ভ্যাকসিন : আইসিডিডিআর,বির বিরুদ্ধে ‘সময়’ নষ্টের অভিযোগ গ্লোবের
অডিও শুনুন
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের শুরুর পর থেকে টিকার জন্য অধির আগ্রহে অপেক্ষায় বিশ্ববাসী। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের টিকা উদ্ভাবনের একমাত্র দাবিদার গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড। প্রাণী দেহে সফলতার পর মানবদেহে পরীক্ষার জন্য সিআরও প্রতিষ্ঠান হিসেবে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) সঙ্গে চুক্তি করেছিল গ্লোব বায়োটেক। তবে আইসিডিডিআর,বি ইচ্ছা করে গ্লোব বায়োটেকের দুই মাস সময় নষ্ট করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
রোববার (৩ জানুয়ারি) দুপুরে জাগো নিউজের কাছে এমন অভিযোগ করেছেন গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডের রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ডিপার্টমেন্টের অ্যাসিসটেন্ট ম্যানেজার অ্যান্ড ইনচার্জ ড. আসিফ মাহমুদ।
এদিকে ইচ্ছা করে সময় নষ্টের অভিযোগে ইতোমধ্যে আইসিডিডিআর,বির সঙ্গে চুক্তি বাতিল করেছে গ্লোব বায়োটেক। নতুন সিআরও প্রতিষ্ঠান হিসেবে সিআরও বাংলাদেশ নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গ্লোব বায়োটেক চুক্তি করেছে। এতে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এবং ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর (ডিজিডিএ) থেকে বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানীরা থাকবেন।
গ্লোব বায়োটেক টিকা উদ্ভাবন দাবির পরপরই আশা প্রকাশ করেছিল, ডিসেম্বর কিংবা জানুয়ারির মধ্যে তারা বাজারে টিকা নিয়ে আসবে। অথচ এখন পর্যন্ত তারা মানবদেহে টিকার ট্রায়ালই শুরু করতে পারেনি। তবে তারা আশা করছে, জানুয়ারির মধ্যেই তারা মানবদেহে ট্রায়াল শুরু করতে পারবে। এ অবস্থায় গ্লোবের টিকা বাজারে আসতে ছয় মাসের মতো সময় লাগবে।
এ বিষয়ে ড. আসিফ মাহমুদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের নিজেদের দেশের একমাত্র ভ্যাকসিন হিসেবে এটাকে এগিয়ে নেয়ার জন্য সবার সার্বিক সহযোগিতাই আমরা কামনা করেছিলাম। কিন্তু আইসিডিডিআর,বির সঙ্গে যে চুক্তি করেছিলাম, ওরা আমাদের দুই মাস সময় নষ্ট করেছে। আসলে তারা অগ্রগতি তেমন কিছুই করে নাই। আমরা তো চুক্তি করেছিলাম ওরা আমাদের হিউম্যান ট্রায়াল করবে। কিন্তু তাদের অভ্যন্তরীণ যে কিছু রেগুলেশন, পলিসি; সেগুলো দেখিয়ে তারা ইচ্ছা করে দেরি করেছে। এ কারণে আমরা ওদের সঙ্গে চুক্তিটা বাতিল করেছি।’
‘যারা আমাদের প্রয়োজনীয়তাটা বুঝতে পারছে না, দেশের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারছে না, তাদের সঙ্গে কাজ করে লাভ হবে না। আইসিডিডিআর,বি যেহেতু বিদেশি অনুদানে চলে, ওরা আসলে দেশের ব্যাপারটা ওইভাবে গুরুত্ব দেয়নি’, যোগ করেন ড. আসিফ মাহমুদ।
স্বাস্থ্য সচিবও একই কথা বলেছেন বলেও উল্লেখ করেন আসিফ মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য সচিব বলেছেন, আইইডিসিআর এবং ডিজিডিএ তাদের সঙ্গে মিলে যেন আমরা মানবদেহে পরীক্ষা করি। সেভাবেই আমরা এগিয়েছি। তার পরিপ্রেক্ষিতে একটা বিশেষ দল এসে আমাদের অডিট করেছে। আমাদেরকে ক্লিনিক্যাল ডোজ ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের লাইসেন্স দিয়েছে। এই অগ্রগতিগুলো আমাদের হয়েছে। আশা করছি, ১০ জানুয়ারির মধ্যে আমরা বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদে (বিএমআরসি) জমা দিতে পারবো।’
জানুয়ারিতেই মানবদেহে ট্রায়াল শুরু করতে পারবে বলেও আশা গ্লোব বায়োটেকের।
গ্লোবের টিকা উদ্ভাবক দলের এই সদস্য বলেন, ‘প্রাণী দেহে যে পরীক্ষা হয়েছে সেটার ফল খুবই আশানুরূপ হয়েছে। মানবদেহে ট্রায়াল আরও দুই-তিন মাস আগেই শুরু করতে পারতাম আমরা কিন্তু বিভিন্ন কারণে আমরা সেটা করতে পারিনি। এটা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক।’
আসিফ মাহমুদ আরও বলেন, ‘সরকার ৬০০ কোটি দিয়ে ভ্যাকসিন কিনে আনছে। তা দিয়ে সব মানুষকে টিকা দেয়া যাবে না। তাছাড়া ভাইরাস সহসা পৃথিবী থেকে চলে যাবে এমন না। একটা নির্দিষ্ট সময় পরপর ভ্যাকসিন আমাদেরকে নিতে হবে। সেক্ষেত্রে নিজেদের একটা ভ্যাকসিন থাকলে এতে অনেক উপকার আছে। আমাদের যদি আরও ৫/৬ মাস দেরিও হয়, তাহলে আমাদের দেশের ভ্যাকসিনটা দেশের মানুষ পেলে ভালো হবে।’
পিডি/এআরএ/এমকেএইচ