ভবিষ্যতে মহামারি মোকাবিলায় বৈশ্বিক চুক্তির আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
অডিও শুনুন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভবিষ্যতে মহামারি মোকাবিলায় একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায়সঙ্গত সাড়া প্রদানের জন্য ‘মহামারি চুক্তি’তে পৌঁছার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে মহামারি মোকাবিলার লক্ষ্যে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায়সঙ্গত সাড়া প্রদানের জন্য আমাদের অবশ্যই মহামারি চুক্তিতে পৌঁছাতে কাজ করতে হবে।’
রোববার (২২ মে) ৭৫তম বিশ্ব স্বাস্থ্য অ্যাসেম্বলির উচ্চপর্যায়ের অধিবেশনে সম্প্রচারিত একটি ভিডিও বার্তায় প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।
সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় রোববার এ অ্যাসেম্বলির উদ্বোধন করা হয়। এ অ্যাসেম্বলি চলবে আগামী ২৮ মে পর্যন্ত। করোনাভাইরাস মহামারির পর এটিই প্রথম ইন-পারসন স্বাস্থ্যবিষয়ক বড় অ্যাসেম্বলি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখনো সারা বিশ্বে জীবন ও জীবিকার ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে করোনাভাইরাস মহামারি। লাখ লাখ মানুষকে টিকাদানের প্রচেষ্টার বাইরে রেখে টেকসইভাবে পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে ভ্যাকসিন উৎপাদন বাড়াতে প্রযুক্তি এবং কারিগরি জ্ঞান শেয়ার করা দরকার।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার স্বাস্থ্যসেবা, আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার সমন্বয়ের মাধ্যমে মহামারির হুমকি মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছে। আমরা ২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে ২৮টি উদ্দীপনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছি, যা জিডিপির প্রায় ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। প্রায় ৪০ মিলিয়ন ঝুঁকিপূর্ণ মানুষকে নগদ ও অন্যান্য সহায়তা দিয়েছি। আমরা জনগণকে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন সরবরাহ করেছি।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জন্য সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ আশ্রয় শিবিরে মহামারি নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার জাতীয় বাজেট থেকে ভ্যাকসিন সংগ্রহের জন্য ১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ করেছে। লক্ষ্য অনুযায়ী জনসংখ্যার শতভাগেরও বেশি লোককে ইতোমধ্যে টিকা দেওয়া হয়েছে। আমরা ফ্রন্টলাইনে থেকে যারা পরিষেবা দিয়েছেন, তাদের নিবেদিতপ্রাণ কাজের জন্য কৃতজ্ঞ।’
বাংলাদেশ ওষুধ, পিপিই ও স্বাস্থ্যকর্মী পাঠিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোর পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি যে, ভ্যাকসিনকে বিশ্বব্যাপী গণসামগ্রী হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। বিশ্ব সম্প্রদায়কে অবশ্যই ব্যাধির চাপের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের বিষয়ে বাড়তি মনোযোগ দিতে হবে।’
অবহেলিত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রোগসহ চিকিৎসা গবেষণায় সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ প্রস্তুত রয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সকে সমন্বিতভাবে মোকাবিলা করতে হবে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অসংক্রামক রোগের বিস্তারের বিষয়ে আমাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখতে হবে। ক্যানসার ও ডায়াবেটিসের মতো রোগের বিষয়ে গবেষণা ও চিকিৎসা লাভের সুবিধার জন্য সবাইকে আরও বিনিয়োগ করতে হবে।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলোকে আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় জরুরি সাড়া প্রদানের অংশ হিসাবে সমাধান করা উচিত। আমরা সড়ক দুর্ঘটনা, ডুবে মারা যাওয়া এবং অন্যান্য জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক সহায়তা চাই। প্রথাগত ওষুধের গবেষণা ও মান বজায় রাখার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য ভারত সরকার এবং ডব্লিউএইচও-কে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ সব বয়সের মানুষের জন্য সুস্থ জীবনযাপনের লক্ষ্যে এসডিজি-৩ অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা ১৮ হাজারের বেশি কমিউনিটি ক্লিনিক এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মাধ্যমে জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছি। সরকার সক্রিয়ভাবে শিশুপুষ্টি নিয়ে কাজ করছে। ২০০৭-২০১৯ সালের মধ্যে স্টান্টিং এবং অপচয় উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে ‘
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ২০২২ সালের শেষ নাগাদ দক্ষ ধাত্রীদের দ্বারা ৬৫ শতাংশ প্রসব এবং ২০২২ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ প্রসবপূর্বসেবা নিশ্চিত করা। অবশ্যই ডব্লিওএইচওকে টেকসই অর্থায়ন করতে হবে। বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় সহায়তা দিতে সংস্থাটিকে আরও সক্ষম করে তুলতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে। বাংলাদেশ জনস্বাস্থ্য ও কূটনীতির জন্য অগ্রাধিকারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ভূমিকা পালন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
অ্যাসেম্বলিতে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বক্তৃতা করেন। অন্যদের মধ্যে আরও বক্তৃতা করেন কেনিয়া, বতসোয়ানা ও ক্রোয়াশিয়ার প্রেসিডেন্ট এবং ইকুয়েডরের ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রমুখ।
এএএইচ