‘মা মারা যাওয়ার মিথ্যা কথা’ বলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিতেন দুর্জয়

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৬:৪৯ পিএম, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন। এরপর বিপরীত প্রান্ত থেকে ভেসে আসে- বন্ধু চিনতে পেরেছিস? এ প্রান্ত থেকে উত্তরে বলা হয়- না, চিনতে পারছি না। ওপাশ থেকে তখন বলা হয়- তোর কোনো বন্ধু বিদেশে থাকে? বিদেশ থাকা বন্ধুর নাম বলতেই, সেই নামের বন্ধু সেজে কথা বলা শুরু করেন প্রতারক।

এভাবে ফোন করে বলা হয়- ‘মা কিংবা বাবা ভীষণ অসুস্থ। হঠাৎ দেশে আসায় টাকাও ম্যানেজ করতে পারিনি।’ কখনো বলে মা আবার কখনো বলতো বাবা মারা গেছে। টাকা পাঠানোর পরই সিম বন্ধ করে দিতো প্রতারক। পরে ভুক্তভোগীরা বুঝতো প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এভাবে অভিনব কায়দায় গত ছয় মাসে আড়াই হাজার মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন মো. সাইফুল ইসলাম ওরফে দুর্জয় (২৭) নামে এক প্রতারক। হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা।

সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও গোয়েন্দা কার্যক্রমের ভিত্তিতে এই প্রতারককে সবুজবাগ থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা-মতিঝিল বিভাগের খিলগাঁও জোনাল টিম।

মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, গত ৫ জানুয়ারি ভুক্তভোগী আমির হোসাইন মোল্লাসহ তার দুই বন্ধুকে আসামি দুর্জয় নিজেকে বন্ধু আতিকুল্লাহ শাহের পরিচয় দিয়ে ফোন করে তার মায়ের মৃত্যু সংবাদ জানায় এবং জরুরিভিত্তিতে বিকাশে টাকা পাঠাতে অনুরোধ করে। বন্ধুর মায়ের মৃত্যু সংবাদ শুনতে পেয়ে তারা তিন বন্ধু মিলে তাৎক্ষণিক এক লাখ ৬৯ হাজার টাকা বিকাশ এবং নগদের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয়। এরপর যোগাযোগ করলে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। আমির হোসাইন মোল্লা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন আতিকুল্লাহ শাহের পরিচয় ভুয়া ছিল। এরপর ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগ করলে সেই সূত্র ধরে প্রতারক দুর্জয়কে গ্রেফতার করা হয়।

প্রতারক দুর্জয় এর আগেও একাধিকবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছে জানিয়ে ডিবিপ্রধান বলেন, আসামির পিসিপিআর পর্যালোচনায় দেখা যায়, তার বিরুদ্ধে অস্ত্র, ছিনতাই ও প্রতারণাসহ ৯টি মামলা রয়েছে। দুর্জয়ের বাড়ি নীলফামারীর ডোমার থানাধীন ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকার প্রত্যন্ত একটি গ্রামে। সেখানে অবস্থান করে সে প্রতারণার কাজ শেষে বিভিন্ন বিকাশের দোকান থেকে ক্যাশ আউটের মাধ্যমে টাকা তুলে নিতো।

নীলফামারী জেলায় জ্বীনের বাদশা নামে ব্যাপকভাবে পরিচিত দুর্জয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি টের পেলে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতের অংশে চলে যায়। সে প্রায় ১০ বছর ধরে এই প্রতারণার সঙ্গে তিনি জড়িত। এ কাজে তার কয়েকজন সহযোগীও রয়েছে। যাদের একটি গ্রুপ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে মোবাইল ফোন চুরি করে এবং আরেকটি গ্রুপ বিভিন্ন এলাকায় বিকাশের দোকান থেকে প্রতারণার মাধ্যমে অর্জিত টাকা ক্যাশ করে।

দীর্ঘ ১০ বছরে দুর্জয় কতজনের সঙ্গে প্রতারণা করেছে জানতে চাইলে ডিবিপ্রধান বলেন, সঠিক সংখ্যা নির্ধারণ করা না গেলেও গত ৬ মাসের বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্জয় প্রায় শতাধিক সিম ব্যবহার করে প্রায় আড়াই হাজার ব্যক্তিকে ফোন করেছে। যাদের অধিকাংশই সিম্প্যাথি থেকে বিকাশ বা নগদের মাধ্যমে টাকা দিয়ে প্রতারিত হয়েছেন।

যেভাবে প্রতারণা করতেন দুর্জয়-
প্রথমে একজন ভুক্তভোগীকে ফোন দেয় প্রতারক। প্রতারক: বন্ধু চিনতে পেরেছিস? ভুক্তভোগী: না, চিনতে পারছি না। প্রতারক: তোর কোনো বন্ধু বিদেশে থাকে? ভুক্তভোগী: আতিক বলছিস? প্রতারক: হ্যাঁ বন্ধু, আমি তোর বন্ধু আতিক। বন্ধু আমি হঠাৎ করে দেশে আসছি। আমার মা অসুস্থ ছিল। আজকে হাসপাতালে মা মারা গেছে। জরুরিভিত্তিতে বিকাশে কিছু টাকা পাঠাতে পারবি?

ভুক্তভোগী: হ্যাঁ পারবো। কত টাকা লাগবে বল? প্রতারক: ৭ লাখ টাকা পাঠিয়ে দে আপাতত। আর অন্য বন্ধুদের নম্বরগুলো এই মুহূর্তে আমার কাছে নাই, ওদের নম্বরগুলো আমাকে দে। যদি পারিস কয়েকজনকে বল আমাকে এই নম্বরে কল দিতে।

এরপর যথারীতি পাঠানো টাকা হাতিয়ে নিয়ে সিম ও ফোন বন্ধ করে দিতো প্রতারক দুর্জয়।

টিটি/এমকেআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।