বাহাদুর শাহ পার্কের ভেতরে হচ্ছে খাবারের দোকান, স্থানীয়দের ক্ষোভ

পুরান ঢাকার প্রাচীনতম একমাত্র পার্ক বাহাদুর শাহ পার্ক। এ এলাকার ঘিঞ্জি পরিবেশে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য আশপাশের লোকজন এখানে এসে জড়ো হন। কিন্তু ঐতিহ্য হারাতে বসেছে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা পার্কটি। পার্কের ভেতরে নির্মাণ করা হচ্ছে একটি স্থায়ী ‘ফুড ভ্যান’। পার্কের ঠিক মাঝখানে খাবারের দোকান (ফুড ভ্যান) করার জন্য একব্যক্তিকে ইজারা দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। তবে, ঐতিহাসিক এ পার্কের ভেতরে বাণিজ্যিকভাবে খাবারের দোকান নির্মাণকাজ শুরু করায় ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকালে খাবারের দোকান তৈরির কাজ বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন এলাকাবাসী। এসময় ‘ফুড ভ্যান’ তৈরির মূল অবকাঠামোটি ভেঙে দেন তারা। এছাড়া নির্মাণকাজ বন্ধে বিভিন্ন কর্মসূচি ও হাইকোর্টে রিট করবেন বলেও জানান।
পুরান ঢাকায় উন্মুক্ত স্থান না থাকায় ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকা পার্কটিতে নিয়মিত স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে আসেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। এছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিপরীক্ষা, চাকরির নিয়োগ পরীক্ষা ও স্কুল-কলেজের বোর্ড পরীক্ষার জন্য আসা শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা পার্কে অপেক্ষা করেন। ফলে স্থানীয়দের ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য পার্কটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সরেজমিনে দেখা যায়— পার্কের ভেতরে লোহা ও স্টিলের পাত দিয়ে তৈরি হচ্ছে ‘ফুড ভ্যান’টি। এরই মধ্যে দৃশ্যমান ফুড ভ্যানের কাঠামো। বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) স্থানীয়রা বাধা দেওয়ার পরেও বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) পুলিশের উপস্থিতিতে চলছে নির্মাণকাজ। কাজের জন্য সেখানে দুটো ব্যানার টাঙিয়ে রেখেছেন শ্রমিকরা। যাতে লেখা রয়েছে- ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন অনুমোদিত ও ইজারা নেওয়া ‘ফুড ভ্যান’ নির্মাণের কাজ চলছে।
এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) নাট্যকলা বিভাগের স্নাতক শেষবর্ষের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার জাগো নিউজকে বলেন, ‘দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষের প্রবেশদ্বার ও রাজধানীর ব্যস্তময় বাণিজ্যিক এলাকার মানুষের একটু প্রশান্তির নাম বাহাদুর শাহ পার্ক। যেখানে ঢাকায় পর্যাপ্ত মাঠ, পার্ক, বিনোদন কেন্দ্রের অভাব। সেখানে প্রাচীনতম এ পার্কের ভেতরে খাবারের দোকান নির্মাণ করা ঠিক হচ্ছে না। যদি সিটি করপোরেশন এটি নির্মাণের সিদ্ধান্তে অটল থাকে তা হবে একটি নির্লজ্জ কাজ।
তিনি আরও বলেন, এভাবে চলতে থাকলে এ পার্ক বাণিজ্যিক হয়ে যাবে। আজকে খাবারের দোকান, কাল পার্কে প্রবেশে ফি যুক্ত হবে। এভাবে আরও ছোট ছোট টি স্টল বসবে। এভাবেই এক সময় এ বাহাদুর শাহ পার্ক ঐতিহ্য হারাবে।পুরান ঢাকার প্যারিদাস রোডের বাসিন্দা জয়নুল হক বলেন, এ এলাকায় সবুজের মধ্যে এ পার্কটিই আছে। অনেকেই নিয়মিত সকাল-বিকেল এখানে হাঁটাচলা ও ব্যায়াম করেন। এখন দোকান হলে মানুষজন একটি ঐতিহাসিক স্থান হারাবে।
শাঁখারীবাজারের বাসিন্দা সুপ্রিয়া সেন বলেন, বাচ্চাদের স্কুলে দিয়ে এ পার্কে বসে সময় কাটাই। এখানে রেস্তোরাঁ নির্মাণ হলে হাঁটাচলার জায়গা সংকুচিত হবে। খোলামেলা আলো-বাতাস আর থাকবে না।
এ বিষয়ে ইজারাদারা বলছেন, আমরা কাজ শুরু করেছি। কাজটি সম্পূর্ণ হলে লাইটিং করা হবে। পার্কটি জমকালো করা হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকবে। পরিবেশের কোনো ক্ষতি না করে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করা হবে।
ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. রাসেল সাবরিন বলেন, ডিএসসিসির পার্কগুলো সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার স্বার্থে ইজারার আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। যাতে পার্কগুলো ভালোভাবে পরিচালনা করা যায়। এরই ধারাবাহিকতায় বাহাদুর শাহ পার্কও ইজারা দেওয়া হয়েছে। পার্কের মধ্যে একটি ‘ফুড ভ্যান’ থাকবে। যারা খাবার বিক্রি করবে এবং পার্কের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করবে। এতে পার্কটি সঠিকভাবে পরিচালিত হবে।
জানা গেছে, ২০২০ সালের এপ্রিলে পার্কটি আধুনিকায়ন করে নাগরিকদের জন্য উন্মুক্ত করে ডিএসসিসি। ঐতিহ্যবাহী পার্কটি রয়েছে— হাঁটাচলার ব্যবস্থা, গণশৌচাগার, বেঞ্চ, সবুজ উদ্যান। এছাড়া ২৪ ঘণ্টাই পার্কটি ব্যবহার করতে পারবেন নাগরিকরা, রয়েছে ঝলমলে আলোর ব্যবস্থাও। বৃষ্টির পানি অপসারণে পার্কের চারপাশে চার ফুট গভীর ড্রেন করা হয়। মেঝেতে রয়েছে নুড়িপাথর। ৮৫ দশমিক ৩ কাঠা আয়তনের এ পার্ক সংস্কারে ডিএসসিসির ব্যয় হয় ৬ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।
এমএএইচ/এএসএম