নিউ নরমাল লাইফে মাস্কের বালাই নেই কারওয়ান বাজারে!
কোভিড-১৯ এর ভীতি কাটিয়ে রাজধানীর পাইকারিবাজারখ্যাত কারওয়ান বাজার নিউ নরমাল লাইফে অভ্যস্ত হলেও করোনা সংক্রমণরোধে মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ন্যূনতম বালাই নেই। কাকডাকা ভোর থেকে হাজার হাজার ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগম ও হাকডাকে কারওয়ান বাজারের বিভিন্ন সড়ক ও স্থাপনা মুখরিত থাকলেও মুখে মাস্ক পরিধান, নির্দিষ্ট দূরত্ব (কমপক্ষে তিনফুট) বজায় রাখা, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার কিংবা সাবান দিয়ে ঘনঘন হাতধোয়া তথা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ বেমালুম ভুলে গেছেন কারওয়ানবাজারের ছোট-বড় ব্যবসায়ীরা। হাতেগোনা দু’চারজন বিক্রেতা ছাড়া প্রায় শতভাগ ব্যবসায়ী ন্যূনতম স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন না। শুধু বিক্রেতারাই নন, ক্রেতাদের অবস্থাও তথৈবচ।
রোববার (১৮ অক্টোবর) সরেজমিন কারওয়ান বাজার ঘুরে এমন দৃশ্যেই চোখে পড়েছে। সকাল সাতটায় বাজার ঘুরে দেখা গেছে করোনা ভীতি কাটিয়ে নিউ নরমাল লাইফে অভ্যস্ত ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা সকলেই ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। কেউ ট্রাক থেকে মাল নামাচ্ছেন, কেউ কার্টন খুলে শাক-সবজি ও ফলমূল সাজাচ্ছেন আবার কেউবা দরদাম শেষে পাল্লায় মালামাল কেনায় ব্যস্ত। বলতে গেলে তাদের কারও মুখেই মাস্ক নেই। ক্রেতা-বিক্রেতারা ন্যূনতম শারীরিক দূরত্ব পালন করছেন না। বিভিন্ন পণ্যের দোকানের সামনে পাঁচ সাতজন জটলা পাকিয়ে উঁচু গলায় দরদাম ও কেনাকাটা করছেন।
আবুল কালাম নামে মধ্যবয়সী এক বিক্রেতা ২০০ টাকা পাল্লা দরে (৫ কেজিতে এক পাল্লা) শসা বিক্রি করছিলেন। মাস্ক পরিহিত এক ক্রেতা শসার দাম জানতে চাইলে আবুল কালাম উচু গলায় বলেন, ‘স্যার, এই বাজারে করোনা নাই। দেখেন না আমরা কেউ মাস্ক পরি না। মাস্কটা খুলে কথা বলেন, কথা ঠিকমতো বোঝা যায় না!’
শসা বিক্রেতার এমন কথা শুনে লালবাগের বাসিন্দা সুলতান মিয়া বলেন, ‘বাজারে ঢুইক্যা তো ব্যাক্কল হইয়া গেলাম। এহানে তো মাস্কের বিন্দুমাত্র বালাই নাই। একা মাস্ক পইরা নিজেরে কেমন ব্যাক্কল ব্যাক্কল লাগতাছে!’
বর্তমানে রাজধানীসহ সারাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কিছুটা কমে এসেছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় মাত্র এক হাজার ২০৯ জন। মৃত্যু হয়েছে ২৩ জনের। রোগতত্ত্ব ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মহামারি করোনাভাইরাসের সেকেন্ড ওয়েভে সংক্রমণের আশঙ্কা করছেন।
করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ তথা প্রতিরোধে তারা ঘরে-বাইরে সর্বত্র সার্বক্ষণিক মাস্ক পরিধানসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে কঠোর সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দিচ্ছেন।
সম্প্রতি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জনস্বাস্থ্য শাখার অতিরিক্ত সচিব মো. মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গঠিত ব্যবস্থাপনা গ্রুপের পঞ্চম সভায় সকল শ্রেণি ও পেশার যেন মুখ মাস্ক পরিধান করে সে ব্যাপারে গুরত্বারোপ করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিন পুলিশ (ডিএমপি) এর সহায়তা ছাড়া ঢাকা শহরের রাস্তা, মার্কেট ও পাবলিক প্লেসে মাস্ক পরিধান বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়।
এমইউ/এসএইচএস/পিআর