পাহাড়-ঝরনার তীর্থস্থান মিরসরাই
একপাশে উঁচু-নিচু সবুজ পাহাড়। অন্যপাশে সাগর আর বহমান নদী। পাহাড়ে আছে অপরূপ অসংখ্য প্রাকৃতিক ঝরনা, কৃত্রিম লেক। পাহাড়ি সৌন্দর্য ঘেরা ২২ কিলোমিটার দৈর্ঘের এসব স্থান সবাইকে মুগ্ধ করে। আছে আঁকাবাঁকা বেশ কয়েকটি সড়ক। একটি উপজেলার মধ্যে সাগর, নদী, লেক, পাহাড়, ঝরনা, ম্যানগ্রোভ বন আর কোথাও নেই। চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলায় আছে অপরূপ প্রাকৃতিক সব সৌন্দর্য। ছবি: এম মাঈন উদ্দিন
-
একদিকে চোখে পড়ে নীল সমুদ্রের বিশালতা, অন্যদিকে সবুজে মোড়া পাহাড়ের অপরূপ দৃশ্য। এখান থেকে দেখা যায় জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, বঙ্গোপসাগরের সন্দ্বীপ চ্যানেল।
-
সবুজ সমতল ভূমি যেন এক চিলতে মিরসরাই হাতের মুঠোয় ধরা দেয়। এ স্থান থেকে সূর্যাস্ত খুব চমৎকারভাবে দেখা যায়।
-
তবে এখানে পর্যটকের তুলনায় একেবারে অপ্রতুল আবাসন ব্যবস্থা। নিরাপত্তা সংকটও আছে প্রকট। যা বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে পর্যটনের বিকাশে।
-
উপজেলাটিতে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা সত্ত্বেও পর্যটনবান্ধব অবকাঠামো গড়ে তুলতে মনোযোগ নেই সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোর।
-
এখানে ভ্রমণপিপাসু লোকজনের জন্য আছে বিস্ময়ের অফুরন্ত ভান্ডার। পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসা ঝরনা, নিবিড় বনে ঢাকা উঁচু পাহাড়ের সারি আর নিরিবিলি সাগরসৈকত।
-
সন্ধ্যার পর বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের শিল্প কারখানাগুলোর জ্বলা লাইটগুলো অন্যরকম সৌন্দর্যের আবহ সৃষ্টি করে।
-
মেঘলা দিনে পাহাড় আর মেঘের খেলা, শীতকালে কুয়াশার চাদরে মোড়া গ্রামবাংলার অপরূপ দৃশ্য ধরা দেয় এক ফ্রেমে। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের টানে ছুটে আসেন দূর-দূরান্তের অসংখ্য পর্যটক।
-
মিরসরাইয়ের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রগুলোর মধ্যে আছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম হ্রদ ১১ বর্গ কিলোমিটারের মহামায়া ইকোপার্ক, আটস্তর বিশিষ্ট খৈয়াছড়া ঝরনা, নাপিত্তাছড়া ঝরনা, সোনাইছড়ি হ্রদ ও ঝরনা, রূপসী ঝরনা, বাওয়াছড়া হ্রদ, মেলকুম ট্রেইল, সোনাপাহাড়, হিলসডেল মাল্টি ফার্ম ও মধুরিমা রিসোর্ট, মিরসরাই-নারায়ণহাট সড়ক, করেরহাট-রামগড় সড়ক, করেরহাট ফরেস্ট অফিস ডাক বাংলো, বোয়ালিয়া ঝরনা, হরিণাকুণ্ড ঝরনা, আরশিনগর ফিউচার পার্ক, মুহুরী প্রকল্প, ডোমখালি সৈকত, বসুন্ধরা সৈকত, মিরসরাই জাতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল ও সুপার ডাইক।
-
মিরসরাই উপজেলার বুক দিয়ে ছুটে যাওয়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ধরেই ১৫ বছর পূর্বে মহামায়া হ্রদ আর খৈয়াছড়া ঝরনা ঘিরেই মিরসরাই ভ্রমণ করতেন পর্যটকেরা। তবে সময় বাড়ার সাথে সাথে পর্যটনকেন্দ্রের তালিকায় নতুন নতুন নাম যুক্ত হয়েছে। এখন পুরো মিরসরাই উপজেলায় প্রায় ২০টি পর্যটনকেন্দ্র আছে। পাল্লা দিয়ে অনেকগুণ বেড়েছে পর্যটক। সে তুলনায় আবাসন ব্যবস্থা হয়নি বললেই চলে।
-
মিরসরাইয়ের বেসরকারি পর্যটনকেন্দ্র ও বন বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, উপজেলায় প্রতি বছর গড়ে পাঁচ লাখ পর্যটক ভ্রমণ করতে আসেন। আবাসন সংকটের কারণে ভ্রমণে আসা পর্যটকদের বেশিরভাগই সকালে এসে বিকেলে ফিরে যেতে হয়। আবাসন সংকটের কারণে এখানে রাতযাপন সম্ভব হয় না।
-
পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দাবি, পর্যটনবান্ধব অবকাঠামো আর নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে পর্যটকের সংখ্যা অন্তত দ্বিগুণ হবে। এখানে বাস্তবায়নাধীন জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে আগামী ১০ বছরে অন্তত ৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হওয়ার কথা আছে। যার সূত্র ধরেও পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে বাড়বে দেশি-বিদেশি পর্যটক।