সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয় সম্পাদকীয়
প্রকাশিত: ০৪:০৬ এএম, ১২ নভেম্বর ২০১৭

রংপুরে ফেসবুকে ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগে যে অপতৎপরতা চালানো হয়েছে তা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। এর আগেও এ ধরনের ঘটনায় প্রাণ ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে একটি গোষ্ঠি ওৎ পেতে থাকে যে কোনো উসিলায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার। রংপুরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়ি ঘরে আগুন দিয়ে আবারো সেই অপচেষ্টায়ই চালানো হয়েছে। এ ধরনের অপতৎপরতা কঠোর হাতে দমন করতে হবে। জনসাধারণের জানমাল রক্ষাসহ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে হবে যে কোনো মূল্যে।

গঙ্গাচড়া উপজেলার খলেয়া ইউনিয়নের ঠাকুরপাড়া এলাকার মৃত খগেন রায়ের ছেলে টিটু রায় ৫ নভেম্বর ফেসবুকে ‘ধর্মীয় অবমাননাকর’ স্ট্যাটাস দেন বলে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কয়েক দিন ধরে ওই গ্রাম ও আশপাশের এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছিল। গঙ্গাচড়া উপজেলার খলেয়া ইউনিয়নের লালচান্দপুর গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন বাদী হয়ে টিটু রায়কে আসামি করে ৫ নভেম্বর গঙ্গাচড়া থানায় মামলা করেন। টিটু রায় গ্রামে থাকেন না। নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করেন। গত মঙ্গলবার ওই যুবককে গ্রেফতারের দাবিতে পাগলাপীর এলাকায় বিক্ষোভ হয়। ওই দিন বিক্ষোভ সমাবেশে কয়েকশ মানুষ ছিলেন। বিক্ষোভের পর তাকে (টিটু) গ্রেফতারের দাবিতে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়।

পরে পুলিশ সুপারের কাছে গিয়ে তাকে গ্রেফতারের জন্য ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয়া হয়। এরপরেও সে গ্রেফতার না হওয়ায় এরই প্রতিবাদে শুক্রবার জুমার নামাজের পর স্থানীয় মুসল্লিরা একজোট হয়ে পাগলাপীর বাজারে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু করেন। এসময় ওই কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে আশপাশের কয়েক হাজার মুসল্লি যোগ দেন। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ মুসল্লি ও গ্রামবাসী ঠাকুরপাড়ার ৭/৮টি বাড়িতে অগ্নিযোগ ও রংপুর-সৈয়দপুর মহাসড়ক অবরোধ করে বেশ কয়েকটি গাড়িতে ভাঙচুর চালায়। এসময় পুলিশ বাঁধা দিলে মুসল্লিদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে হাবিব (২৭) নামে এক স্থানীয় যুবক নিহত ও পুলিশসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে।

যার স্যাটাসকে কেন্দ্র করে এই লঙ্কাকাণ্ড সেই টিটু রায়ের মা জীতেন বালাসহ অন্য স্বজনদের দাবি, টিটু অশিক্ষিত। সে লেখাপড়া জানে না। কীভাবে ফেসবুক চালাতে হয় তাও সে জানে না। টিটুকে ফাঁসাতে কেউ পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটাতে পারে। তারা এর সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির দাবি জানান। এর আগেও এ ধরনের ঘটনায় দেখা গেছে যার বিরুদ্ধে অভিযোগ সে আসলে কিছু জানেই না।

রংপুরে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর যে হামলা হয়েছে, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। একটি স্বাধীন দেশে শুধু ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে নাগরিকদের হয়রানি, নির্যাতনের শিকার হতে হবে- এটা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। গুটিকয়েক স্বার্থান্বেষী মহলের কারণে দেশের ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট হবে- এটা হতে পারে না। সরকারকেও জনসাধারণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এটা সাংবিধানিক দায়িত্ব। কোনো নাগরিক তার ধর্মীয় পরিচয় যাই থাক না কেন, তার প্রতি বৈষম্য করা যাবে না। রংপুরে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর যে ধরনের বর্বরতা চালানো হয়েছে, তার পুনরাবৃত্তি কিছুতেই কাম্য নয়। সেখানে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এ দেশের ঐতিহ্য যাতে কোনোভাবেই নষ্ট না হয়, সে ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এজন্য সব নাগরিকের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে নিতে হবে কঠোর ব্যবস্থা। রংপুরে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ভয়ভীতি দূর করতে হবে। সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়েই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা হতে পারে। এ ব্যাপারে সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে।

এইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।