মেজর মান্নানের প্রশ্ন
দুদক কি গড, মামলা করলেই সব হয়ে গেলো?
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা ১১টি মামলাই মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেডের (বিআইএফসি) সাবেক চেয়ারম্যান মেজর (অব.) আব্দুল মান্নান।
দুদকের দীর্ঘদিনের অনুসন্ধানকে কেন তিনি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মনে করছেন- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে আব্দুল মান্নান বলেন, ‘আরে ভাই, আপনি শুধু দুদকের গল্প পড়েন। আমার গল্পও পড়ুন, এখানে সব লেখা আছে। আপনারা আসল কাহিনী না পড়ে নকল কাহিনী নিয়ে সময় নষ্ট করছেন। দুদক কি গড? দুদক মামলা করলেই কি সব শেষ হয়ে গেলো?’
অর্থ আত্মসাৎ মামলায় মঙ্গলবার (১৩ জুন) লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি-কমলনগর) আসনের সংসদ আব্দুল মান্নানকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদকের সহকারী পরিচালক আফরোজা হক খান। এদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
আরও পড়ুন>> নির্বাচনের আগে সব মামলার রায় স্থগিতের দাবি বিএনপি নেতার
জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দুদক থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এ সময় তিনি এসব কথা বলেন। আব্দুল মান্নান বলেন, ‘দুদকের করা ১১টি মামলা মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এগুলো হয়রানিমূলক। যারা এ কোম্পানি (বিআইএফসি) প্রথমে দখল করতে চেয়েছিলেন, তারাই দুদকে অভিযোগ করেছেন। পি কে হালদার এ ঘটনার সবচেয়ে বড় মাস্টারমাইন্ড।’
বিকল্পধারার মহাসচিব বলেন, ‘দুদক ও বাংলাদেশ ব্যাংক যাদেরে ডেকেছে, তাদের বক্তব্যই ফুটে উঠেছে। আমরা বাংলাদেশ ব্যাংককে বলেছিলাম, আমাদের শেয়ার হোল্ডারদের ডাকুন, তাদের বক্তব্য আসুক। তবে সেই বক্তব্যটা আসেনি। সুতরাং এটা সম্পূর্ণ ভুয়া। আমাদের শেয়ার হোল্ডারদের স্বার্থের পরিপন্থি। তাদের স্বার্থ এখানে সংরক্ষিত হয়নি।’
লক্ষ্মীপুর-৪ আসনের এমপি বলেন, পি কে হালদার ‘শুকজা ভেনসার’ নামে ভুয়া কোম্পানি সৃষ্টি করে খোলাবাজার থেকে ৫ শতাংশ শেয়ার কেনে। পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের জিএম শাহ আলমের সহায়তায় বিআইএফসিতে দুজন পরিচালক নিয়োগ দেন, যা ছিল সম্পূর্ণ বেআইনী।
আরও পড়ুন>> তারেক-জোবায়দার বিরুদ্ধে আরও একজনের সাক্ষ্য
তিনি বলেন, তিনজন ষড়যন্ত্রকারী; যথাক্রমে- পি কে হালদার, রুহুল আমিন ও শাহ আলম একসঙ্গে সিন্ডিকেট তৈরি করেন। মাত্র ৫ শতাংশ শেয়ার কিনে আমাদের ৯৫ শতাংশ শেয়ার হোল্ডারদের পরিচালনা পর্ষদ পুরো দখলে নেন। একে একে তাদের সব অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করেন।
বিআইএফসির সব টাকা পি কে হালদার লুট করেছে দাবি করে আব্দুল মান্নান বলেন, ‘পি কে হালদার ও তার লোকেরা আমাদের বরখাস্ত করে পাঁচ বছর বিআইএফসি দখলে রাখেন। ওই সময়ে তিনি (পি কে হালদার) বিআইএফসি লুট করে সব টাকা নিয়ে গেছেন। আমাদের কোম্পানির শেয়ার হোল্ডারদের সব টাকা যে নিয়ে গেলেন, তার বিচার হচ্ছে না।’
তার বিরুদ্ধে দুদকের মামলা কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমরা শেয়ার হোল্ডাররা যেন বিআইএফসিতে যেতে না পারি, সেজন্য এ ব্যবস্থা। এখানে শুধু আমি না, হাজার হাজার শেয়ার হোল্ডার হয়রানির শিকার হচ্ছেন। আমি এ কোম্পানি (বিআইএফসি) প্রতিষ্ঠা করেছি। আমার তো দায় আছে, এটাকে ভলোভাবে চালানোর।’
আরও পড়ুন>> দুদকে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর
রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করা হচ্ছে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে আব্দুল মান্নান বলেন, ‘না, আমাকে রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করা হচ্ছে না। কোম্পানিটা তো অনেক বড় হয়েছিল। আজকে পি কে হালদার ও তার সহযোগীদের কারণে কোম্পানিটা দেউলিয়া হয়ে গেছে। এখন এগুলো করা হচ্ছে যেন কোম্পানির এজিএম (বার্ষিক সাধারণ সভা) না হয়, কোম্পানি যেন মালিকের কাছে না ফেরে। পি কে হালদার ও তার সংশ্লিষ্টদের স্বার্থে এটা করা হচ্ছে।’
বিআইএফসি থেকে ২৬৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা উত্তোলন করে আত্মসাতের ঘটনায় আব্দুল মান্নান ও তার স্ত্রী উম্মে কুলসুম মান্নানসহ প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ১১টি মামলা করেছে দুদক। এর মধ্যে দুটি মামলায় মেজর মান্নানের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দিয়েছে দুদক।
মেজর (অব.) আব্দুল মান্নান ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের সমর্থন নিয়ে নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে করে এমপি নির্বাচিত হন। এর আগে তিনি ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ঢাকা-১০ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি একজন শিল্প উদ্যোক্তা।
এসএম/এএএইচ/এএসএম