‘মন খোলে সমালোচনা’ বনাম সাহসী সাংবাদিকতার বিপদ
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ‘মন খোলে সমালোচনা’ করার আহ্বানে গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট সবার মধ্যে আশার সঞ্চার হয়। গতকাল সরকারের এক বছর পূর্ণ হয়েছে। এই সময়ে পদ্মা-মেঘনায় অনেক জল গড়িয়েছে। ‘মন খোলে সমালোচনার’ কথাটি কথার কথা নাকি বাস্তবেও এর মিল আছে- সেটি গণমাধ্যম তো বটেই দেশের মানুষও প্রত্যক্ষ করেছে এর মধ্যেই। আসলে গণতন্ত্রের অন্যতম শর্ত হচ্ছে মত প্রকাশের স্বাধীনতা।
ভলতেয়ারের সেই বিখ্যাত উক্তিও স্মরণযোগ্য- ‘তোমার মতের সঙ্গে আমি একমত নাও হতে পারি কিন্তু তোমার মতপ্রকাশের অধিকারের জন্য আমি জীবনও দিতে পারি’- এ ধরনের একটি অঙ্গীকারই মানুষ সরকারের কাছ থেকে আশা করে। বিশেষ করে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে। কারণ এ সরকার একটি ‘ফ্যাসিবাদী’ শাসনব্যবস্থা হটানোর পর ক্ষমতায় এসেছে। দেশের আমূল সংস্কারের কর্মসূচি তাদের হাতে। এমকি গণমাধ্যম সংস্কারেও কমিশন হয়েছে। সেই কমিশন আশা সঞ্চারী রিপোর্টও দিয়েছে।
দুই.
গাজীপুরে এক সাংবাদিককে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। পত্রিকার মালিকদের সংগঠন ‘নোয়াব’ এক বিৃবতিতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সরকার আবার সেই বিবৃতি প্রত্যাখ্যান করে পাল্টা বিবৃতি দিয়েছে।
এদিকে গাজীপুরে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনায় ক্ষোভ, তীব্র নিন্দা জানিয়ে শোক প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস)। এ হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিতের পাশাপাশি দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি। অন্য এক খবরে বলা হচ্ছে দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বেড়েই চলছে।
এছাড়া পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষকদের নানাভাবে নির্যাতন ও হয়রানি করা হচ্ছে বলে বিবৃতি এসেছে গণমাধ্যমে। ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার অপরাধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকাকে একাডেমিক দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে খবর বেরিয়েছে।
তিন.
এসব বিষয়ে আলোচনার আগে দেখা যাক গাজীপুরের ঘটনার বিস্তারিত। গাজীপুরে এক সাংবাদিককে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত মো. আসাদুজ্জামান তুহিন (৩৮) দৈনিক প্রতিদিনের কাগজের গাজীপুরের স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কাজ করতেন। তার বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামে। তাকে হত্যার একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, আসাদুজ্জামান তুহিন থাকতেন গাজীপুর মহাগরীর চৌরাস্তা এলাকায়। পূর্বশত্রুতার জেরে পাঁচ-ছয়জন দুর্বৃত্ত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় তাকে ধারালো অস্ত্র নিয়ে ধাওয়া করে। এ সময় তিনি দৌড়ে ঈদগাঁ মার্কেটের একটি চায়ের দোকানে আশ্রয় নেন। পরে দুর্বৃত্তরা তাকে দোকানের ভেতরে ঢুকে এলোপাথাড়ি কোপাতে থাকে। একপর্যায়ে তিনি মারা গেলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।
স্থানীয় ব্যবসায়ী খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘আমি দোকানে বসেছিলাম। হঠাৎ তুহিন দৌড়ে এসে আমার দোকানে ঢুকে পড়ে। পরে তিনজন আমার দোকানের ভেতরে ঢুকে তাকে কুপিয়ে হত্যা করে। এ সময় দোকানের বাইরে দুজন রামদা নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আমি বাধা দিতে গেলে তারাও আমাকে কুপিয়ে হত্যা করার হুমকি দেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘ওই সময় অনেক লোক তাকিয়ে দেখেছে, কিন্তু কেউ বাঁচাতে আসেনি।’
গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার মো. রবিউল হাসান বলেন, ‘আমরা এ ঘটনায় কিছু ভিডিও ফুটেজ হাতে পেয়েছি। কিছু ক্লুও পেয়েছি। এ ঘটনার জড়িতদের ধরতে অভিযান শুরু করেছি। একজন সাংবাদিককে এভাবে কুপিয়ে হত্যা খুবই দুঃখজনক।’
গাজীপুরের বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহিন খান জানান, খবর পেয়ে বাসন থানা পুলিশ নিহত সাংবাদিকের লাশ উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠিয়েছে। এ খবর প্রথম আলোর।
চার.
এবার আসা যাক নোয়াবের বিবৃতি বিষয়ে-
সম্প্রতি দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকাকে কেন্দ্র করে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এবং সামগ্রিকভাবে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে নিউজপেপার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব)। এছাড়া ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ বা টিআইবির সর্বশেষ প্রতিবেদনে গণমাধ্যম ও তথ্য প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে যে চিত্র ফুটে উঠেছে, তা দুঃখজনক বলে উল্লেখ করেছে সংগঠনটি।
দেশে মন খোলে সমালোচনা করার পরিবেশ বজায় রাখতে হলে সাংবাদিকদের বেতন বঞ্চনা, শ্রম অধিকার হরণ করা চলবে না। এ দায় মালিক পক্ষের। অন্যদিকে সরকারকে ভয়হীন পরিবেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতেও থাকতে হবে বদ্ধপরিকর। ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আমাদের কাছে কেবল একটি স্লোগান নয়; এটি এমন একটি নীতি, যা আমরা পালন করি।’ সরকারের এই কথা যেন কথার কথা না হয়- সত্যিকার অর্থেই যেন পালন করা হয়- সেটিই দেখতে চায় দেশের মানুষ। আর কোনো সাংবাদিককে যেন জীবন দিতে না হয়, জেলে ঢোকানো না হয় সাংবাদিকতার কারণে। - ড. হারুন রশীদ
গতকাল বৃহস্পতিবার নোয়াবের সভাপতি এ কে আজাদ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, ‘গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার যে প্রত্যাশা নিয়ে দেশবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল, সেখানে তথ্যপ্রকাশ, মতপ্রকাশ এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতার মতো মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত হবে বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেছিলাম। দুর্ভাগ্যজনকভাবে গত এক বছরে সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি।’
নোয়াবের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “আমরা আশঙ্কাজনকভাবে দেখলাম, সম্প্রতি দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকায় ‘মব’ তৈরি করে উদ্যোক্তাদের উচ্ছেদ ও দাবি আদায়ের চেষ্টা হয়েছে। কর্মীদের কোনো দেনা-পাওনার বিষয় থাকলে তা শ্রম আদালতের মাধ্যমে মীমাংসা হওয়ার কথা। সংবাদ বা কনটেন্ট-সংক্রান্ত কোনো বিরোধ মীমাংসায় বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলে অভিযোগ করা যেত। কিন্তু তা না করে পত্রিকার কার্যালয়ে ও পোর্টালে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে।”
টিআইবির প্রতিবেদনে সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন, হয়রানির যে চিত্র উঠে এসেছে, তা উল্লেখ করে নোয়াবের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত এক বছরে (আগস্ট ২০২৪ থেকে জুলাই ২০২৫) ৪৯৬ জন সাংবাদিক হয়রানির শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ২৬৬ জনকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানসংক্রান্ত হত্যা মামলার আসামি করা হয়েছে। দায়িত্ব পালনকালে তিনজন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। কমপক্ষে ২৪ জন গণমাধ্যমকর্মীকে পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে, আটটি সংবাদপত্রের সম্পাদক এবং ১১টি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের বার্তাপ্রধানকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
উপরিউক্ত পরিস্থিতি বিবেচনায় নোয়াবের পক্ষ থেকে একটি অবাধ ও গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে সরকারের জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছে নোয়াব। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কোনো সংবাদপত্র কিংবা গণমাধ্যমে ‘মব’ সৃষ্টি করে মালিকপক্ষকে হুমকি, ভয়ভীতি দেওয়ার সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে।
নোয়াব বলেছে, ‘আমরা বিশ্বাস করি, গণমাধ্যমের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করা সম্ভব হলে তা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ভিতকে আরও মজবুত করবে।’
পাঁচ.
সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানির ঘটনায় বিবৃতি দিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস)। এইচআরএসএস জানিয়েছে, গত জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে ২৮৪ সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন।
গতকাল শুক্রবার এইচআরএসএস'র নির্বাহী পরিচালক ইজাজুল ইসলাম এক বিবৃতিতে বলেন, আসাদুজ্জামান মুঠোফোনে একদল অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীর ভিডিও ধারণ করছিলেন, যা তার পেশাগত দায়িত্বের অংশ। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, সেই মুহূর্তেই তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
এ ঘটনা শুধু একটি মানবজীবনের করুণ পরিণতি নয়, এটি দেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের অধিকার ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তার ওপর সরাসরি হামলা।
বিবৃতিতে বলা হয়, এটি প্রমাণ করে, দেশে সন্ত্রাসী ও অস্ত্রধারীদের দুঃসাহস কতটা বেড়ে গেছে এবং তারা আইন ও প্রশাসনের ভয় না করে প্রকাশ্যে অপরাধ সংঘটনে উৎসাহিত হচ্ছে।
এইচআরএসএস'র তথ্য মতে, গত সাত মাসে (জানুয়ারি থেকে জুলাই) কমপক্ষে ১৬৯টি হামলার ঘটনায় ২৮৪ জন সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্ততপক্ষে ১২৬ জন, লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন ২৫ জন, হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন ৩৯ জন ও গ্রেফতার হয়েছেন ১০ জন সাংবাদিক।
এছাড়া ২৪টি মামলায় ৯৪ জন সাংবাদিককে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এ সময়ে সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩ এর অধীনে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ৫টি মামলা করা হয়েছে।
এইচআরএসএস'র বিবৃতিতে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, দ্রুত সময়ের মধ্যে এ হত্যাকাণ্ডের পেছনের প্রকৃত কারণ ও জড়িতদের চিহ্নিত করতে হবে। শুধু ‘সাময়িক গ্রেফতার’ বা ‘চোখে ধুলো দেওয়া’ নয়, প্রকৃত অপরাধীদের মুখোশ উন্মোচন করতে হবে।
এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া জরুরি। যেন ভবিষ্যতে কেউ আর সাংবাদিকদের ওপর আঘাত করার সাহস না পায়।
পেশাগত দায়িত্ব পালনরত সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে একটি স্বতন্ত্র ও কার্যকর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা আবশ্যক উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, স্বাধীনভাবে সাংবাদিকতা চর্চা করার পরিবেশ না থাকলে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ছয়.
নোয়াবের বিবৃতির জবাবে সরকার যা বলছে
সম্প্রতি বাংলাদেশ সংবাদপত্র মালিক সমিতি (নোয়াব) গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও তথ্যপ্রাপ্তি পরিস্থিতি নিয়ে দেওয়া বিবৃতি দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, গণমাধ্যমের স্বচ্ছতা, নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার প্রতি সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
শুক্রবার (৮ আগস্ট) ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি এ কথা বলেন।
আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, সম্প্রতি নোয়াব গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও তথ্যপ্রাপ্তি পরিস্থিতি নিয়ে যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, আমরা তা স্বীকার করছি। তবে গত এক বছরে অন্তর্বর্তী সরকার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বা গণমাধ্যমের স্বাধীকার ক্ষুণ্ণ করেছে-এমন ইঙ্গিত আমরা দৃঢ়ভাবে ও স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করছি।
এসময় মৌলিক মূল্যবোধ রক্ষায় ও উন্নত করতে সরকার সব অংশীজনকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
নোয়াবকে জবাব: সত্য ঘটনা তুলে ধরা শীর্ষক শিরোনামে উপ-প্রেস সচিব নোয়াবের দেওয়া বিবৃতির বিভিন্ন বিষয় ব্যাখ্যা দেন:
১.গণমাধ্যমের কার্যক্রমে সরকারের হস্তক্ষেপ নেই
দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে অন্তর্বর্তী সরকার কোনো গণমাধ্যমের সম্পাদকীয়, পরিচালনা বা ব্যবসায়িক কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করেনি। বরং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণার মুখেও আমরা অসাধারণ সংযম দেখিয়েছি। টেলিভিশন টক শো ও কলামে এই সরকারের বিরুদ্ধে প্রায়ই মিথ্যা ও উসকানিমূলক বক্তব্য প্রচারিত হয়েছে। তবুও আমরা না সেন্সর করেছি, না প্রতিশোধ নিয়েছি; এমনকি প্ররোচিত হলেও আমরা অভিযোগ করিনি, লাইসেন্স স্থগিত করিনি। বরং আগের সরকারের সময় জোরপূর্বক বন্ধ করে দেওয়া কিছু গণমাধ্যমকে পুনরায় প্রকাশনা বা সম্প্রচারের সুযোগ করে দিয়েছি। এটি আমাদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও মুক্ত গণমাধ্যমের প্রতি অঙ্গীকারের স্পষ্ট প্রমাণ।
২. সরকারে প্রবেশাধিকার সবসময় উন্মুক্ত ছিল
সীমিত প্রবেশাধিকারের অভিযোগের বিপরীতে সাংবাদিকরা আমাদের উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীদের সঙ্গে সরাসরি ও উন্মুক্তভাবে যোগাযোগের সুযোগ পেয়েছেন। কোনো সাংবাদিককে তার গণমাধ্যমের পরিচয় বা সম্পাদকীয় অবস্থানের কারণে সাক্ষাৎকার বা ব্রিফিং থেকে বঞ্চিত করা হয়নি। আমরা স্বচ্ছতায় বিশ্বাস করি এবং আমাদের আচরণ সেটিরই প্রতিফলন।
৩. সচিবালয়ের অ্যাক্রেডিটেশন প্রক্রিয়ার সংস্কার
অ্যাক্রেডিটেশন ব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে নোয়াবের সমালোচনা ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর। আগের পদ্ধতিটি ছিল মারাত্মকভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত; প্রবেশপত্র এমন ব্যক্তিদের হাতে পৌঁছেছিল যাদের কোনো বৈধ সাংবাদিকতার ভূমিকা ছিল না- যাদের মধ্যে কিছু ছিল রাজনীতিবিদ, লবিস্ট ও সুযোগসন্ধানী, যারা এই বিশেষ সুবিধা ব্যবহার করে নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় অন্যায্য প্রভাব বিস্তার করতো।
আমরা সেই ভাঙা কাঠামো ভেঙে দিয়ে একটি অস্থায়ী পাস ব্যবস্থা চালু করেছি, যা নিশ্চিত করছে যে প্রকৃত সাংবাদিকরা সচিবালয়ে প্রবেশাধিকার পাচ্ছেন। এটি প্রবেশাধিকার সীমিত করার জন্য নয়, বরং একটি দুর্নীতিগ্রস্ত প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনার জন্য।
আগের অ্যাক্রেডিটেশন নীতিমালায় সাংবাদিকদের সরকারপন্থি অবস্থান নিতে বাধ্য করার শর্ত ছিল। এমনকি এতে কিছু অপমানজনক ধারা ছিল, যা সাংবাদিকদের সাংবিধানিক অধিকারের পরিপন্থি। অন্তর্বর্তী সরকার সেটি সংশোধন করেছে। দীর্ঘমেয়াদি নবায়ন সুবিধাসহ নতুন অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড প্রদানের প্রক্রিয়া চলছে।
৪. চাকরির নিরাপত্তা
স্পষ্ট করে বলা প্রয়োজন: যেসব সাংবাদিক তাদের চাকরি হারিয়েছেন, তা সরকারের নির্দেশে নয়, বরং গণমাধ্যম মালিকদের সম্পাদকীয় বা করপোরেট কৌশলগত পুনর্বিন্যাসের কারণে হয়েছে। এগুলো সম্পূর্ণরূপে মালিকপক্ষের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক সিদ্ধান্তের ফল, সরকারের কোনো চাপ বা নির্দেশ নয়।
৫. সাংবাদিকদের নিরাপত্তা: যৌথ দায়িত্ব
আমরা সব নাগরিকের মতো সাংবাদিকদের শারীরিক নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা আমাদের অগ্রাধিকার, তবে এই দায়িত্ব গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গেও যৌথভাবে ভাগ করে নিতে হবে।
এ বছরের শুরুর দিকে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে গঠিত মিডিয়া সংস্কার কমিশন একটি নতুন ‘সাংবাদিক সুরক্ষা আইন’ প্রণয়নের প্রস্তাব করেছে, যাতে আইনি সুরক্ষা বৃদ্ধি পায় এবং সরকার বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভয়ের কারণে স্ব-সেন্সরশিপ কমে। সরকার প্রস্তাবিত আইনটি প্রণয়নের বিষয়টি বিবেচনা করছে।
৬. শিল্পের ভেতরেও আত্মসমালোচনার প্রয়োজন
আমরা গঠনমূলক সমালোচনার জন্য উন্মুক্ত থাকলেও নোয়াবকে পরামর্শ দিচ্ছি প্রথমে নিজেদের ভেতরে নজর দিতে। নিজেদের সদস্যদের কার্যকলাপ পরীক্ষা করা উচিত- বিশেষ করে সাংবাদিকদের বেতন বঞ্চনা, শ্রম অধিকার হরণ, সুরক্ষা সরঞ্জাম ছাড়া শত্রুভাবাপন্ন পরিবেশে কাজ করানো এবং অসহনীয় কর্মপরিবেশ সৃষ্টির অভিযোগে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
একটি সূক্ষ্ম রূপান্তরের সময়কাল পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসন হিসেবে আমরা ইচ্ছাকৃতভাবেই ‘হ্যান্ডস-অফ’ পদ্ধতি বজায় রেখেছি, যাতে গণমাধ্যম ভয় বা হস্তক্ষেপ ছাড়া কাজ করতে পারে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আমাদের কাছে কেবল একটি স্লোগান নয়; এটি এমন একটি নীতি, যা আমরা পালন করি। তথ্যের ভিত্তিতে সুনির্দিষ্টভাবে দায়ী পক্ষকে লক্ষ্য করে উপস্থাপিত হলে নোয়াবের উদ্বেগ অধিক গুরুত্ব পেত। ঘটনাবলির ভুল ব্যাখ্যার ওপর ভিত্তি করে করা সাধারণীকৃত অভিযোগ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অগ্রসর করে না, বরং বাংলাদেশের গণমাধ্যম খাতের প্রকৃত সমস্যাগুলো থেকে মনোযোগ সরিয়ে নেয়। আমরা স্বচ্ছতা, নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং এই মৌলিক মূল্যবোধ রক্ষায় ও উন্নত করতে আমরা সব অংশীজনকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানাই।
সাত.
মানবাধিকার সংস্থা অধিকার যা বলছে
দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড থামছেই না। গত দুই দশকে ‘ক্রসফায়ার, বন্দুকযুদ্ধ, অ্যানকাউন্টার’- এরকম নামে চলে আসছে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। প্রায় প্রতিটি ঘটনায় বক্তব্যও গৎবাঁধা—প্রতিপক্ষ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা চালালে আত্মরক্ষার্থে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলি ছোড়ে। এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়াও একটি বড় উদ্বেগের বিষয় বলে মনে করা হচ্ছে।
গত বছর ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে দেশে ক্ষমতার পটপরিবর্তন হয়। পতন ঘটে শেখ হাসিনা সরকারের। রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে আসে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পূর্ণ হলো। এসময়ও বন্ধ হয়নি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড।
মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’র তথ্য বলছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়কালে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত ১০ মাসে দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ২৯ জন। এর মধ্যে নির্যাতনে ১১ জন, গুলিতে ১৩ জন এবং পাঁচজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
আট.
বহুলাংশে শৃঙ্খলমুক্ত স্বাধীন গণমাধ্যম গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের দারুণ গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে বাংলাদেশের সংবাদপত্রে একটি বড় পরিবর্তন আসে। বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি থাকাকালে মুদ্রণ এবং প্রকাশনা আইন সংশোধন করেন। ফলে কোনো সরকার চাইলেও এখন আর পত্রিকার প্রকাশনা (ডিক্লারেশন) বন্ধ করতে পারে না। এটা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বহুলাংশে নিশ্চিত করেছে। যে সমাজে গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে সেখানে দুর্নীতি, অনিয়ম অনেকাংশেই হ্রাস পায় এবং একটি জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা লাভ করে। একটি গণতান্ত্রিক সরকারের গুরুদায়িত্ব হচ্ছে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।
বাংলাদেশের গণমাধ্যম দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার এ কথা বলা যায় নির্দ্বিধায়। সরকারি দল বিরোধী দলের নেতাকর্মী কিংবা যত বড় শক্তিশালী ব্যক্তিই হোন না কেন তাদের হাঁড়ির খবর বের করে আনতে গণমাধ্যম বিন্দুমাত্র বিচলিত নয়। এর কারণ গণমাধ্যমকে প্রতিনিয়ত পাঠকের কাছে জবাবদিহিতা করে টিকে থাকতে হয়। তাই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে তার স্বাধীন সত্তার পূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করা ব্যতিরেকে বিকল্প কিছু নেই। যারা এ দৌড়ে শামিল হবেন না তারা পিছিয়ে পড়বেন, প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবেন না এবং এক সময় সেসব গণমাধ্যমের অপমৃত্যু হবে। এটাই তাদের নিয়তি।
বলতে গেলে এক্ষেত্রে এক ধরনের নীরব কিংবা প্রকাশ্য প্রতিযোগিতাও আছে। কারা কোন খবরটি কত তাড়াতাড়ি পাঠকের কাছে কতটা নির্ভুলভাবে পৌঁছাতে পারে- এ মানসিকতা তাদের নিয়ত তাড়িয়ে বেড়ায়। এই প্রতিযোগিতা পেশাদারত্বেরই একটি অংশ। পেশাদারি মনোভাব না থাকলে গণমাধ্যম তার সঠিক চরিত্র বজায় রাখতে পারবে না। এই পেশাদারত্ব হচ্ছে আসলে পাঠকের কাছে দায়বদ্ধতা।
দেশের স্বার্থ বড় করে দেখাই হওয়া উচিত গণমাধ্যমের মূল নীতি। কিন্তু অনেক সময় ব্যক্তি ও গোষ্ঠী স্বার্থই বড় হয়ে ওঠে। কোনো কোনো গণমাধ্যম মালিকের স্বার্থকেই বড় করে দেখে। কারণ মালিকের বিপুল অর্থলগ্নির কারণেই তো ওই গণমাধ্যমটি আত্মপ্রকাশ করতে পেরেছে।
তাই টিকে থাকার স্বার্থে তাকে আপস করতে হয়। মালিক যদি ঋণ খেলাপি হয় তাহলে ওই গণমাধ্যমে ঋণ খেলাপি সম্পর্কে কোনো সংবাদ প্রকাশিত হবে না। যদি হাউজিং ব্যবসায়ী হন তাহলেও ওই সম্পর্কে নেতিবাচক কোনো সংবাদ প্রকাশিত হবে না। যদি কালো টাকার মালিক হন, কর ফাঁকি দেন তাহলেও এ সংক্রান্ত কোনো সংবাদ প্রকাশিত হবে না।
বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছে একরকম জিম্মি অবস্থায় আছে গণমাধ্যম। বিজ্ঞাপন দাতা প্রতিষ্ঠান যত অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গেই জড়িত থাকুক না কেন প্রচার সংখ্যার জোর না থাকলে ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে একটি শব্দও প্রকাশিত হবে না। স্বাধীনতা বলি আর দায়বদ্ধতা বলি দুটোই এক্ষেত্রে অচল।
পেশাদারি উৎকর্ষ এবং দক্ষতাও একটি প্রধান বিষয়। গণমাধ্যমের একটি ভুল শব্দ অনেক বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। শুধু তাই নয় কোনটি খবর নয় আর কোনটি খবর, কোন খবরের কতটা গুরুত্ব দেওয়া উচিত এ ব্যাপারেও গণমাধ্যমের সচেতনতার অভাব লক্ষ্য করা যায়।
সংবাদের প্রাথমিক জ্ঞান লাভের ক্ষেত্রে বলা হয়- ‘ইফ ডগ বাইটস অ্যা ম্যান ইট ইজ নট নিউজ, ইফ ম্যান বাইটস অ্যা ডগ ইজ নিউজ’। অর্থাৎ কুকুর মানুষকে কামড়ালে কোনো খবর হবে না কিন্তু মানুষ কুকুরকে কামড়ালে সেটা খবর। কিন্তু এখন প্রায় সবই খবর। বলা হয়ে থাকে ‘তোমার স্বাধীনতা আমার নাকের ডগা পর্যন্ত।’ এ পর্যন্ত তুমি ছড়ি ঘোরাতে পার। কিন্তু তোমার ছড়ি আমার নাক বা শরীর স্পর্শ করলে সেখানেই স্বাধীনতা বিপন্ন হয়। ভলতেয়ারের সেই বিখ্যাত উক্তিও স্মরণযোগ্য- ‘তোমার মতের সঙ্গে আমি একমত নাও হতে পারি কিন্তু তোমার মতপ্রকাশের অধিকারের জন্য আমি জীবনও দিতে পারি।’
এই স্বাধীনতা তখনই সার্থক হবে যখন তাতে জনকল্যাণের বিষয়টি প্রাধান্য পাবে। প্রসঙ্গত নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের একটি উক্তি স্মরণযোগ্য। তার মতে গণমাধ্যম থাকলে দুর্ভিক্ষও দূর করা সম্ভব। কেননা কোথাও দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে সেটা যদি গণমাধ্যমে ওঠে আসে তাহলে সরকার বা রাষ্ট্র সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে। এর ফলে কেউ না খেয়ে মরবে না।
একদিকে মানবিক মূল্যবোধ রক্ষা করে তাকে বিকশিত করা, অন্যদিকে শুধু ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি নিয়ে পাঠককে খদ্দেরে পরিণত করা- গণমাধ্যম যদি এই ধরনের দ্বিচারিতায় লিপ্ত হয় তাহলে তার স্বাধীনতা এবং দায়বদ্ধতার জায়গাটি দারুণভাবে নষ্ট হয়। এতে আর যাই হোক সাধারণ মানুষের কোনো কল্যাণ হয় না।
নয়.
নোয়াবের বিবৃতির জবাবে সরকার যা বলছে তারমধ্যে নিচের বক্তব্যগুলো সাংবাদিক সমাজকে দারুণভাবে আশান্বিত করছে। বিবৃতির অংশটি পুনরায় উল্লেখ করেছি-
‘আমরা গঠনমূলক সমালোচনার জন্য উন্মুক্ত থাকলেও নোয়াবকে পরামর্শ দিচ্ছি প্রথমে নিজেদের ভেতরে নজর দিতে। নিজেদের সদস্যদের কার্যকলাপ পরীক্ষা করা উচিত- বিশেষ করে সাংবাদিকদের বেতন বঞ্চনা, শ্রম অধিকার হরণ, সুরক্ষা সরঞ্জাম ছাড়া শত্রুভাবাপন্ন পরিবেশে কাজ করানো এবং অসহনীয় কর্মপরিবেশ সৃষ্টির অভিযোগে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
একটি সূক্ষ্ম রূপান্তরের সময়কাল পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসন হিসেবে আমরা ইচ্ছাকৃতভাবেই ‘হ্যান্ডস-অফ’ পদ্ধতি বজায় রেখেছি, যাতে গণমাধ্যম ভয় বা হস্তক্ষেপ ছাড়া কাজ করতে পারে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আমাদের কাছে কেবল একটি স্লোগান নয়; এটি এমন একটি নীতি, যা আমরা পালন করি।
দশ.
দেশে মন খোলে সমালোচনা করার পরিবেশ বজায় রাখতে হলে সাংবাদিকদের বেতন বঞ্চনা, শ্রম অধিকার হরণ করা চলবে না। এ দায় মালিক পক্ষের অন্যদিকে সরকারকে ভয়হীন পরিবেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতেও থাকতে হবে বদ্ধ পরিকর। ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আমাদের কাছে কেবল একটি স্লোগান নয়; এটি এমন একটি নীতি, যা আমরা পালন করি।’ সরকারের এই কথা যেন কথার কথা না হয়- সত্যিকার অর্থেই যেন পালন করা হয়- সেটিই দেখতে চায় দেশের মানুষ। আর কোনো সাংবাদিককে যেন জীবন দিতে না হয়, জেলে ঢোকানো না হয় সাংবাদিকতার কারণে।
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট, ডেপুটি এডিটর জাগো নিউজ।
[email protected]
এইচআর/এমএস