আর্কিটেক্ট থেকে অভিনেতা, রিতেশের এক অপ্রচলিত যাত্রা
আজ অভিনেতা রিতেশ দেশমুখের জন্মদিন। বলিউডের এই অভিনেতা শুধু পর্দার হাসির মানুষ নন; তিনি একাধারে অভিনেতা, প্রযোজক, সমাজসচেতন নাগরিক এবং ব্যক্তিজীবনে এক অনুকরণীয় মানুষ। তার জীবন আর কাজের ভেতরে লুকিয়ে আছে এমন অনেক দিক, যা সাধারণত আলোচনায় আসে না। জন্মদিন উপলক্ষে তাই তাকে নিয়ে একটু ভিন্নভাবে ফিরে দেখা যাক। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে
-
রিতেশ দেশমুখ জন্মেছিলেন এমন এক পরিবারে, যেখানে পরিচয় তৈরি করে দেওয়ার মতো ক্ষমতা ছিল। তার বাবা প্রয়াত বিলাসরাও দেশমুখ ছিলেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী। চাইলে সেই পরিচয়ই হতে পারত তার সবচেয়ে বড় পরিচয়। কিন্তু রিতেশ ইচ্ছে করেই সেই ছায়া থেকে বেরিয়ে আসতে চেয়েছেন।
-
তিনি বহুবার বলেছেন, বাবার নাম তার জন্য সুবিধা যেমন ছিল, তেমনি ছিল চাপও। কারণ সবাই ধরে নিয়েছিল, তিনি কিছু না করেও এগিয়ে যাবেন। সেই ধারণা ভাঙতেই তাকে দ্বিগুণ পরিশ্রম করতে হয়েছে।
-
খুব কম মানুষই জানেন, অভিনয়ই ছিল না রিতেশের প্রথম স্বপ্ন। তিনি একজন প্রশিক্ষিত স্থপতি। বিদেশে পড়াশোনা শেষ করে দেশে ফিরে আসার পরও অভিনয়কে পেশা হিসেবে নেওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, তখন তার চেহারা বা কণ্ঠকে বলিউডের ‘নির্ধারিত নায়ক’ ছাঁচে ফেলা কঠিন ছিল। কিন্তু সেই সীমাবদ্ধতাকেই তিনি নিজের শক্তিতে পরিণত করেন স্বাভাবিকতা, আত্মবিশ্বাস আর আত্মব্যঙ্গের ক্ষমতা দিয়ে।
-
রিতেশ মানেই অনেকের কাছে কমেডি। কিন্তু তার অভিনয়জীবন শুধু হাসিতে আটকে নেই। ‘মস্তি’, ‘হাউসফুল’ বা ‘ধামাল’ এর মতো ছবিতে তিনি যেমন অনায়াসে হাসান, তেমনি ‘এক ভিলেন’ এ ভয়ংকর খলনায়কের চরিত্রে দর্শককে চমকে দেন। এই দ্বৈততা প্রমাণ করে তিনি কেবল কমেডিয়ান নন, বরং চরিত্র বোঝার একজন দক্ষ অভিনেতা।
-
বলিউডের ভেতরের মানুষজন প্রায়ই বলেন, রিতেশের সবচেয়ে বড় গুণ তার ব্যবহার। সেটে তিনি ‘স্টার’ হয়ে ওঠেন না; বরং টিমের একজন সদস্য হয়ে কাজ করেন। জুনিয়র শিল্পী থেকে টেকনিশিয়ান সবার সঙ্গেই তার সম্পর্ক বন্ধুসুলভ। এই গুণটাই তাকে ইন্ডাস্ট্রিতে দীর্ঘদিন টিকিয়ে রেখেছে, যেখানে সম্পর্কই অনেক সময় ক্যারিয়ারের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
-
ব্যক্তিজীবনে স্ত্রী জেনেলিয়া ডি’সুজা-এর সঙ্গে রিতেশের সম্পর্ক বলিউডে এক ব্যতিক্রমী উদাহরণ। গ্ল্যামার আর গসিপের জগতে থেকেও তারা নিজেদের সংসারকে রেখেছেন বাস্তব আর উষ্ণ।
-
দুই সন্তানকে নিয়ে তাদের জীবনযাপন সামাজিক মাধ্যমে যতটা আনন্দময় দেখায়, বাস্তবেও ততটাই পরিমিত ও সচেতন বলে সহকর্মীরা জানান।
-
রিতেশ শুধু ক্যামেরার সামনেই সীমাবদ্ধ নন। বাবার মৃত্যুর পর তিনি গ্রামীণ উন্নয়ন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে নানাভাবে যুক্ত হয়েছেন। বিশেষ করে মহারাষ্ট্রে খরা ও কৃষক সমস্যায় তার সক্রিয় ভূমিকা অনেকের নজর কেড়েছে। তিনি কখনো এই কাজগুলো প্রচারের আলোয় আনতে চান না, নীরবে কাজ করাই তার পছন্দ।
-
বলিউডে টিকে থাকার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো সময়ের সঙ্গে নিজেকে বদলানো। রিতেশ সেটা পেরেছেন। বড় বাজেটের ছবির পাশাপাশি তিনি ছোট চরিত্র, ওয়েবধর্মী কাজ কিংবা প্রযোজনার দিকেও মনোযোগ দিয়েছেন। অর্থাৎ, তিনি জানেন কখন সামনে থাকতে হবে, আর কখন পর্দার আড়াল থেকে কাজ করাই বুদ্ধিমানের।
-
রিতেশ দেশমুখের জন্মদিন মানে শুধু আরেকটি বছর যোগ হওয়া নয়; বরং এমন এক মানুষকে উদযাপন করা, যিনি হাসির মাধ্যমে মানুষকে আপন করেছেন, আবার প্রয়োজনে গম্ভীর চরিত্রে সমাজকে আয়না দেখিয়েছেন। ক্ষমতার উত্তরাধিকারকে পেছনে ফেলে নিজের জায়গা নিজে তৈরি করা এই অভিনেতা প্রমাণ করেছেন নাম নয়, কাজই শেষ কথা।
-
জন্মদিনে তাই তাকে শুধু অভিনয়ের জন্য নয়, মানুষ রিতেশ দেশমুখ হিসেবেও শুভেচ্ছা। কারণ, পর্দার বাইরেও তিনি সমানভাবে প্রাসঙ্গিক, সমানভাবে সম্মানিত।