ছবিতে ঘাস থেকে গুড় তৈরি
ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা পৌরসভার বাসিন্দা খাদিজা বেগম। অভাবের সংসারে বসে না থেকে নিজের মেধা ও পরিশ্রমকে কাজে লাগিয়ে সফলতা পেয়েছেন। ঘাস থেকে গুড় তৈরি করে সংসারের অভাব দূর করেছেন। পরিবারে সচ্ছলতার পাশাপাশি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। ছবি: এন কে বি নয়ন
-
পৌরসভার নাওরা মিঠাপুর গ্রামের মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের স্ত্রী খাদিজা বেগম। তিনি মাত্র ১০ শতক জমিতে বিশেষ ধরনের ঘাস চাষ করে তৈরি করছেন গুড়। এ উদ্ভাবনী উদ্যোগ তাকে শুধু আর্থিক সচ্ছলতাই এনে দেয়নি বরং স্থানীয়দের কাছেও নতুন উদ্যোক্তা ও অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন।
-
খাদিজা বেগম স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে ১০ শতক জমিতে নেপিয়ার ঘাস (লাল জাতের) নামক বিশেষ জাতের ঘাস চাষ শুরু করেন। এ ঘাস থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় গুড় তৈরির কৌশল শিখে নেন।
-
শুরুর দিকে ঘাসের রস থেকে পরীক্ষামূলকভাবে গুড় তৈরি করেন। এ গুড় তৈরি করে এলাকায় সাড়া ফেলেন। প্রতি কেজি গুড় ৪০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। গুড় ও ঘাস বিক্রি করে দৈনিক গড় আয় প্রায় ১৩০০ টাকা।
-
এক কেজি গুড় তৈরি করতে ৬০টি ঘাসের গাছ লাগে। যার ওজন প্রায় ১৫ কেজি। প্রতিটি গাছ লম্বায় প্রায় ৮ ফুট, আখের চেয়ে একটু চিকন। ৬০টির মতো ঘাসে রস হয় ৬-৭ কেজি। এতে ১ কেজি গুড় হয়।
-
এ ছাড়া তিনি ১ একর জমিতে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ফল ও সবজি চাষ করছেন। তার বাগানে আপেল, পেঁপে, আঙুর এবং সৌদি আরবের খেজুর গাছও আছে। এসব ফল ও সবজি বিক্রি করে তিনি প্রতিদিন প্রায় ১৫০০ টাকার মত আয় করেন। সব মিলিয়ে তারা এখন স্বাবলম্বী। তাদের অভাবের সংসারে ফিরে এসেছে সচ্ছলতা। সন্তানেরাও এখন ভালোভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারছেন।
-
আলফাডাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তুষার সাহা বলেন, ‘খাদিজা বেগমকে শুরু থেকেই বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ ও কারিগরি সহায়তা দেওয়া হয়েছে। তার সাফল্য এলাকার জন্য দৃষ্টান্ত। তার দেখাদেখি অনেক নারী কৃষিকাজে এগিয়ে আসবেন বলে আশা করি। তার পরিশ্রম ও উদ্ভাবনী ক্ষমতা প্রমাণ করে, সঠিক সুযোগ ও ইচ্ছাশক্তি থাকলে নারীরাও যে কোনো ক্ষেত্রে সফল হতে পারেন।’
-
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. নিয়াজ মুস্তাফি চৌধুরী বলেন, ‘পুষ্টিমান উদ্ভিদজাত প্রাণীদেহের জন্য উপকারী। তবে ঘাসে যদি বিষাক্ত কীটনাশক ও গ্রোথ হরমোন প্রয়োগ না করে সঠিক প্রক্রিয়ার মধ্যে রস থেকে গুড় তৈরি করেন, তাহলে এটি মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর নয়।’