‘চাকরিতে বেতন কম, মাসে একটি ডাকাতি করলে বেশি টাকা’
রাজধানীর লালবাগসহ ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় স্বর্ণের দোকান, বাস ও পণ্যবাহী ট্রাকে ডাকাতি করে আসছিল একটি চক্র। বিভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে ডাকাতির সময় হত্যার মতো ঘটনাও ঘটিয়েছে চক্রের সদস্যরা।
গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে থাকা ডাকাত সরদাররা নতুন করে দল গোছায়। কারাগারে থাকা বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের প্রলোভন দেখিয়ে নতুন সদস্যদের নিয়ে দল গড়ে আবারও ডাকাতির পরিকল্পনা করে। করোনার কারণে চাকরিতে বেতন কম, কিন্তু মাসে একটি ডাকাতি করলে তার চেয়ে বেশি টাকা পাওয়া যাবে এমন প্রলোভন দেখাতো কারাগারে থাকা ডাকাতরা।
এরই ধারাবাহিকতায় আন্তঃজেলা ডাকাত চক্রটিকে ধরতে নজরদারি বৃদ্ধি করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগ। পরে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পুরান ঢাকার মিডফোর্ড এলাকায় ডাকাতির প্রস্তুতির সময় অভিযান চালিয়ে ডাকাত দলের ১১ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতাররা হলেন- সুমন চৌকিদার ওরফে সুমন মিয়া (৩৪), মো. মোস্তফা (৩২), মো. আরিফ হোসেন (৩৪), মো. পলাশ (৩২), মো. করিম (২৫), মো. হাসান (১৮), রিপন ওরফে আকাশ (২৪), জয়নাল আবেদিন (৩১), মো. ওমর ফারুক ফয়সাল (২০), রাসেল (২৪) ও মো. হাফিজুল ইসলাম (৩৩)।
এ সময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতিতে ব্যবহৃত বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগজিন, দুই রাউন্ড গুলি, বড় ছোরা, রামদা, দুটি চাপাতি, পাটের রশি, গামছা ও ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত পাঁচটি সিএনজি ও একটি পিকআপ ভ্যান জব্দ করা হয়। এসব গাড়িতে করে বিভিন্ন সময় ডাকাতি করে নিজেরাই ব্যবহার করছিলো।
বুধবার (২৭ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর মিন্টু রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে একটি ডাকাত দল রাজধানীর লালবাগ, নারায়ণগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ, সাভার ও গাজীপুর এলাকায় আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে স্বর্ণের দোকান, বাস ও ট্রাকে ডাকাতি করে আসছিল। তাদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি অভিযোগ আসে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে। পরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগ অভিযান চালিয়ে আজ বুধবার জুলাই ভোর রাতে পুরান ঢাকার মিডফোর্ড এলাকায় ডাকাতির প্রস্তুতির সময়ে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতার চক্রের মূলহোতা সুমিন চৌকিদার ওরফে সুমন মিয়া ডাকাতি করতে গিয়ে একটি স্বর্ণের দোকানের কর্মচারীকে হত্যা করে। ডাকাত দলের প্রধান সুমনের বিরুদ্ধে হত্যা ও ডাকাতিসহ বিভিন্ন থানায় ১৬টি মামলা ও পাঁচটি গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। পাশাপাশি গ্রেফতার দলের অন্য সদস্যদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। গ্রেফতাররা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ডাকাতি ও হত্যার কথা স্বীকার করেছে।
ডাকাত দলগুলো কীভাবে বিদেশি অস্ত্র পাচ্ছে জানতে চাইলে ডিবি প্রধান বলেন, তারা অস্ত্র কীভাবে পেলেন জানার জন্য রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাবাদ করা হবে।
ডাকাত প্রতিরোধে থানা পুলিশের পাশাপাশি ডিবি সতর্ক রয়েছে জানিয়ে হারুন অর রশীদ বলেন, গোয়েন্দা পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে যাওয়া ডাকাত সরদাররা নতুন করে দল গোছায়। তারা বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে নতুন নতুন সদস্যদের নিয়ে দল গড়ে আবারও ডাকাতি করে। করোনার কারণে চাকরিতে বেতন কম, কিন্তু মাসে একটা ডাকাতি করলে তার চেয়ে বেশি টাকা পাওয়া যাবে এমন প্রলোভন দেখাতো ডাকাত দলের সদস্যরা।
ডাকাত দলের নেতা সুমনের বিরুদ্ধে খুন, ডাকাতি, দস্যুতাসহ ১৬টি মামলা ও ৫টি গ্রেফতারি পরোয়ানা ছিল বলেও জানান গোয়েন্দা পুলিশের এই কর্মকর্তা।
টিটি/এমআরএম/এএসএম