ঢাকা-১৪

গরমে পানি সংকট বর্ষায় জলাবদ্ধতা, উদাসীন জনপ্রতিনিধি

সালাহ উদ্দিন জসিম
সালাহ উদ্দিন জসিম সালাহ উদ্দিন জসিম , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২:৩৩ পিএম, ০১ নভেম্বর ২০২৩
পানি সংকটের ছবি ব্লার করে তার ওপর বাঁ থেকে সিরিয়ালে আগা খান মিন্টু, মাইনুল হাসান খান নিখিল, সাবিনা আক্তার তুহিন ও মোবাশ্বের চৌধুরী

ঢাকা-১৪। ঢাকার অন্যতম প্রবেশদ্বার গাবতলী, মিরপুর এলাকা। এটি ঢাকা জেলার সাভার উপজেলার কাউন্দিয়া ইউনিয়ন ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৭, ৮, ৯, ১০, ১১ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত আসন। এ এলাকার প্রধান দুঃখ পানি। গরমে থাকে পানির সংকট আর বর্ষায় জলাবদ্ধতা। গত মাসে মিরপুর কমার্স কলেজের সামনে জলাবদ্ধতার মধ্যেই বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যান চারজন। পাশাপাশি রয়েছে খুচরা চাঁদাবাজি, মাদক ও কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত।

স্থানীয়রা বলছেন, তুরাগ নদীবেষ্টিত এ আসনের বেশিরভাগ এলাকায় বৃষ্টিতে পানি জমে। চলাচলে বিঘ্ন ঘটানোসহ জনজীবনে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। আবার গরমের মৌসুমে দেখা দেয় পানির সংকট। ওয়াসার লাইনের পানি ঠিকমতো আসে না। পাশাপাশি অগ্রসরমান এ এলাকার অলিগলিতে মেলে মাদক। আছে কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত। প্রতিনিয়ত মারামারির অভিযোগ আসে। খুচরা চাঁদাবাজিও হয় অনেক জায়গায়।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এসব অভিযোগ স্বীকার করেন। তারাও এগুলো সমাধানের চেষ্টা করছেন, তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আন্তরিক তৎপরতা আশা করেন।

এ বিষয়ে এলাকার ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মুজিব সরোয়ার মাসুম জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের এলাকায় তো জনদুর্ভোগের শেষ নেই। আমাদের তো নদীবাহিত এলাকা, স্থানীয়রা বর্জ্য ব্যবস্থাপনাটা কম বোঝে। তারপরও আমরা চেষ্টা করি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে। আমার এলাকার রাস্তাঘাট ছোট। কারণ একসময় এগুলো গ্রাম ছিল। সেগুলো প্রশস্ত করা সম্ভব হয়নি। এখন হুট করে মানুষের বাড়িঘর ভাঙা যায়?’

‘পাশাপাশি বর্ষায় অতিবর্ষণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এরকম কিছু সমস্যা আছে। কিছু প্রশাসনিক সমস্যাও আছে, যেগুলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ, সিটি করপোরেশনের কাজ নয়। এগুলো হলো- মাদকের প্রচুর বিস্তার, যত্রতত্র মাদক পাওয়া যায়। বখাটেপনা আছে, কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত আছে। হানাহানি, মারামারি আছে। খুচরা চাঁদাবাজিও আছে।’

আরও পড়ুন>> ঢাকা-১৬ আসন/‘জলাবদ্ধ’ মিরপুরে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান তিন হেভিওয়েট প্রার্থী

এমপি সাহেবের পক্ষ থেকে এলাকার জন্য কোনো বরাদ্দ পান কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এমপি সাহেবের সঙ্গে আমার খুবই ভালো সম্পর্ক। তবে তার কী বরাদ্দ থাকে, আমি জানি না। গত দুই বছরে তার সঙ্গে এ বিষয়ে আমার কোনো আলাপ হয়নি।’

১১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর দেওয়ান আবদুল মান্নানও জাগো নিউজকে বলেন, ‘এমপির পক্ষ থেকে কোনো বরাদ্দ পাই না বা আছে বলেও জানি না।’

এলাকার সমস্যা নিয়ে তিনি বলেন, ‘বৃষ্টি হলে কয়েকটি রাস্তায় জলাবদ্ধতা হয়। খাল উপচে পানি আসে। আবার গ্রীষ্মে পানির সংকট দেখা দেয়, মার্চ এপ্রিলের দিকে।

প্রচারণা কম, মনোনয়ন চান দুই হালি নেতা

বর্তমান এমপির পাশাপাশি এখানে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান খান নিখিল, যুব মহিলা লীগ ঢাকা মহানগর উত্তরের সাবেক সভাপতি ও সংরক্ষিত আসনের সাবেক এমপি সাবিনা আক্তার তুহিন। এলাকা ঘুরে তাদের প্রচারণা চোখে পড়েছে। এছাড়া এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোবাশ্বের চৌধুরী, দারুসসালাম থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফরিদুল হক হ্যাপী, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম, মিরপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম হানিফ, সাবেক কাউন্সিলর ও অভিনেতা মনোয়ার হোসেন ডিপজল।

যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান খান নিখিল জাগো নিউজকে বলেন, ‘জনগণ তো শান্তির পক্ষে, উন্নয়নের পক্ষে। সারাদেশের মতো ঢাকা-১৪ আসনও এর বাইরে নয়। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঢাকা-১৪ আসনেও স্কুল-কলেজ, রাস্তাঘাটসহ সামগ্রিক উন্নয়ন হয়েছে। যার কারণে এ এলাকার মানুষ ইতিবাচক। তারা নৌকার পক্ষে।’

আরও পড়ুন>> ঢাকা-১৭ আসন/সংগঠন গোছানো-ভোটারদের কেন্দ্রে আনাই আওয়ামী লীগের বড় চ্যালেঞ্জ

তিনি বলেন, ‘রাজনীতি যারা করে প্রত্যেকের একটা লক্ষ্য থাকে, মানুষের সেবা কেমন করে করা যায়। একজন সংসদ সদস্যের এলাকার মানুষের জন্য অনেক কিছু করার থাকে। সেবা করার সুযোগ পাওয়া যায়। সে কারণে আমিও মনোনয়নপ্রত্যাশী। যদি আল্লাহ পাকের হুকুম হয় এবং প্রধানমন্ত্রী যদি আমাকে মানুষের সেবা করার জন্য নৌকা দিয়ে পাঠান, আমি আশা করি মানুষ আমাকে গ্রহণ করবে। আমি মানুষের কাছাকাছি যেতে পেরেছি। যার কারণে মানুষ আমাকে ভালোবেসেছে, এখনো ভালোবাসে, ভবিষ্যতেও বাসবে।’

এ আসনের প্রার্থী ও যুব মহিলা লীগ নেত্রী সাবিনা আক্তার তুহিন বলেন, ‘আমি এ এলাকার মেয়ে। এখানেই জন্ম, এখানেই বড় হয়েছি, থাকিও এখানে। এখানকার মানুষের সঙ্গে আমার একটা সুসম্পর্ক তৈরি হয়েছে। সংরক্ষিত আসনে এমপি থাকাকালীন আমি এ এলাকার অনেক কাজ করেছি। করোনাসহ নানা সংকটে পাশে ছিলাম। ঈদ-পূজাপার্বনেও আমি তাদের সঙ্গেই থাকি। এখনো সরকারের উন্নয়ন প্রচার করছি। নেত্রীর অনুমতি নিয়েই আমি নৌকার জন্য কাজ করছি। আশা করি আমাকে এবার মনোনয়ন দেবেন। না দিলেও আমি কাজ করবো। নৌকা জেতাতে মাঠে থাকবো।’

ঢাকা-১৪ আসনে মোটা ভোটার ৪ লাখ ৬ হাজার ৫৩৪ জন। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগের জনসংখ্যার বিচারে এ আসনটি সৃষ্টি হয়। আসনটির শুরু থেকেই এখানে আওয়ামী লীগের এমপি আসলামুল হক। তার মৃত্যুর পর ২০২১ সালের উপ-নির্বাচনে এখানে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী জন আওয়ামী লীগের আগা খান মিন্টু। সার্বিক বিষয়ে জানতে আগা খান মিন্টুর মোবাইল ফোনে কয়েক বার ফোন ও খুদেবার্তা দিলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

এসইউজে/এএসএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।