অভিমানী রোদের নিচে ক্লান্ত শহর
যেন নির্জন দুপুরে ঘুমিয়ে আছে শহর। ঢাকা, যে শহর ঘড়ির কাঁটার চেয়েও দ্রুত চলে, সেখানে এখন শূন্যতা। ঈদের ছুটি শেষ হয়নি বলে এখনো শহর ফিরে পায়নি তার চিরচেনা রূপ। এর মধ্যে ভ্যাপসা গরমে নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট। মেরুল বাড্ডা থেকে লিংকরোড-যে রাস্তাগুলো একসময় ব্যস্ততম হিসেবে পরিচিত ছিল, সেখানেও এখন মানুষ কিংবা যানবাহনের চলাচল হাতে গোনা। রাস্তার ওপর তপ্ত রোদ, মাঝে মাঝে দূরে ছুটে চলা একটা-দুটো রিকশা এই হলো ঢাকা শহরের আজকের চিত্র। লেখা: জান্নাত শ্রাবণী; ছবি: মাহবুব আলম
-
ঈদের পর মানুষ ধীরে ধীরে ফিরলেও ঢাকায় এখনো পুরোপুরি জনজীবন স্বাভাবিক হয়নি। অফিস-আদালত কিছু কিছু খুললেও সড়কে সেই চিরাচরিত ভিড় নেই।
-
এখনো অনেক মানুষ গ্রামে রয়েছেন, কেউ কেউ ফিরেছেন, তবে বাইরে বের হওয়ার মতো সাহস পাননি এই তীব্র গরমে। ফলে শহরটি যেন এক ক্লান্ত, অবসন্ন, ঘর্মাক্ত শহরে পরিণত হয়েছে যেখানে মানুষ আছে, কিন্তু হঠাৎ থেমে গেছে কোলাহল।
-
প্রয়োজন ছাড়া কেউ বের হচ্ছেন না। তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি ছুঁই ছুঁই। এমন অবস্থায় রাস্তায় নামা যেন রোদের মুখে নিজেকে সমর্পণ করা। সাধারণ মানুষ তাই প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। অফিস বন্ধ, স্কুল-কলেজ বন্ধ; তাই যে যার মতো করে ঘরে থাকাটাকেই বেছে নিচ্ছেন।
-
স্থানীয় দোকানদার, রিকশাচালক কিংবা পথচারীরাও বলছেন একই কথা। এই গরমে দাঁড়িয়েও থাকা যায় না, চলা তো দূরের কথা।
-
মেরুল বাড্ডা এলাকার যে সড়কগুলোতে সকাল-সন্ধ্যা জ্যামের শব্দে ঘুম হারাম হয়, এখন সেসব জায়গায় পাখির ডাক শোনা যায়। সড়কের পাশে থাকা গাছের পাতাও যেন ক্লান্ত।
-
ফুটপাতগুলোও খালি, চায়ের দোকান বন্ধ, হকারদের আওয়াজ নেই। রিকশাওয়ালারা গাছের নিচে গামছা বিছিয়ে বসে আছেন। কারও হাতে পানির বোতল, কেউ কেউ পার করছেন অলস সময়।
-
লিংকরোড, যা একসময় বাড্ডা থেকে বেরুতে যাওয়া গাড়ির দীর্ঘ লাইন দিয়ে পরিচিত ছিল, এখন যেন নীরব কোনো গল্পের প্রেক্ষাপট। ধুলোমাখা রাস্তায় গড়িয়ে পড়ছে কেবল রোদ। কোনো ট্রাফিক জ্যাম নেই, শব্দ নেই, হর্ন নেই।
-
এখানেও চোখে পড়ে এক-আধটা বাইক, কিছু যাত্রীবাহী অটোরিকশা-তারা কেবল জরুরি প্রয়োজনে বেরিয়েছেন। পেছনে ফেলে যাচ্ছেন নিস্তব্ধ সড়কের দীর্ঘ ছায়া।
-
চলতি বছরের জুন মাসে ঢাকার গরম এক নতুন রেকর্ড গড়েছে। বৃষ্টির অনুপস্থিতি, তাপপ্রবাহের দাপট, এবং বাতাসহীন পরিবেশ মিলিয়ে মানুষ হাঁসফাঁস করছে। এই অবস্থায় যারা রাস্তায় বের হচ্ছেন, তারা ছাতা, মাস্ক, গামছা কিংবা সানগ্লাস দিয়ে নিজেকে যতটা সম্ভব ঢেকে নিচ্ছেন। তবু সূর্য যেন সবকিছু ভেদ করে শরীর জ্বালিয়ে দিচ্ছে।