দুই-একদিনের মধ্যেই হাসপাতাল ছাড়তে পারবেন ঢাবি ছাত্রী

রাজধানীর কুর্মিটোলায় ধর্ষণের শিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে দুই-একদিনের মধ্যেই হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া হবে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন।

তিনি বলেছেন, আজ মেয়েটির গুরুত্বপূর্ণ কোনো ট্রমা নেই। সে আগের ট্রমা কাটিয়ে উঠেছে। তার স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়েছে। বোর্ড চিকিৎসকরা বললে তাকে দু-একদিনের মধ্যে ছেড়ে দেয়া হবে।

একই সময় ঢাকা মেডিকেলে ঢাবির ছাত্রীকে দেখে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাসিমা বেগম।

তিনি বলেন, এ ঘটনার নিন্দা জানানোর ভাষা আমার নেই। আমরা মেয়েটির সঙ্গে কথা বলেছি। সে ধর্ষককে দেখেছে। চেহারা দেখলে চিনতে পারবে।

তিনি আরও বলেন, যেহেতু মেয়েটি আসামির বর্ণনা দিতে পারছে, তাই তার বর্ণনা অনুযায়ী ধর্ষকের স্কেচ প্রস্তুত করা উচিত। এরপর আলামত ও ডিএনএ টেস্ট করলে আসামিকে গ্রেফতার করা যাবে।

মানবাধিকার কমিশনার বলেন, ডিএনএ ল্যাবটি মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত। এটি অধিদফতর গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। ডিএনএ আইনে স্পষ্ট বলা আছে- আমাদের সবার ডাটাবেজ থাকবে সেখানে। ডিএনএ অধিদফতর গঠনের বিষয়টি সচিব কমিটির মাধ্যমে পেন্ডিং আছে। আশাকরি দ্রুত এটি গঠন এবং ন্যাশনাল ডাটাবেজ গঠন হবে। যদি সবার ডিএনএ ডাটাবেজ থাকত তাহলে এই মেয়েটির কাছ থেকে যে আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে তার মাধ্যমেই ইতোমধ্যে আসামি শনাক্ত করা যেত। এ জন্য আমরা মহিলাবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও সরকারের কাছে আশা করব দ্রুত যেন এটি গঠন করে।

তিনি বলেন, এ ঘটনাটি অবশ্যই মানবাধিকার লঙ্ঘন। এর নিন্দা জানানোর ভাষা নেই। আমরা শুধু নিন্দা ও উদ্বেগ জানাব এটিই শেষ না। এটির নিরসন হওয়া উচিত। নারী-পুরুষ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে যাতে এ ঘটনা বন্ধ হয়।

কমিশনার বলেন, আসামির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। মেয়েরা কি এতই সহজ যে, শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই যৌন সহিংসতার শিকার হবে। এখানে ওসিসিতে পুলিশ, ডাক্তার ও অ্যাডভোকেট আছেন, মেয়েটিকে সবধরনের সহায়তা করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি।

এদিকে এ ঘটনায় কুর্মিটোলায় সড়কের পাশের দুটি সিসিটিভি ফুটেজ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিনার (ডিসি) সুদীপ কুমার চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে দ্রুত প্রকৃত অপরাধীকে শনাক্ত করা হবে।

মঙ্গলবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

ডিসি সুদীপ কুমার বলেন, ঘটনাস্থলের আশপাশের দুটি সিসিটিভির ফুটেজ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সেগুলো তদন্ত করা হচ্ছে। এই মামলাটি তদন্তের জন্য মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি-উত্তর বিভাগ) কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

এদিকে ডিবি উত্তরের ডিসি মশিউর রহমান মামলার হস্তান্তরের বিষয়টি নিশ্চিত করলেও মামলার সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

রোববার সন্ধ্যায় কুর্মিটোলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস থেকে নেমে যাওয়ার পর তাকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ করেন ওই ছাত্রী। সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে ঢাবির নিজস্ব বাসে রওনা দেন তিনি। সন্ধ্যা ৭টার দিকে তিনি কুর্মিটোলা বাসস্ট্যান্ডে বাস থেকে নামেন।

এরপর একজন অজ্ঞাত ব্যক্তি তার মুখ চেপে ধরে সড়কের পেছনে নির্জন স্থানে নিয়ে যায়। ধর্ষণের পাশাপাশি তাকে নির্যাতনও করা হয়। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের ক্ষতচিহ্ন পাওয়া গেছে।

ধর্ষণের এক পর্যায়ে তিনি অজ্ঞান হয়ে যান। রাত ১০টার দিকে নিজেকে একটি নির্জন জায়গায় আবিষ্কার করেন ওই ছাত্রী। পরে সিএনজি নিয়ে ঢামেকে আসেন। রাত ১২টার দিকে ওই ছাত্রীকে ঢামেক হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করান তার সহপাঠীরা।

এ ঘটনায় কুর্মিটোলা থেকে ঘটনার গুরুত্বপূর্ণ আলামত উদ্ধার করেছে পুলিশ। এছাড়াও ঢামেক ফরেনসিক বিভাগ ছাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত পেয়েছে

এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর বাবা ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা করেছেন। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী শাহান হক জাগো নিউজকে বলেন, মামলার এজাহারে মেয়েটিকে একজন ধরে নিয়ে ধর্ষণ করে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আসামিকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

এআর/বিএ/পিআর

টাইমলাইন  

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।