‘শাবানা’ শুধু নাম নয়, এক প্রজন্মের আবেগ
বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসের পাতায় এমন কিছু নাম আছে, যেগুলো কেবল একজন শিল্পীকে নির্দেশ করে না; জড়িয়ে থাকে একটি সময়, সমাজ ও আবেগের অধ্যায়। তেমনই এক নাম শাবানা। যিনি শুধু রূপালি পর্দার নায়িকা নন, ছিলেন লাখো দর্শকের স্বপ্ন, ভালোবাসা আর সম্মানের প্রতিচ্ছবি। তার অভিনয়ের মাধুর্য, চোখের ভাষা আর চরিত্রের গভীরতা আজও অনেকের কাছে সিনেমার সংজ্ঞা হয়ে আছে। জন্মদিনে তাকে ঘিরে তাই শুধুই স্মরণ নয়, এ এক আবেগময় ভালোবাসার পুনরুজ্জীবন। লেখা: জান্নাত শ্রাবণী; ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া থেকে
-
আজ কিংবদন্তি এই অভিনেত্রীর জন্মদিন। শাবানার পুরো নাম আফরোজা সুলতানা রত্না। নিঃশব্দ অথচ দীপ্ত এক আলো হয়ে তিনি রূপালি পর্দায় আবির্ভূত হয়েছিলেন, যিনি হয়ে উঠেছিলেন সময়ের চেয়ে অনেক এগিয়ে থাকা একজন নারীর প্রতিচ্ছবি।
-
১৯৬৭ সালে চলচ্চিত্রজগতে পা রাখেন গুণী এই অভিনেত্রী। ‘চকোরী’ সিনেমায় নায়িকা হিসেবে অভিষেক হলেও তার অভিনয়ে ছিল পরিণত ও আত্মবিশ্বাসী উপস্থিতি।
-
পরবর্তীতে প্রতিভা, অধ্যবসায় ও একনিষ্ঠতায় তিনি হয়ে উঠেছিলেন ৭০–৯০ দশকের সবচেয়ে সফল ও জনপ্রিয় নায়িকা।
-
শাবানার অভিনয়ে কেবল সংলাপ ছিল না, ছিল চোখের ভাষা, মুখভঙ্গির নীরব শক্তি।
-
সুজন সখী, দেনমোহর, অশান্ত প্রহর, তিন কন্যা, জননী, তিতাস একটি নদীর নাম-এর মতো অসংখ্য কালজয়ী সিনেমায় তিনি শুধু চরিত্র নন, হয়ে উঠেছিলেন নারীর সংগ্রাম, প্রেম, মমতা আর আত্মত্যাগের প্রতিচ্ছবি।
-
তার উপস্থিতি পর্দা আলো করে তুলতো এবং দর্শক তার প্রতিটি সংলাপে খুঁজে পেতেন বাস্তব জীবনের ছায়া।
-
বাংলা চলচ্চিত্রের সোনালি যুগে শাবানার বিপরীতে ছিলেন রাজ্জাক, ফারুক, আলমগীর, সোহেল রানা, ইলিয়াস কাঞ্চনের মতো তুখোড় অভিনেতারা। কিন্তু এই নায়কদের পাশে থেকেও শাবানা ছিলেন নিজের জগতে স্বতন্ত্র। অনেক সময় এমন দৃশ্য দেখা গেছে যেখানে নির্মাতারা গল্প গড়েছেন শাবানাকেই কেন্দ্র করে।
-
তার একক জনপ্রিয়তা, টিকিট বিক্রির দাপট ও সুনাম সবই প্রমাণ করেছে তিনি শুধু ‘নায়িকা’ ছিলেন না, ছিলেন একটি প্রতিষ্ঠান।
-
শাবানার চলচ্চিত্রে বারবার উঠে এসেছে দেশপ্রেম, নৈতিকতা ও সামাজিক বার্তা। শিশুদের শিক্ষা, নারী নির্যাতন, গরিব মানুষের অধিকার, এইসব সামাজিক ইস্যু নিয়ে বানানো সিনেমাগুলোতে তার অভিনয় ছিল যেন নির্ভুল প্রতিবাদের ভাষা। আজো তুমি আছো, অবুঝ শিশু, পেনশন, রক্ত দিয়ে নাম লিখেছি, এসব সিনেমায় তার চরিত্রগুলো দর্শকের হৃদয়ে আজও গেঁথে আছে।
-
বাংলাদেশ সরকার তাকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ৭ বার ভূষিত করেছে। পেয়েছেন আজীবন সম্মাননা, বাচসাস পুরস্কারসহ বহু আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। কিন্তু এসব পুরস্কারের চেয়েও বড় অর্জন মানুষের ভালোবাসা, যেটি আজও অটুট।
-
১৯৯৮ সালে তিনি হঠাৎ করেই চলচ্চিত্রকে বিদায় জানান। যুক্তরাষ্ট্রে পরিবার নিয়ে স্থায়ী হন। কেউ কেউ তাকে হারিয়ে ফেলার বেদনায় কাতর হয়েছিলেন, কেউবা অপেক্ষা করেছেন তার ফেরার। কিন্তু শাবানা নিজেকে আলাদা করে রেখেছেন লাইমলাইট থেকে। তবে সামাজিক কর্মকাণ্ডে তার অংশগ্রহণ আজও চলমান। বিশেষ করে স্বাস্থ্যসেবা ও দরিদ্র-শিক্ষা সহায়তায় তিনি নীরবে কাজ করে যাচ্ছেন।