‘আগুন দেখেই রোগী ফেলে দৌড়ে চলে যান চিকিৎসক-নার্সরা’
অডিও শুনুন
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নতুন ভবনের তৃতীয় তলায় করোনা আক্রান্তদের জন্য বরাদ্দ নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) আজ সকালে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মৃত তিনজনের মধ্যে একজন গোলাম মোস্তফা (৬৬)। এ ঘটনায় হাসপাতালের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেছেন তার ছেলে গোলাম মারুফ।
তিনি বলেছেন, ‘ঢাকা মেডিকেলের আইসিইউতে অগ্নিনির্বাপণে পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি ও প্রশিক্ষিত দক্ষ জনবলের অভাব, তথা সার্বিক অব্যবস্থাপনার কারণেই আমার বাবাকে আগুনে পুড়ে মরতে হলো।’
গোলাম মারুফ অভিযোগ করে বলেন, ‘আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে আইসিইউর কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সরা প্রাণভয়ে দৌড়ে পালিয়ে যান। কেবিন থেকে দৌড়ে আইসিইউর সামনে যেতেই দেখি চারদিকে শুধু কালো ধোঁয়া। মুমূর্ষু রোগীদের উদ্ধারের জন্য তখন সেখানে কেউ ছিল না। পরে ফায়ার সার্ভিস এসে বাবাকে উদ্ধার করে। কালো ধোঁয়ার কারণে বাবাকে চিনতেই পারছিলাম না। করোনার চিকিৎসা নিতে এসে অব্যবস্থাপনার কারণে বাবাকে আগুনে পুড়ে মরতে হলো।’
মৃত গোলাম মোস্তফার ভাই কাজী শফিকুল ইসলাম
গোলাম মোস্তফার ভাই কাজী শফিকুল ইসলাম জানান, ‘তার ভাই (গোলাম মোস্তফা) ওয়াপদার নির্বাহী প্রকৌশলী। গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর জেলার কচুয়া থানার উজানী গ্রামে। তিনি উত্তরার দক্ষিণখানের বাসিন্দা। গত ১২ মার্চ করোনা আক্রান্ত গোলাম মোস্তফাকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পর থেকে তার শারীরিক অবস্থা ক্রমশ উন্নতির দিকেই যাচ্ছিল। ভেবেছিলাম করোনামুক্ত হওয়ার পর ভাইকে বাড়িতে নিয়ে যাবো। ভাবতে পারিনি যে ভাই আগুনে পুড়ে মারা যাবেন।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘বিশ্বের যেকোনো দেশের আধুনিক আইসিইউতে অগ্নিনির্বাপণের সুব্যবস্থা থাকে। কিন্তু ঢামেক হাসপাতালে তা নেই, যা খুবই দুঃখজনক।’
আগুনে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি পুড়ে গেছে
এদিকে তিনজনের কেউ আগুনে পুড়ে মারা যাননি বলে জানিয়েছেন ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক। তিনি বলেছেন, ‘যে তিনজন রোগী মারা গেছেন তাদের কেউ অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যাননি। আগুন লাগার পর পরই হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ডবয় ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ছুটে এসে করোনা আইসিইউতে ভর্তি ১৪ জন রোগীকে দ্রুত সেখান থেকে সরিয়ে হাসপাতালের অন্যান্য আইসিইউতে স্থানান্তর করেন।’
নাজমুল হক আরও বলেন, ‘করোনা রোগীদের এমনিতেই শ্বাসকষ্টের কারণে অক্সিজেন সাপোর্ট লাগে। দুর্ঘটনাবশত অগ্নিকাণ্ডের কারণে অক্সিজেনের অভাবে তাদের মৃত্যু হতে পারে।’
শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে জানিয়েছে ঢামেক কর্তৃপক্ষ
বৃহস্পতিবার সকালে দুর্ঘটনাকবলিত ঢামেক হাসপাতালের আইসিইউ ঘুরে দেখা গেছে, আইসিইউ বেড, মনিটর, হাইফ্লো অক্সিজেন মেশিন ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রপাতিহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি পুড়ে গেছে।
ঢামেক হাসপাতালের আইসিইউতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে চার সদস্যের কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স সদর দফতর। বুধবার অধিদফতরের উপ-পরিচালক (অ্যাম্বুলেন্স) নূর হাসানকে প্রধান করে এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে রয়েছেন একজন ডিএডি ও দুজন ইন্সপেক্টর।
এমইউ/এমএসএইচ/এএসএম