মন্ত্রিসভায় ওষুধ আইন অনুমোদন

প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রিতে জরিমানা ২০ হাজার

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:০০ পিএম, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি করলে ২০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রেখে ‘ওষুধ ও কসমেটিকস আইন, ২০২৩’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, এ বিষয়ে বর্তমানে আমাদের দুটি আইন আছে। একটি হলো ড্রাগস অ্যাক্ট, ১৯৪০ আরেকটি হলো ড্রাগস কন্ট্রোল অর্ডিন্যান্স ১৯৮২। এ দুটোকে এক করে এবং এর সঙ্গে আরও নতুন কিছু যুক্ত করে। এর আগে খসড়া আইনটি ২০২২ সালের ১১ আগস্ট নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। সেটি আজ চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে আজ অনুমোদনের ক্ষেত্রে একটু পরিবর্তন এসেছে। আগের আইনগুলোতে শুধুমাত্র ওষুধকে ফোকাস করা হয়েছিল, নতুন খসড়ায় কসমেটিকসকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

আরও পড়ুন>>> প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি বন্ধে রিট

নতুন এ আইনের নাম হবে ওষুধ ও কসমেটিকস আইন, ২০২৩। এ নামেই আইনটি চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

নতুন আইনে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের বিষয়টি যুক্ত করা হয়েছে জানিয়ে মাহবুব হোসেন বলেন, ‘ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের মাধ্যমে ওষুধের কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। নতুন ওষুধ, ভ্যাকসিন ও মেডিকেল ডিভাইস ডেভেলপ করা। ট্রায়াল চারটি ধাপে যাতে করা হয় সেটি সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে।

jagonews24

ফার্মাকো ভিজিল্যান্স বলে ওষুধ শিল্পে একটা কনসেপ্ট আছে। ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা ক্ষতিকর দিক পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নের সুযোগ নতুন আইনে রাখা হয়েছে। আগের আইনে সেই সুযোগ রাখা হয়নি।

তিনি বলেন, ভ্যাকসিনের লটের কোয়ালিটি পরীক্ষায় সুযোগ আগের আইনে ছিল না, নতুন আইনে সেই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স এখন আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে জানিয়ে মাহবুব হোসেন বলেন, এটিকে মনিটর করার জন্য, যাতে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার কন্ট্রোল করা যায় সেজন্য ধারা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি ও ব্যবহার বন্ধ থাকবে। এগুলো শাস্তিযোগ্য অপরাধ হবে।

মেডিকেল ডিভাইস ব্যবহারের বিষয়টি নতুন আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কিছু জিনিস এখানে মেডিকেল ডিভাইস হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং সেগুলো ওষুধ হিসেবে বিবেচিত হবে।

আরও পড়ুন>>> ‘প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি বন্ধ করতে হবে’

নতুন আইনের মাধ্যমে কসমেটিকসের উৎপাদন, বিতরণ এবং মজুত নিয়ন্ত্রণ করা হবে। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তাদের দায়িত্ব ও কর্মপরিধি সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে।

খসড়া আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘খসড়া আইনে ৩০টি অপরাধ চিহ্নিত করা হয়েছে। এজন্য আলাদা আলাদা শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ ওষুধের ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যে গাইডলাইন আছে সেটি যাতে সর্বোচ্চ ব্যবহার হয় সেই বিষয়ে খুব জোর দেওয়া হয়েছে। এটা সংসদে পাস হওয়ার সাথে সাথেই কার্যকর হবে।

খসড়া আইনের বিভিন্ন অপরাধের শাস্তি তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, অসৎ উদ্দেশ্যে ওষুধের ওষুধের কৃত্রিম সংকট তৈরি করলে যাবজ্জীবন পর্যন্ত শাস্তি দেওয়া যাবে। নকল ওষুধ উৎপাদন, বিক্রি, বিতরণ বা বিক্রির উদ্দেশ্যে প্রদর্শন করলে যাবজ্জীবন শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। ওষুধ ভেজাল করলে বা ভেজাল ওষুধ উৎপাদন, বিক্রি ও মজুত করলে এ ক্ষেত্রেও যাবজ্জীবন শাস্তি পেতে হবে।

এছাড়া লাইসেন্স ছাড়া বা লাইসেন্সে উল্লেখিত শর্ত না মেনে ওষুধ উৎপাদন করলে, নিবন্ধন ছাড়া ওষুধ উৎপাদন, আমদানি, রপ্তানি, বিক্রি, বিতরণ, প্রদর্শন করলে, সরকারি ওষুধ বিক্রি বা বিক্রির উদ্দেশ্যে মজুত বা প্রদর্শন করলে, লাইসেন্স ছাড়া বা লাইসেন্সের শর্ত না মেনে ওষুধ আমদানি করলে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ড হতে পারে বলেও জানান তিনি।

আরও পড়ুন>>> অ্যান্টিবায়োটিকের মোড়ক হবে লাল, যথেচ্ছ ব্যবহার রোধে হচ্ছে আইন

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কসমেটিকস বিক্রি, আমদানি ও উৎপাদন করতে হলে লাইসেন্স নিতে হবে। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর লাইসেন্সি অথরিটি হিসেবে কাজ করবে। এখন যারা কসমেটিকসের ব্যবসা বা উৎপাদন করছেন তাদের লাইসেন্স নিতে হবে। এজন্য ওষুধ প্রশাসন বিধি প্রণয়ন করবে।

কিছু কিছু ওষুধের দামও নির্ধারণ করে দেওয়া হবে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন।

আরএমএম/এমআইএইচএস/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।