বাড়তি পুলিশ প্রত্যাহার
বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের নিরাপত্তায় কতদূর ‘আনসার বাহিনী’
চলতি বছরের মে মাসে হুট করেই বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের বাড়তি নিরাপত্তা সুবিধা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। রাষ্ট্রদূতরা যে স্বাভাবিক নিরাপত্তা পেতেন তা আগের মতো বহাল রয়েছে। বর্তমানে তাদেরকে আর বাড়তি নিরাপত্তা (এসকর্ট) দেওয়া হচ্ছে না। সেই ‘বাড়তি নিরাপত্তা’ দিতে প্রস্তুত করা হয়েছে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর বিশেষায়িত ‘আনসার গার্ড ব্যাটালিয়ন’ বা এজিবিকে। তবে তিন মাসেও বাড়তি নিরাপত্তা চায়নি কোনো দূতাবাস। দূতাবাস চাইলে যেকোনো সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে আনসার বাহিনী বাড়তি নিরাপত্তা দেবে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) বলছে, সরকারের সিদ্ধান্তে বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের বাড়তি নিরাপত্তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা যদি বাড়তি নিরাপত্তা চায় সেক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে নিরাপত্তা দেওয়া হবে।
বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের বাড়তি নিরাপত্তা সুবিধা দিতে আনসার গার্ড ব্যাটালিয়ন (এজিবি)-এর একটি প্রশিক্ষিত, দক্ষ ও স্মার্ট ব্যাটালিয়ন প্রস্তুত রয়েছে। আমরা আশাবাদী তাদেরকে নিরাপত্তা দিতে পারবো। দূতাবাসগুলো সরাসরি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে এরপর তাদের চাহিদা অনুযায়ী সেবা দেওয়া হবে।
আরও পড়ুন: শর্তসাপেক্ষে এসকর্ট পাচ্ছেন ৪ দেশের রাষ্ট্রদূত: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী বলছে, বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের বাড়তি নিরাপত্তা সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি অগ্রগতি হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে কাজ করা হবে। বিদেশি কূটনীতিকদের আনসার বাহিনী কীভাবে অতিরিক্ত নিরাপত্তা (এসকর্ট) দেবে, সেটি চূড়ান্ত হয়েছে।
বিভিন্ন দেশে নিয়োজিত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা যে ধরনের ‘বিশেষ সুবিধা’ পেয়ে থাকেন, বিদেশে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূতরা সে সুবিধা পান না।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পৃথিবীর কোনো দেশেই বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে বাড়তি নিরাপত্তা দেওয়া হয় না। চলাচলের ক্ষেত্রে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনো সুবিধাও পান না তারা। বাড়তি সুবিধা প্রত্যাহার হলেও প্রতিটি দূতাবাস, কূটনীতিকদের বাসভবন, ভিসা সেন্টার, স্কুল এবং ক্লাবে পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের নিরাপত্তা অব্যাহত রয়েছে। একইসঙ্গে রাষ্ট্রদূতদের নিরাপত্তায় পুলিশের পক্ষ থেকে নিয়োজিত রয়েছে গানম্যান। এই সশস্ত্র সদস্যরা (গানম্যান) বিশেষ পরিস্থিতিতে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করতে পারবেন।
সরকারি যে সিদ্ধান্ত এসেছে সেই সিদ্ধান্ত বলবৎ রয়েছে। যদি কোনো দূতাবাস তাদের রাষ্ট্রদূতদের বাড়তি নিরাপত্তা সুবিধা পেতে চায় তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পুলিশকে নির্দেশনা দিলে পুলিশ সেই দায়িত্ব পালন করবে।
আরও পড়ুন: কূটনীতিকদের নিরাপত্তা প্রত্যাহার, যা আছে ভিয়েনা কনভেনশনে
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে ৫০টি দেশের দূতাবাসে ৭২৭ জন পুলিশ সদস্য সার্বক্ষণিক নিরাপত্তায় মোতায়েন রয়েছেন। এছাড়া বাংলাদেশ পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) থেকে পাঁচ দূতাবাসে নিযুক্ত রয়েছেন ৮৭ পুলিশ সদস্য। কূটনীতিকদের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ৯টি সংস্থাকে নিরাপত্তা দিয়ে আসছে ডিএমপি। এসব সংস্থায় নিয়োজিত রয়েছেন ডিএমপির ৪১ সদস্য।
ঢাকায় অবস্থিত বিদেশি হাইকমিশন, দূতাবাস এবং কূটনীতিকদের নিরাপত্তায় পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে ডিএমপির ডিপ্লোম্যাটিক সিকিউরিটি বিভাগ।
ডিপ্লোম্যাটিক সিকিউরিটি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে নিয়োজিত আছে ১৫৬ পুলিশ সদস্য। এছাড়া ব্রিটিশ হাইকমিশনে ২৭ জন, ভারতীয় হাইকমিশনে ৫৮ জন ও সৌদি আরব দূতাবাসে ৫৬ জন পুলিশ সদস্য নিয়োজিত রয়েছেন।
আনসার বাহিনীতে বর্তমানে ৪২টি ব্যাটালিয়ন রয়েছে। এর মধ্যে দুটি নারী ব্যাটালিয়ন ও একটি গার্ড ব্যাটালিয়ন। ওই ব্যাটালিয়নটির নাম এজিবি। এজিবি মূলত ডিবির সোয়াত টিমের মতো বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। চট্টগ্রামে ১৬টি ব্যাটালিয়নের ৬ হাজার ২৪৪ জন সদস্য এককভাবে ৬০টি ক্যাম্প ও অন্য বাহিনীর সঙ্গে যৌথভাবে ১৮৬টি ক্যাম্পে দুর্গম এলাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ‘অপারেশন উত্তরণ’ -এ কাজ করছে। সেখানে আঞ্চলিক সন্ত্রাসীদের দমন ও শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় পরিবার-পরিজন রেখে অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করছে। গহীন জঙ্গলে নিয়মিত শর্ট রেঞ্জ পেট্রোলিং (এসআরপি) ও লং রেঞ্জ পেট্রোলিং (এলআরপি) টহল প্রদান ছাড়াও আভিযানিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করছে।
এছাড়া বর্তমানে আইসিডিডিআর,বি-তে এই ব্যাটালিয়নের সদস্যরা সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন। সরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায়ও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে এজিবি। এই ব্যাটালিয়নে ৪১৬ জন সৈনিক এবং কর্মকর্তাসহ ৪২৫ জন জনবল রয়েছে। এছাড়া তাদের মতো প্রশিক্ষিত প্রায় তিন হাজার জনবল রয়েছে। যাদের অন্য ব্যাটালিয়নে নিয়োজিত রাখা হয়েছে।
আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, এজিবি সদস্যদের যুগোপযোগী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রস্তুত করা হয়েছে। ২০১৮ সাল থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দূতাবাসে টানা ছয় বছর দায়িত্ব পালন করারও অভিজ্ঞতা রয়েছে তাদের। এজিবির সদস্যরা দেশে-বিদেশে উন্নত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তারা ভারী অস্ত্র পরিচালনা করতেও সক্ষম। এই ব্যাটালিয়নের সদস্যরা দেশে-বিদেশে কুইক রেসপন্স ট্রেনিং (কিউআরটি), স্পেশাল ট্যাকটিক্যাল ট্রেনিং (এসটিটি) ও স্পেশাল প্রটেকশন ট্রেনিং, বিশেষ অস্ত্র এবং ট্যাকটিক্যাল ট্রেনিং নিয়েছেন।
আনসারের কর্মকর্তারা স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) ও র্যাবে প্রেষণে নিয়োজিত রয়েছেন। এছাড়া ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্যরা সচিবালয়, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা অধিদপ্তর (ডিজিএফআই) ও র্যাবসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ সরকারি দপ্তরে প্রেষণে কর্মরত থেকে নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব পালন করছেন।
ডিএমপির ডিপ্লোম্যাটিক সিকিউরিটি বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. রবিউল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, সরকারি যে সিদ্ধান্ত এসেছে সেই সিদ্ধান্ত বলবৎ রয়েছে। যদি কোনো দূতাবাস তাদের রাষ্ট্রদূতদের বাড়তি নিরাপত্তা সুবিধা পেতে চায় তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পুলিশকে নির্দেশনা দিলে পুলিশ সেই দায়িত্ব পালন করবে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর উপ-মহাপরিচালক (অপারেশন্স) এ কে এম জিয়াউল আলম জাগো নিউজকে বলেন, বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের বাড়তি নিরাপত্তা সুবিধা দিতে আনসার গার্ড ব্যাটালিয়ন (এজিবি)-এর একটি প্রশিক্ষিত, দক্ষ ও স্মার্ট ব্যাটালিয়ন প্রস্তুত রয়েছে। আমরা আশাবাদী তাদেরকে নিরাপত্তা সুবিধা দিতে পারবো। দূতাবাসগুলো সরাসরি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে এরপর তাদের চাহিদা অনুযায়ী সেবা দেওয়া হবে। সবগুলো বিষয় এই মুহূর্তে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
টিটি/এসএইচএস/জেআইএম