বাংলাদেশে এইচআইভিতে ৫২৬ জনের মৃত্যু


প্রকাশিত: ১১:১৫ এএম, ২০ ডিসেম্বর ২০১৪

এইডস আক্রান্ত হওয়ার কারণে এ পর্যন্ত বিশ্বে ৩ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা ৫ কোটি। আফ্রিকার দেশগুলোতে মূলতঃ এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশী। ক্যারিবীয় দ্বীপ রাষ্ট্র ডোমেনিকান রিপাবলিকের ৯০ লাখ মানুষের দেহে এইচআইভি পজিটিভ। মধ্য আফ্রিকার দেশগুলোতে মহামারি আকারে এইচআইভি ও এইডস দেখা দিয়েছে। বিশ্বে এখন প্রতিবছর ২৭ লাখ মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বাংলদেশেও এ রোগ শনাক্ত করা হয় ১৯৮৯ সালে।

১৯৮৯ সাল থেকে ২০১৩ সালের ১ ডিসেম্বর এইডস দিবস পালন করা পর্যন্ত এ রোগে মারা গেছে ৪৭২ জন। এই সময় সংক্রমিত রোগী সনাক্ত হয়েছে ৩৭০ জন। মারা গেছে ৮২ জন। গত ১ বছরে দেশে এইডস আক্রান্ত ৯১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে নতুন করে ৪৩৩ জন এইচআইভি আক্রান্ত হয়েছে। এ নিয়ে দেশে মোট এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়ায় ৩ হাজার ৬৭৪ জন। ১৯৮৯ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত এ রোগে মারা গেছে ৫২৬ জন। গত ১ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিশ্ব এইডস দিবস উপলক্ষে এক সেমিনারে এ তথ্য জানানো হয়।

আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে এইচআইভি আক্রান্ত লোকের সংখ্যা ৮ হাজারেরও বেশি। আবার কোন কোন সংস্থা মনে করে এ সংখ্যা ১১ হাজার। যা দেশের মোট জনসংখ্যার শূন্য দশমিক ১ শতাংশেরও কম। আপাত দৃষ্টিতে এর প্রাদুর্ভাব কম হলেও এইডস-এর ঝুঁকিতে আছে এমন জনগোষ্ঠীর হার শতকরা শূন্য দশমিক ৭।

তবে এইচআইভি ও এইডস নিয়ে সবচেয়ে আশঙ্কা দেশের পার্বত্য অঞ্চলে নিয়ে। এসব এলাকার সীমান্তবর্তী দেশ হলো মায়ানমার এবং ভারতের মিজোরাম নাগাল্যান্ড ও মনিপুর রাজ্য।

আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো বলেছে, আফ্রিকার পরপরই ভারত, মায়ানমার, নেপাল ও কম্বোডিয়ায় এ রোগের বিস্তার ঘটছে। ভারতে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ এইচআইভি ও এইডসে আক্রান্ত। মিজোরামে এ রোগ মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ছে। এ রাজ্যটি বাংলাদেশের সীমানায়। মিজোরামের সঙ্গে রাঙামাটি দুর্গম এলাকার মানুষের বেশ যাওয়া আসা আছে। তাই, দেশে এইডস সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি, থানচি ও রুমা উপজেলা ভারতের মিজোরাম ও মায়ানমারের সীমান্তবর্তী হওয়ায় এখানে এ রোগ সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ ওখানকার লোকেরা বান্দরবানের এই ৩ উপজেলায় গভীর অরণ্য ও পর্বত পেরিয়ে কেনাকাটা করতে আসে। যদিও ২০১২ সালে বান্দরবানে সিভিল সার্জন মংতে ঝ বলেছেন, এ এলাকায় এইডস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা নেই। কিন্তু বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা বলছে, দেশের এ এলাকায় এইডসের ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি।

দেশের নদী ও সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় এ রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটতে পারে। ১৩৭টি উপজেলার ৪ কোটি ৬০ লাখ মানুষের অনেকেরই এ রোগ সম্পর্কে ধারণা নেই। সরকারি ও বিভিন্ন সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, দেশের ৮৭ ভাগ বিবাহিত পুরুষ ও ৬৭ শতাংশ বিবাহিত মহিলা এ রোগ সম্পর্কে জানে। সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া নদী ও সমুদ্র উপকূলীয় এলাকার মানুষ এ রোগ সম্পর্কে কম সচেতন। তাই এসব এলাকায় এ রোগের বিস্তার ঘটতে পারে।

গত ১ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বক্তারা বলেছেন, ২০১৩ সালে ঢাকা জেলায় এইচআইভি ও এইডস আক্রান্ত হয়েছে সবচেয়ে বেশি। এ সময়ের মধ্যে ঢাকায় আক্রান্তের সংখ্যা ৭৪ জন। তবে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হলো সিলেট বিভাগ। গত বছর দেশে এইডসের মৃত্যুর সংখ্যা ৮২ জন। তাদের মধ্যে এ এলাকায় মারা গেছে ২৫ জন। এ এলাকায় এইডস নিয়ে কাজ করছে আশার আলো সোসাইটি।

আশার আলো সোসাইটির কো-অর্ডিনেটর তাহমিনা বেগম বলেন, এ এলাকায় (সিলেট বিভাগ) মানুষ বেশি প্রবাস জীবন-যাপন করেন। প্রবাসীদের মাধ্যমে এ রোগের সংক্রমণ হচ্ছে বেশি। এছাড়া অশিক্ষা, অসচেতনতা, নৈতিক অবক্ষয় আর অবৈধ সম্পর্কের কারণে এ রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এইডসের ঝুঁকি মোকাবেলায় সর্বাগ্রে প্রয়োজন সচেতনতা। যেমন অবাধ যৌনাচার সংস্কৃতি বর্জন, স্বামী-স্ত্রী দু’জন দু’জনের প্রতি বিশ্বস্ত ও শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন, মাদকদ্রব্য সেবন থেকে বিরত থাকা, যৌন মিলনে কনডম ব্যবহার নিশ্চিত করা। রক্ত সংগ্রহ রক্তদাতার রক্ত পরীক্ষা করা, গর্ভাবস্থায় মায়ের এইডস ছিলো কিনা তা পরীক্ষা করা। সূচ-সিরিঞ্জ জীবাণুমুক্ত করে ব্যবহার করা, এসব ব্যাপারে ওয়াকিবহাল থাকলে এইচআইভি থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব। আর এজন্য দরকার প্রচার মাধ্যমে অগ্রণী ভূমিকা।

এখন পর্যন্ত এইডসের প্রতিষেধক টিকা ও ওষুধ তৈরির প্রস্তুতি নেবার পরও চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা এ রোগের চিকিৎসায় তেমন কোন সাফল্য দেখাতে পারেনি। তবে এ রোগের যেসব ওষুধ আবিষ্কৃত হয়েছে, তাতে শুধু আক্রান্ত রোগীর জীবন দীর্ঘায়িত করা সম্ভব হয়। -বাসস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।