উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সমাবেশ আজ, ঢাকায় মোতায়েন ২০ হাজার ফোর্স

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১০:১৫ এএম, ২৮ অক্টোবর ২০২৩

আজ শনিবার (২৮ অক্টোবর) ঢাকায় সমাবেশে করতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। আওয়ামী লীগ ও তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি উভয় দলই রাজধানীর রাজপথ দখলে রাখতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। একই সময়ে দেড় কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে দুই দলের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজনীতিতেও টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে।

অবশ্য দুই দল থেকেই জানানো হয়েছে, তারা শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ সফল করতে চায়। তবে একই দিনে অনুমতি ছাড়াই রাজধানীতে জামায়াতে ইসলামীর সমাবেশে ঘোষণায় জনমনে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) নির্দেশ অমান্য করে জামায়াত কর্মসূচি পালন করতে গেলে পরিস্থিতি কোন দিকে গড়াবে, সেই প্রশ্ন সবার মনে। জরুরি কাজ থাকলেও ঘর থেকে বের হতে শঙ্কাবোধ করছেন অনেকেই।

সব মিলিয়ে ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর শান্তিপূর্ণ থাকবে নাকি ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের মতো সহিংসতায় রূপ নেবে, এ নিয়ে জনমনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমাবেশকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী পুরো ঢাকাকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলেছে। গত দুইদিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ও ঢাকার প্রবেশমুখগুলোতে চলছে পুলিশ-র‌্যাবের চেকপোস্ট। সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে বিন্দুমাত্র ছাড় দেবে না পুলিশ। এরই মধ্যে ডিএমপির সব কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সমাবেশ ও ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় নিরাপত্তার দায়িত্বে মাঠে রয়েছে পুলিশ, র‌্যাব ও আনসারের ২০ হাজার সদস্য। নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছেন বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরাও।

ডিএমপি বলছে, কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি ছাড়াই দুই দলের সমাবেশ যাতে শেষ হয় সে জন্য পুলিশ কাজ করছে। বাহিনীর ১৩ হাজার সদস্য মাঠে থাকবে। সাদা পোশাকে কাজ করছে গোয়েন্দা সদস্যরাও।

বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সমাবেশস্থল ও আশেপাশে কয়েকশ উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছে পুলিশ। এসব ক্যামেরা দিনভর ডিএমপি হেডকোয়ার্টার থেকে মনিটরিং করা হবে। সমাবেশ শুরুর আগে, চলাকালীন ও শেষের দিকে ড্রোনের মাধ্যমেও মনিটরিং করবে পুলিশ।

আরও পড়ুন> ২৮ অক্টোবরের উত্তাপ: ঢাকার অন্যরকম এক সকাল

আওয়ামী লীগ নেতাদের আশঙ্কা, সমাবেশকে ঘিরে বড় ধরনের অঘটন ঘটাতে পারে বিএনপি। সে বিষয়টি মাথায় রেখেই কৌশল সাজিয়েছে তারা। দলগত অবস্থান সহিংসতায় না জড়িয়ে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন হলেও বিরোধীপক্ষের থেকে কোনো আঘাত এলে তার পাল্টা জবাব দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। বিএনপি যদি অবস্থান কর্মসূচির মতো বসে পড়ে, তাহলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা তাদের প্রতিহত করবে। এ জন্য নগর আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে, নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশ করবে বিএনপি। সমাবেশে বড় ধরনের জমায়েতের প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। এ জন্য সারাদেশের নেতাকর্মীদের তিন দিন আগেই ঢাকায় আসতে বলা হয়েছে। অতীতের অভিজ্ঞতায় কর্মসূচির দিন রাজধানীতে প্রবেশের যানবাহন বন্ধ হতে পারে এমন আশঙ্কা থেকেই আগেভাগে ঢাকায় প্রবেশের এই নির্দেশনা দিয়েছে দলটি। অবশ্য দলটি বড় ধরনের শোডাউন করার পরিকল্পনা নিয়েও কোনো ধরনের সংঘাতে জড়াতে চায় না। যে কারণে সতর্ক থেকে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি সফলের জন্য সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছেন দলের শীর্ষ নেতারা।

ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, রাজনৈতিক দলের সমাবেশ ঘিরে ডিএমপির সদরদপ্তরে শুক্রবার সন্ধ্যায় দুটি পৃথক বৈঠক হয়। ডিএমপি কমিশনার প্রথম বৈঠকটি করেন সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মর্যাদার কর্মকর্তা থেকে শুরু করে উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মর্যাদার কর্মকর্তাদের সঙ্গে। এই বৈঠকে ডিএমপির বেশ কয়েকটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাও (ওসি) ছিলেন। প্রথম বৈঠক বিকেলে শুরু হয়ে সন্ধ্যার দিকে শেষ হয়।

উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সমাবেশ আজ, ঢাকায় মোতায়েন ২০ হাজার ফোর্স

অন্যদিকে, দ্বিতীয় বৈঠক শুরু হয় সন্ধ্যার দিকে। দ্বিতীয় বৈঠকে ছিলেন ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার থেকে শুরু করে অতিরিক্ত কমিশনাররা। দুইটি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেমন হবে এবং পরিস্থিতির অবনতি হলে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়। এছাড়া বৈঠকে আলোচনা হয় জামায়াতে ইসলামীর বিষয়েও। বৈঠকে কর্মকর্তাদের স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে জামায়াত যেন কোনোভাবে মাঠে না নামতে পারে। তারপরও যদি তারা নামে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে যেন কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। আর বিএনপির বিষয়ে বৈঠক আলোচনা হয় যে, তারা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করলে পুলিশ তাদের রুটিন ওয়ার্ক অনুযায়ী, নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে। আর তারা যদি কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে তাহলে অ্যাকশনে যাবে পুলিশ।

আরও পড়ুন> প্রবেশপথে পরিবহন থামিয়ে তল্লাশি, সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ

বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর উপ-পরিচালক (প্রকল্প- প্রশিক্ষণ) মো. জাহিদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, সমাবেশ ঘিরে ঢাকা মহানগর এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দুই হাজার ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্য স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছে।

জানতে চাইলে ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (অপারেশনস) বিপ্লব কুমার সরকার জাগো নিউজকে বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করলে ডিএমপির সব ধরনের সহযোগিতা থাকবে। আর যদি কোনো দল বিশৃঙ্খলা, সহিংসতা কিংবা নাশকতা করার চেষ্টা করে তবে পুলিশ তার আইনের মধ্যে যা যা করণীয় সবকিছু করবে। সমাবেশকে ঘিরে এরই মধ্যে পুলিশের সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ সদস্যদের নিরাপত্তার দায়িত্ব বণ্টন করা হয়েছে। সারাদিন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারাও মাঠে থেকে সরেজমিনে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবেন।

যদি জামায়াতে ইসলামী শাপলা চত্বরে সমাবেশ করতে চায় তবে কী ধরনের ব্যবস্থা নেবে পুলিশ। এমন প্রশ্নের জবাবে বিপ্লব সরকার বলেন, দলটির নিবন্ধন নেই। আর নিবন্ধন ছাড়া কোনো দলের সভা-সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয় না। যদি তারা (জামায়াত) সমাবেশ করার চেষ্টা করে তবে কঠোরভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জাগো নিউজকে বলেন, ঢাকা মহানগরীতে র‌্যাবের প্রায় দুই হাজার সদস্য মাঠে কাজ করছে। সবধরনের নিরাপত্তার ঝুঁকি মাথায় রেখেই পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে। ঢাকার প্রবেশমুগুলোতে চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় রোবাস্ট পেট্রোলিং করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) ড. খ. মহিদ উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, দুই রাজনৈতিক দলকে ২০টি শর্ত জুড়ে দিয়ে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সমাবেশে বিশৃঙ্খলা করলে কিংবা নিরাপত্তা বিঘ্ন ঘটানোর চেষ্টা করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সমাবেশ ও ঢাকার নিরাপত্তা প্রদানে ডিএমপির সঙ্গে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পর্যাপ্ত সংখ্যক সদস্য মোতায়েন রয়েছে।

টিটি/এসএনআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।