি ছিল, ২০০০ সালে তা কমে হয়েছে ৭৯ কোটি ৫০ লক্ষ। তবে এই তালিকায় যে তিনটি দেশ সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি দেখিয়েছে তাদের অন্যতম বাংলাদেশ। জাতিসংঘের হিসেবে বাকি দুটি দেশ ইথিওপিয়া আর নেপাল।
যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্সের অধ্যাপক এবং উন্নয়ন ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ গ্লেন ডেনিং এই অর্জনকে ‘আশা জাগানিয়া’ বলে উল্লেখ করেছেন।
বাংলাদেশের এই দৃষ্টান্তস্থাপনকারী ভূমিকার পেছনে মূলত তিনটি কারণকে চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা- ধারাবাহিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, বাজারে কৃষকদের অংশগ্রহণের সুযোগ বৃদ্ধি এবং সামগ্রিকভাবে সামাজিক নিরাপত্তাবলয় জোরদার হওয়া।
আশির দশকের পর থেকে কৃষি উৎপাদন ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়া, এরইসঙ্গে শিক্ষা, বিশেষ করে নারীশিক্ষার হার বৃদ্ধি এবং অর্থনীতিতে তাদের অংশগ্রহণ বাংলাদেশের খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের।
বিপরীতে, ঠিক পাশের দেশ ভারতেই দেখা যায় উল্টো চিত্র। উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও ১৯ কোটি ৫০ লাখ ক্রম-ক্ষুধার্ত মানুষ নিয়ে জাতিসংঘের ক্ষুধা-বিষয়ক প্রতিবেদনে সবচেয়ে উপরে রয়েছে ভারত। বিশ্বের মোট অনাহারী মানুষের এক-চতুর্থাংশই এখন ভারতে। এছাড়াও অর্ধাহারে বা পর্যাপ্ত খাবার না পাওয়া মানুষের সংখ্যার বিচারেও ভারত সবার উপরে।
অন্যদিকে চীন ক্ষুধামুক্ত করার পথে গত এক দশকে দুই-তৃতীয়াংশ অগ্রগতি দেখিয়েছে।
বাংলাদেশের জন্য এতসব ভাল খবরের পরও জাতিসংঘ এবং বিশেষজ্ঞরা কয়েকটি বিশেষ ব্যর্থতার দিকেও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণটি হলো শিশুদের পুষ্টিহীনতা। পুষ্টির অভাবে বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি শিশুর বয়সের তুলনায় উচ্চতা কম। এই বিষয়টিকে আশঙ্কাজনক বলে উল্লেখ করা হয়েছে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে।
ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউট (আইএফপিআরআই)-এর বাংলাদেশ দপ্তরের স্ট্র্যাটেজি সাপোর্টের প্রধান আখতার আহমেদ খাদ্য সরবরাহের বিচ্ছিন্নতা, মূলত প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে, সবমিলিয়ে পুষ্টিহীনতাকে বলছেন ‘লুকিয়ে থাকা দারিদ্র্য’।
২০৩০ সালের মধ্যে ক্ষুধামুক্ত করতে হলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিসহ অন্যান্য উন্নয়নসূচকের সঙ্গে এই লুকানো দারিদ্র্য মোকাবেলাই বাংলাদেশের জন্য মূল চ্যালেঞ্জ হবে বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
এসআরজে