ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা আইন

নির্বাচনকালীন সরকার আইন অনুমোদন করতে পারে কি না, প্রশ্ন টিআইবির

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭:৩৩ পিএম, ২৮ নভেম্বর ২০২৩

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনকালীন মন্ত্রিপরিষদ খসড়া ‘ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা আইন, ২০২৩’ নীতিগত অনুমোদন করেছে। এতে বিস্ময় ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

সংস্থাটি বলছে, এই আইনের সুদূরপ্রসারী প্রভাব অস্বীকার করার সুযোগ নেই। বেশ কিছুদিন ধরে ধাপে ধাপে অংশীজনদের সম্পৃক্ত করে একটি গ্রহণযোগ্য আইন প্রণয়নের প্রচেষ্টা চলছে। এর মধ্যেই খসড়া আইন মন্ত্রিসভার অনুমোদন পাওয়ার প্রক্রিয়া ও উদ্দেশ্য প্রশ্নবিদ্ধ বলে মনে করছে টিআইবি।

মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে টিআইবি নির্বাচনকালীন সরকারের এ ধরনের নীতি সিদ্ধান্ত নেওয়া সুবিবেচনাপ্রসূত কি না এমন প্রশ্নও তুলেছে।

বিবৃতিতে টিআইবি জানায়, আলোচ্য আইনের খসড়াতে টিআইবিসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনের পরামর্শের ভিত্তিতে কয়েক ধাপে বেশকিছু ইতিবাচক সংশোধনী আনা হয়েছে। তবে তড়িঘড়ি করে অংশীজনদের সম্পৃক্ত করার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার আগেই প্রশ্নবিদ্ধভাবে মন্ত্রিসভার ‘নীতিগত’ অনুমোদনের মাধ্যমে ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা আইনের মতো একটি জনগুরুত্বসম্পন-বিষয়ক আইনকে আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতার আলোকে বাস্তবসম্মত আইনের পর্যায়ে নিয়ে আসার প্রক্রিয়াকে সচেতনভাবে বন্ধ করে দেওয়া হলো।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, খসড়া আইনে ব্যক্তিগত উপাত্তের সংজ্ঞা সুস্পষ্ট ও পর্যাপ্ত করা, বিচারিক নজরদারির মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার নিশ্চয়তা এবং সর্বোপরি সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদারকি কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠাসহ বেশকিছু সুপারিশ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিলাম। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা বিভিন্ন সময় আমাদের আস্বস্ত করেছেন যে, অংশীজনের পরামর্শ বিবেচনা করেই খসড়াটি চূড়ান্ত করা হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কী অবস্থায় খসড়াটি নীতিগত আনুমোদন পেলো বা আদৌ তাতে জনস্বার্থ সুরক্ষিত থাকবে কি না- তা জানার সুযোগ আমাদের দেওয়া হলো না। মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে যতটুকু তথ্য দেওয়া হয়েছে, তাতে নিশ্চিত করা হয়েছে যে, তদারকি কর্তৃপক্ষ সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

তিনি বলেন, ব্যক্তি উপাত্তের সুরক্ষা নিশ্চিত করার দায়িত্ব পাওয়া বোর্ডকে সরকারের নিয়ন্ত্রণে রাখা চরম স্ববিরোধিতা। কারণ এই বোর্ড তখনই যথাযথভাবে কাজ করতে পারবে, যখন তা সরকারের উপাত্ত প্রক্রিয়া কার্যক্রমের ওপর নজরদারি করতে পারবে। পাশাপাশি জনগণের তথ্যে সরকার বা সরকার সংশ্লিষ্ট ক্ষমতাবানদের যে যথেচ্ছ প্রবেশাধিকার থাকবে না সেটাও এই বোর্ডকে নিশ্চিত করতে হবে। যার এখতিয়ার সরকার নিয়ন্ত্রণাধীন বোর্ডের থাকবে- এমন প্রত্যাশা অবান্তর। এই একটা উদাহরণ থেকেই বলা যায় যে খসড়াটিতে মৌলিক দুর্বলতা রয়ে গেছে।

‘আমাদের আরও একটি বড় আপত্তির জায়গা ছিল অতিমাত্রায় বিধিনির্ভরতা, যা আইনটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তার পাশাপাশি নির্বাহী বিভাগের হস্তক্ষেপের আশঙ্কাকেও জোরদার করে। নির্বাচনকালীন সরকার তার কার্যক্রম দৈনন্দিন কাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখবে এবং নীতি সিদ্ধান্তের বিষয়গুলো পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের জন্য তুলে রাখা হবে- এই নিয়মের ব্যত্যয় করে নেওয়া মন্ত্রিপরিষদের সিদ্ধান্ত সুবিবেচনাপ্রসূত কি না- সেই প্রশ্ন তোলা অবান্তর হবে না।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, আমরা আশা করি নীতিগত অনুমোদন পাওয়া এই খসড়াটি চূড়ান্ত করার পরের সব কার্যক্রম সরকার স্থগিত করবে। নির্বাচন পরবর্তী সরকার অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে একটি গ্রহণযোগ্য খসড়া প্রস্তুত করে এই প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেবে।

এসএম/কেএসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।