লকডাউন শিথিলের সিদ্ধান্তে কমিটির উদ্বেগ, ১৪ দিন বাড়ানোর সুপারিশ
সারাদেশে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। এমতাবস্থায় লকডাউন শিথিল করার সরকারি সিদ্ধান্তে করোনা সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি উদ্বেগ প্রকাশ করে চলমান লকডাউন আরও ১৪ দিন বাড়ানোর সুপারিশ করেছেন। পাশাপাশি পঞ্চাশোর্ধ অসুস্থ ব্যক্তিদেরকে পশুর হাটে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা
১২ জুলাই অনুষ্ঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ’র সভাপতিত্বে কমিটির ৪১তম সভায় বিস্তারিত আলোচনা শেষে এ সুপারিশ করা হয়। বুধবার (১৪ জুলাই) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানায় কমিটি।
কমিটির ছয় দফা সুপারিশ হলো-
১. সারাদেশে কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। এমতাবস্থায় লকডাউন শিথিল করার সরকারি সিদ্ধান্তে কমিটি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি চলমান কঠোর লকডাউন আরও ১৪ দিন বাড়ানোর সুপারিশ করেন।
২. লকডাউনের অংশ হিসেবে কমিটি কোরবানির হাট বন্ধ রাখার প্রস্তাব করেন, প্রয়োজনে ডিজিটাল হাট পরিচালনার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তবে সরকার লকডাউন শিথিল করে সীমিত পরিসরে কোরবানির হাট পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিলে সেক্ষেত্রে সংযুক্ত বিধিনিষেধগুলো প্রয়োগের বিষয়ে সুপারিশ করা হয়।
৩. সরকার সারাদেশে কোভিড-১৯ পরীক্ষার সংখ্যা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি করছে, যা সন্তোষজনক। জাতীয় পরামর্শক কমিটির পূর্ববর্তী সভার সুপারিশের প্রেক্ষিতে বেসরকারি পর্যায়ে আরটি পিসিআর পরীক্ষার মূল্য পুনঃনির্ধারণ করায় সভায় সরকারকে ধন্যবাদ জানানো হয়। দৈনিক পরীক্ষার সংখ্যা আরও বৃদ্ধির জন্য বেসরকারি পর্যায়েও টেস্ট বৃদ্ধি প্রয়োজন, এ লক্ষ্যে টেস্টের জন্য প্রয়োজনীয় কিটের দাম আরও হ্রাস পাওয়ায় আরটি-পিসিআর পরীক্ষার মূল্য কমিয়ে ১০০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে নির্ধারণের পরামর্শ দেয়া হয়।
৪. বর্তমানে অনেক কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে শয্যার অতিরিক্ত রোগী ভর্তি আছে। যার ফলশ্রুতিতে চিকিৎসা নিশ্চয়তার লক্ষ্যে ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপন অতীব জরুরি। তবে স্বাস্থ্য অধিদফতর ইতোমধ্যেই বিভিন্ন পর্যায়ে ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। উক্ত উদ্যোগকে সভায় অভিনন্দন জানানো হয় এবং দ্রুত বাস্তবায়নের অনুরোধ করা হয়।
৫. সরকারের অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণে দেশে অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার পর ফাইজার, মডার্না ও সিনোফার্ম থেকেও করোনার টিকাপ্রাপ্তি নিশ্চিত হয়েছে এবং আবারও সারাদেশে একযোগে ভ্যাকসিন কার্যক্রম শুরু হওয়ায় সরকারকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হয়। দ্রুত আরও বেশি মানুষকে টিকার আওতায় আনার উদ্দেশ্যে টিকার বয়সসীমা ১৮-তে নামিয়ে আনা, এনআইডিবিহীন জনসাধারণকে টিকার আওতায় আনা, রেজিস্ট্রেশন সহজীকরণ ইত্যাদি বিষয়ে সরকারকে অতিদ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের অনুরোধ করা হয়।
৬. কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে গৃহীত সরকারের পদক্ষেপসমূহকে সাফল্যমণ্ডিত করার লক্ষ্যে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়।
এছাড়া কমিটির সদস্যরা ঈদুল আজহা ও কোরবানি হাটের জন্য নিম্নোক্ত সুপারিশ করেন।
জুলাইয়ের তৃতীয়/চতুর্থ সপ্তাহে ঈদুল আজহার সময় শহর এলাকায় কোরবানির পশুর হাট বসার অনুমতি না দেয়া; শারীরিক দূরত্ব ও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখে উন্মুক্ত স্থানে কোরবানির পশুর হাট বসানোর অনুমতি দেয়া যেতে পারে; বয়স্ক ব্যক্তি (৫০ বছর বা তার বেশি) এবং অন্য কোনো রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির কোরবানির হাটে না যাওয়া; হাটে প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য নির্দিষ্টভাবে আলাদা পথ রাখা; বাজারে আসা সবার জন্য মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা।
জনসাধারণকে ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে না গিয়ে যে যেখানে আছেন, সেখানে অবস্থান করার বিষয়ে উৎসাহিত করা; জনসাধারণের অনলাইন কোরবানির হাটের সুবিধা গ্রহণ উৎসাহিত করা; বাড়ির আঙিনায় কোরবানি না করে সিটি করপোরেশন কর্তৃক নির্ধারিত স্থানে কোরবানির পশু জবাই করা এবং ঈদুল আজহার নামাজের জামাত সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করা।
এমইউ/এআরএ