মাংস নষ্টের ভয় নেই, যদি মেনে চলেন এই নিয়মগুলো
কোরবানির ঈদ মানেই আনন্দ, উৎসব আর ঘরে ঘরে মাংসের গন্ধে মুখরতা। কিন্তু এ আনন্দ অনেক সময়ই ম্লান হয়ে যায়, যদি দেখা যায়– সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করায় ফ্রিজের মাংসে বাসা বেঁধেছে পচন অথবা গন্ধ! গরম আবহাওয়ায় অল্প সময়েই নষ্ট হয়ে যেতে পারে বহু কষ্টে জবাই করা মাংস। অথচ কিছু সহজ নিয়ম মেনে চললেই এই বিপত্তি এড়ানো সম্ভব। মাংস দীর্ঘদিন ভালো রাখতে চাইলে এখনই জেনে নিন সেই জরুরি টিপসগুলো। ছবি: সংগৃহীত
-
কোরবানির মাংস ঘরে আনার পর দীর্ঘ সময় খোলা অবস্থায় রাখার অভ্যাস মোটেই ঠিক নয়। বিশেষ করে পাঁচ-ছয় ঘণ্টার মধ্যেই এটি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা উচিত, তা-ও এমনভাবে যেন মাংসের স্বাদ ও পুষ্টিগুণ অক্ষুণ্ণ থাকে।
-
পশু জবাইয়ের পরপরই মাংস রান্না বা ফ্রিজে রাখা একেবারেই উপযোগী নয়। কারণ কোরবানির পর মাংস স্বাভাবিকভাবে কয়েক ঘণ্টা শক্ত অবস্থায় থাকে। তাই প্রথমে মাংস কিছুটা নরম হতে দিন, তারপর ভালোভাবে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে রান্না করুন অথবা ফ্রিজে রাখুন। এতে করে মাংসের স্বাদ থাকবে অটুট এবং দীর্ঘ সময়েও তা নষ্ট হবে না।
-
মাংস সংরক্ষণের জন্য ফ্রিজে রাখা, হালকা জ্বাল দেওয়া, রান্না করে রাখা কিংবা রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করার মতো নানা উপায় রয়েছে। তবে অনেকেই পদ্ধতিগুলোর কথা জানলেও সঠিক নিয়ম না মানার কারণে মাংস নষ্ট হয়ে যায়।
-
মাংস রাখার আগে ফ্রিজ পরিষ্কার করে নেওয়া উচিত এবং নিশ্চিত হতে হবে, ফ্রিজের তাপমাত্রা উপযুক্ত আছে কি না। একই ফ্রিজে মাছ ও মাংস রাখা উচিত নয়। এছাড়া কাঁচা মাংস এবং রান্না করা মাংস একত্রে রাখাও স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায়, কারণ এতে জীবাণুর সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে।
-
সংরক্ষণের সময় মাংস পরিমাণমতো ছোট ছোট টুকরো করে নিতে হবে। তবে অতিরিক্ত ছোট করলেই ভেতরে পানি জমে যেতে পারে, যা ব্যাকটেরিয়ার জন্ম দেয়। তাই আগে রক্ত ও চর্বি পরিষ্কার করে মাংস ঝরিয়ে নিন।
-
প্যাকেট করার সময় প্রয়োজন অনুযায়ী ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে রাখলে ফ্রিজিং প্রক্রিয়া দ্রুত হবে এবং ব্যবহারের সময়ও সুবিধা হবে। হাড়সহ ও হাড় ছাড়া মাংস আলাদা করে রাখা ভালো। প্রতিটি প্যাকেট প্লাস্টিক ব্যাগ, জিপলক ব্যাগ বা ফয়েল পেপারে মুড়িয়ে রাখুন এবং বাতাস বের করে দিন, কারণ বাতাস থাকলে ব্যাকটেরিয়া দ্রুত গজিয়ে ওঠে।
-
অনেকে খবরের কাগজে মাংস মুড়ে পলিথিনে ভরে রাখেন, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক। কারণ খবরের কাগজের মুদ্রণ কালি মাংসে মিশে গিয়ে স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে। এ ছাড়া খোলা পাত্র বা ট্রেতে কোনোভাবেই মাংস ফ্রিজে রাখা উচিত নয়।
-
সংরক্ষিত প্রতিটি প্যাকেটের গায়ে তারিখ লিখে রাখলে পরে বুঝতে সুবিধা হয় কত দিন ধরে মাংস রাখা আছে। পাশাপাশি প্যাকেটের ওপর লেখা থাকলে-কিসের মাংস এবং কোন অংশের তাহলে প্রয়োজন অনুযায়ী বের করে নেওয়াও সহজ হয়।
-
ফ্রস্ট ফ্রিজ ব্যবহারের ক্ষেত্রে, সংরক্ষণের একদিন পর প্যাকেটগুলো আলতোভাবে নেড়েচেড়ে দেওয়া উচিত, যাতে তারা একে অপরের সঙ্গে লেগে না যায়। বিদ্যুৎ চলে গেলে বা লোডশেডিং বেশি হলে আইস বক্স ব্যবহার করা ভালো। একই সঙ্গে মনে রাখতে হবে, ফ্রিজ বারবার খোলা যাবে না তাতে ঠান্ডা নষ্ট হয়ে মাংস দ্রুত পচে যেতে পারে।
-
কাঁচা মাংস ডিপ ফ্রিজে সংরক্ষণের উপযুক্ত তাপমাত্রা হলো মাইনাস ১৮ থেকে ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই তাপমাত্রায় গরুর মাংস ৮-১০ মাস, খাসির মাংস ৫-৬ মাস, মহিষ বা উটের মাংস ৬ মাস এবং ভেড়ার মাংস ২-৩ মাস পর্যন্ত ভালো থাকে। তবে মাথা, কলিজা কিংবা মগজের মতো অঙ্গ বেশি দিন সংরক্ষণ না করাই ভালো।